ভারতীয় ঋণের অর্থছাড় সহজ করার আহ্বান রেলমন্ত্রীর

ভারতের ঋণচুক্তির (এলওসি) অধীনে বাস্তবায়নাধীন প্রকল্পের অর্থ ছাড় করতে সে দেশের সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বাংলাদেশের রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 27 Sept 2021, 02:54 PM
Updated : 27 Sept 2021, 02:54 PM

সোমবার ভারতীয় হাই কমিশনারের উপস্থিতিতে এক অনুষ্ঠানে এই আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, “আমাদের যে প্রজেক্টগুলো এলওসির অর্থায়নে হচ্ছে, সেগুলো যাতে আরও একটু, আমাদের ওয়ানস্টপ সার্ভিসের মাধ্যমে আরেকটু শর্ট করা যায়।

“আমাদের পেমেন্টের ব্যাপারে ডিলে হয়, এটা উভয়পক্ষেরই কিছুটা আপত্তি থাকে, এগুলোকে আরেকটু সহজিকরণ করা যায় কি না, সে ব্যাপারে আমি ভারতের প্রতি আহ্বান জানাব। এগুলো বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে এবং অর্থ প্রদানের ক্ষেত্রে আরেকটু সহজিকরণ করা যায় কি না।”

২০১০ সাল থেকে এই পর্যন্ত নমনীয় সুদের লাইন অব ক্রেডিটের (এলওসি) আওতায় ভারতের সঙ্গে মোট তিন দফায় ৭৮৬ কোটি টাকার ঋণচুক্তি সই হয়েছে।

প্রথম দফায় ২০১০ সালে ১০০ কোটি ডলারের ঋণচুক্তি সই হয়। ২০১৫ সালের জুনে দ্বিতীয়বার চুক্তি সই হয় আরও ২০০ কোটি ডলারের।

সবশেষ ২০১৭ সালের এপ্রিলে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরের সময় সাড়ে ৪০০ কোটি ডলারের ঋণচুক্তি সই হয়।

প্রথম ঋণচুক্তির সময় শর্ত ছিল, এই ঋণের আওতায় যত প্রকল্প নেওয়া হবে, তা বাস্তবায়নে ৮৫ শতাংশ পণ্য ও সেবা ভারত থেকে আমদানি করতে হবে।

এই শর্তে বাংলাদেশের আপত্তি জানানোর মধ্যে ২০১৪ সালে এই অঙ্ক ৮৫ শতাংশ থেকে নামিয়ে ৭৫ শতাংশ করা হয়েছিল।

ওই সময় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল, নির্মাণকাজের ধরন দেখে কত শতাংশ পণ্য ও সেবা ভারত থেকে আনা হবে, তা প্রকল্প দেখে ঠিক করা হবে। কিন্তু সেই সিদ্ধান্ত এখনও কার্যকর হয়নি।

এলওসির অর্থছাড় ও প্রকল্প বাস্তবায়নের বিষয়ে দু’দেশের মধ্যে একটি উচ্চস্তরের প্রকল্প পর্যবেক্ষণ কমিটিও করেছে উভয় দেশ, গত জানুয়ারিতে ওই কমিটির প্রথম সভা অনুষ্ঠিত হয়।

তখন ঢাকায় ভারতীয় হাই কমিশনের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছিল, বাংলাদেশ সরকারের কাছে ঋণচুক্তির অধীনে ভারত সরকারের মোট প্রতিশ্রুত ৭৮৬ কোটি ২০ লাখ মার্কিন ডলারের মধ্যে প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম ক্রয়ের জন্য অনুমোদিত ৫০ কোটি মার্কিন ডলারও রয়েছে।

ভারত সরকারের তিনটি ঋণচুক্তির আওতাধীন ৪৬টি প্রকল্পের মধ্যে ১৪টি প্রকল্প সম্পন্ন হয়েছে (৪১ কোটি ২৮ লাখ ৫০ হাজার মার্কিন ডলার), ৮টি প্রকল্প চলমান (১০১ কোটি ৩৭ লাখ ৭৪ হাজার মার্কিন ডলার), ১৫টি প্রকল্প দরপত্র পর্যায়ে (৩১৯ কোটি ৫৪ লাখ ৪০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার) এবং ১৪টি প্রকল্প ডিপিপি (৩০৮ কোটি ১৩ লাখ ৪০ হাজার মার্কিন ডলার) প্রস্তুতি পর্যায়ে রয়েছে।

