‘খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হচ্ছি, এখন দরকার নিরাপদ খাদ্য’

খাদ্যপণ্য উৎপাদনে বাংলাদেশের আত্মনির্ভরশীল হয়ে ওঠার পথে এখন নিরাপদ খাদ্য উৎপাদনে জোর দেওয়ার পরামর্শ এসেছে একটি কর্মশালা থেকে।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 26 Oct 2021, 03:52 PM
Updated : 26 Oct 2021, 05:22 PM

মঙ্গলবার ঢাকার সোনারগাঁও হোটেলে নিরাপদ পরিবেশে পোলট্রি উৎপাদন বিষয়ক এ কর্মশালায় সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা বক্তব্য দেন।

এতে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আজিজুর রহমান বলেন, “মাছ, মাংস ও ডিম উৎপাদনে আমরা স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়ে গেছি। দুধে প্রায় কাছাকাছি চলে এসেছি।

”আমরা খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়ে গেছি, এখন আমাদের দরকার নিরাপদ খাদ্য।”

পোলট্রি খাতের খাদ্য নিরাপত্তায় সুশাসন নিশ্চিত করার উদ্দেশ্যে বাস্তবায়িত একটি প্রকল্পের অভিজ্ঞতা বিনিময় নিয়ে এ কর্মশালার আয়োজন করা হয়।

বীজ বিস্তার ফাউন্ডেশন (বিবিএফ), বাংলাদেশ সেন্টার ফর অ্যাডভান্সড স্টাডিজ (বিসিএএস) ও কনজ্যুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) এটি আয়োজন করে।

ব্রিটিশ কাউন্সিলের একটি কর্মসূচি ও ইউকেএইডের অর্থায়নে ২০১৭ সাল থেকে দেশের ৫ জেলার ৬ উপজেলায় প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করে ক্যাব ও বিবিএফ।

অনুষ্ঠানে জানানো হয়, প্রকল্পের আওতায় ওইসব উপজেলার কয়েকশ’ খামারকে ‘মডেল খামার’ হিসাবে রূপান্তরের চেষ্টা চালানো হয়।

খামারিদের মধ্যে সচেতনতা বাড়ায় খামারের পরিবেশ উন্নত করার পাশাপাশি অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহার উল্লেখযোগ্য মাত্রায় কমিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে বলে দাবি করেন আয়োজকরা।

মুরগি উৎপাদনে স্বাস্থ্যকর উপাদান ঠিক রাখার পরামর্শ দিয়ে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বলেন, “মুরগিকে আমরা যে খাবারটা দিই, তা যেন নিরাপদ খাদ্য হয়, সেটা নিশ্চিতের দায়িত্ব আমাদের।”

তিনি বলেন, ক্ষতিকর প্রভাবের কারণে সারা বিশ্ব অ্যান্টিবায়োটিকের বিরুদ্ধে সোচ্চার হচ্ছে। খাদ্য বা মাংস উৎপাদনে সর্বনিম্ন মাত্রায় অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করা প্রয়োজন।

আফতাব বহুমুখী ফার্মের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবু লুৎফে ফজলে রহিম খান বলেন, “ফার্ম থেকে প্লেট, প্রডাকশন সেন্টার থেকে ডিস্ট্রিবিউশন সেন্টার বা প্রসেসিং সেন্টার- পোলট্রির ক্ষেত্রে যেখানে জবাই করা হবে, এরপর যেখানে আসবে সবই গুরুত্বপূর্ণ।

”রান্নার পরে স্টোরেজের প্রতিটা জায়গাতেও খাদ্য নিরাপত্তা বিবেচনার দরকার। এটা নিয়ে আমার মনে হয় গবেষণা করা দরকার, কোথা থেকে বেশি দূষণ হয়।”

নিরাপদ খাদ্যের মানদণ্ড বজায় রাখার পেছনে খরচের কথা উল্লেখ করে দেশে পোলট্রি খাতের শীর্ষস্থানীয় এ ব্যবসায়ী বলেন, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, জাপান- একেক দেশে একেক ধরনের নিরাপত্তা মানদণ্ড।

”তাহলে আমরা কোন সেফটি স্টান্ডার্ড অনুসরণ করব। আমাদের আর্থ-সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় বিষয় চিন্তা করে খাদ্য নিরাপদ করার মানদণ্ড নির্ধারণ করতে হবে। আমরা যে কোনো কাজ করলে হবে না।”

তিনি বলেন, “বেশি ফুড সেফটি স্টান্ডার্ড তৈরি করতে গেলে মানুষ খেতে পারবে না, যে দাম পড়বে। আমরা ইউরোপের স্টান্ডার্ডে খাদ্য উৎপাদন করতে পারব না, রেগুলেট করতে পারব না।

”আমাদের দেশের জন্য যতটুকু করতে হবে, স্ট্যান্ডার্ডটা এমন জায়গায় নিতে হবে, প্রতি সময়ে স্ট্যান্ডার্ড বাড়াতে হবে। কিছুদিন পরপর এটা রিভিউ করতে হবে।”

তবে তার বক্তব্যের বিষয়ে ভিন্নমত দেন প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের লাইভস্টক ডেইরি ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্টের (এলডিডিপি) প্রকল্প পরিচালক আবদুর রহিম।

তিনি বলেন, “খাবারের যোগান দিতে পারব কি না, সেই প্রশ্ন তিনি তুলেছেন। তবে আমরা ইউরোপীয়, অস্ট্রেলিয়ান, নিউজিল্যান্ড বা নেদারল্যান্ডসের স্টান্ডার্ড মেনে পরিচালিত যে দুধ ও মাংস উৎপাদনকারী খামারগুলোতে দেখছি, সেগুলো মুনাফার দিক থেকেও এগিয়ে যাচ্ছে, তাদের এই ফার্মের উন্নয়নটা আমাদের কাছে দ্রুত দৃশ্যমান হচ্ছে।

”কোরবানিসহ বার্ষিক গরুর চাহিদা এ সেক্টর থেকে মেটাচ্ছি। কারণ উৎপানক্ষমতা বাড়ানো ও ব্রিড তৈরির কাজ উন্নত হওয়ায় আমাদের উন্নতমানের খামারগুলো এগিয়ে যাচ্ছে।”

আবদুর রহিম বলেন, “পোলট্রি সেক্টরেও ইউরোপীয় স্টান্ডার্ডের মডেল খামার কিন্তু বাংলাদেশে আছে। সেই খামারগুলো যদি চলতে পারে, তাহলে আন্তর্জাতিক স্টান্ডার্ড সেট করা আমাদের জন্য সমীচীন হবে বলে আমি মনে করি।”

অনুষ্ঠানে বিসিএএসের নির্বাহী চেয়ারম্যান ড. আতিক রহমান বলেন, দেশের জিডিপিতে পোলট্রি খাতের অবদান এখন ১ দশমিক ৬ শতাংশ। নিরাপদ পরিবেশ ও উন্নত ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে পারলে এটা বাড়ানো সম্ভব।

কর্মশালায় অন্যদের মধ্যে ক্যাবের সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবির ভূঁইয়া, ব্রিটিশ কাউন্সিলের প্রমোটিং নলেজ ফর অ্যাকাউন্টেবল সিস্টেমস (প্রকাশ) প্রকল্পের প্রধান জেরি ফক্স, প্রকল্পের ম্যানেজার এএইচএম তাসলিমা আখতার, বিবিএফের কর্মকর্তা মল্লিকা সাহা বক্তব্য দেন।