অর্থনৈতিক বৈষম্য কমাতে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত ডেটা তৈরির তাগিদ দিয়েছেন পরিকল্পনা কমিশনের প্রথম ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যাপক নূরুল ইসলাম।
Published : 01 Dec 2021, 09:49 PM
বুধবার সরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান (বিআইডিএস) আয়োজিত বার্ষিক উন্নয়ন সম্মেলন ২০২১ এর আলোচনা সভায় মূল প্রবন্ধে তিনি এ বিষয়ে গুরুত্বারোপ করেন।
রাজধানীর লেকশোর হোটেলে তিন দিনের এ সম্মেলন স্বাধীনতার ৫০ বছর উদযাপন উপলক্ষে আয়োজন করা হয়েছে।
প্রথম দিন বিআইডিএস মহাপরিচালক ড. বিনায়ক সেনের সভাপতিত্বে সভায় পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান প্রধান অতিথি এবং প্রধানমন্ত্রীর অর্থনীতি বিষয়ক উপদেষ্টা ড. মশিউর রহমান বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন। আরও বক্তব্য দেন অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক রেহমান সোবহান।
মূল প্রবন্ধে ধারণ করা ভিডিও বক্তব্যে অধ্যাপক নূরুল ইসলাম বলেন, “বৈষম্য হচ্ছে মূলত একটি রাজনৈতিক সমস্যা। অর্থনৈতিক নীতি প্রণয়নের ক্ষেত্রে স্বাধীন নির্ভুল নিরপেক্ষ তথ্য থাকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সঠিক তথ্য ছাড়া অর্থনৈতিক নীতি প্রণয়ন অসম্ভব।
“আজকে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপে তথ্য তৈরি যৌক্তিক মনে করলেও আগামীকাল তাদেরকেই এ ব্যর্থতার জন্য দায়ি করা হবে।”
পরিকল্পনা কমিশনের প্রথম ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যাপক নূরুল ইসলাম বলেন, বৈষম্য বৃদ্ধি পাওয়ার অন্যতম প্রধান কারণ হচ্ছে বিদেশে অর্থ পাচার।
“এসব টাকার মালিকরা দেশে তৈরি ওই টাকার কর দিচ্ছে না। আবার দেশে বিনিয়োগ না করে বিদেশে পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে।“
এ অর্থ দেশে কিভাবে রাখা যায় তা চিন্তাভাবনার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, “ঘরে বসে বিদেশে কোনো কর ছাড়াই বিনিয়োগ করা গেলে, দেশে কেন টাকা থাকবে।”
দেশে টাকা রাখতে হলে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতাও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বলে মনে করেন তিনি।
বঙ্গবন্ধু সরকারের সঙ্গে পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করা এ অর্থনীতিবিদ বলেন, দারিদ্র্য কমছে এটা ঠিক। কিন্তু এখনও ধনী-দরিদ্রের মধ্যে যে ব্যবধান রয়েছে তা অনেক বেশি এবং এটা দিন দিন বাড়ছে। এছাড়াও পুরুষ-নারীর মধ্যে অনেক বৈষম্য রয়েছে।
বাংলাদেশের অর্থনীতির বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করতে গিয়ে তিনি বলেন, বাংলাদেশে স্বাভাবিকভাবেই বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয় কৃষি খাতকে। কারণ সরকার চায় খাদ্য স্বয়ংসম্পূর্ণতা। এরপরেই পরবর্তী উন্নয়ন।
“সরকার কৃষি খাতে ভর্তুকি দেওয়ার পাশাপাশি গ্রাম পর্যায়ে সড়ক অবকাঠামো উন্নয়নের মাধ্যমে কৃষককে পণ্য সহজেই বাজারজাতকরণের সুযোগ সৃষ্টি করেছে। এ কারণেই কৃষক তাদের উৎপাদিত পণ্য বাজারজাত করতে পারছে।“
এর বাইরে রপ্তানি ও রেমিট্যান্স বাংলাদেশের অর্থনীতিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে উল্লেখ করেন তিনি।
রপ্তানির নেতৃত্ব থাকা পোশাক খাতের মূল শ্রমিক নারীদের দক্ষতা বাড়ানো সম্ভব হলে রপ্তানি মূল্য আর বাড়ত জানিয়ে তিনি বলেন, মূল অর্থনীতিতে নারীর এ অবদানকে আরও টেকসই করতে উন্নত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করলে আরও সুফল পাওয়া যাবে।
এম এ মান্নান বলেন, “প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে কোনও দিন কোনও কাজে বাধা পাইনি। অর্থাৎ আমি সম্পূর্ণভাবে স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারি।
“সুতরাং আমার মন্ত্রণালয়ের অধীনে থাকা বিআইডিএস বা পরিসংখ্যান ব্যুরোর কোনটাকেই আমি কাজে বাধা দেয়নি। তারা সম্পূর্ণ স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারে।”
সরকারের প্রধান কাজ দারিদ্র্য বিমোচন উল্লেখ করে তিনি বলেন, “আমরা তৃণমুল পর্যায় বা গ্রাম থেকেই দারিদ্র্য বিমোচন করতে চাই। তাই গ্রামীণ অবকাঠামো সড়ক, সুপেয় পানি, এবং স্বাস্থ্যকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছি।“
ড. মশিউর বলেন, বর্তমানে মধ্যবিত্তের ওপর ভর করে অর্থনীতি এগিয়ে যাওয়ার একটা সুযোগ তৈরি হয়েছে। সামষ্টিক অর্থনীতি এভাবেই এগিয়ে যায়। দেশের স্বাধীনতার তৃতীয় কিংবা চতুর্থ প্রজন্মের হাত ধরেই বাংলাদেশ উন্নত রাষ্ট্রে পরিণত হবে।
তিনি বলেন, প্রথম ও দ্বিতীয় প্রজন্ম কৃষি বা শ্রমিকের কাজ করেছে। পরের প্রজন্ম শিক্ষার সুযোগ পেয়েছে এবং পরের প্রজন্ম মধ্য ‘মিডল ক্লাবে’ উন্নীত হয়েছে। এভাবেই দেশ এগিয়ে যায়।