প্রকল্পগুলোর প্রায় ৮৩ শতাংশ তখন পর্যন্ত পরিকল্পনা/ডিপিপি এবং দরপত্র পর্যায়ে রয়েছে বলে জানানো হয় সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে।

বাংলাদেশ সরকারের প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থাগুলোর সঙ্গে এ পর্যন্ত প্রায় ১২৭ কোটি ৬৩ লাখ ৯০ হাজার মার্কিন ডলার মূল্যের চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছে, যা মোট ঋণচুক্তির অর্থের ১৭ শতাংশ।

চুক্তির আওতায় ভারতীয় এক্সিম ব্যাংক এ পর্যন্ত ৭১ কোটি ৯৭ লাখ ৮০ হাজার মার্কিন ডলার (চুক্তির মূল্যের ৫৬ শতাংশ) বিতরণ করেছে।

প্রথম ঋণচুক্তির ২০ কোটি মার্কিন ডলার অনুদানে রূপান্তরিত করা হয়েছে।

ঋণচুক্তির অধীনে প্রকল্পগুলো দ্রুত বাস্তবায়নের জন্য স্থানীয় উপকরণ বৃদ্ধি, ক্রয় প্রক্রিয়া সরলীকরণ এবং ঋণচুক্তি সংশোধনীর অনুরোধ জানিয়ে আসছে বাংলাদেশ।

গত মার্চে হাসিনা-মোদী বৈঠকের পর পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন বলেছিলেন, এলওসি আওতাধীন প্রকল্পগুলোকে আরও বেগবান করার ব্যাপারেও দুই প্রধানমন্ত্রী আলোচনা করেছেন। এ বিষয়ে গঠিত উচ্চ পর্যায়ের কমিটিকে তারা প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিয়েছেন।

কিন্তু শর্ত শিথিল ও দ্রুত কাজ শেষ করা নিয়ে উভয়পক্ষের মধ্যে আলোচনা চললেও অগ্রগতি সেভাবে না হওয়ার মধ্যে রেলমন্ত্রী সুজন সোমবার এই আহ্বান জানালেন।

বগুড়া-সিরাজগঞ্জের মধ্যে এলওসির আওতায় নতুন ডুয়েল গেজ রেললাইন নির্মাণ প্রকল্পের পরামর্শক ভারতীয় যৌথ উদ্যোগ রাটস লিমিটেড ও আরভি অ্যাসোসিয়েটসের সঙ্গে রেলওয়ের চুক্তি সই অনুষ্ঠানে বক্তব্য দিচ্ছিলেন তিনি।

ভারত সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে নুরুল ইসলাম সুজন বলেন, “তারা ভেবে দেখবেন, যাতে মূল যে প্রজেক্ট বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে সময়মত যাতে সম্পন্ন হয় এবং মানসম্পন্ন হয়- এ দুটো ব্যাপারে তারা দৃষ্টি দেবেন।”

তিনি বলেন, “বর্তমান যে প্রজেক্টটি আমরা আশা করি, এটা বাংলাদেশের রেলওয়ের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রজেক্ট, এই প্রজেক্টটি যাতে সময়মত এবং একইভাবে মানসম্পন্নভাবে বাস্তবায়ন হতে পারে, যাদের সাথে চুক্তি করলাম, তারা যাতে সচেতন থাকে।”

ভারতীয় হাই কমিশন জানিয়েছে, ঋণচুক্তির আওতায় রেলওয়ে খাতের মোট ১৭টি প্রকল্পের মধ্যে ৯টি ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। তিনটি বাস্তবায়ন পর্যায়ে থাকলেও আর পাঁচটি রয়েছে প্রাথমিক অন্যান্য পর্যায়ে।