বগুড়া-সিরাজগঞ্জ রেললাইন নির্মাণে পরামর্শক দুই ভারতীয় কোম্পানি

বগুড়া থেকে সিরাজগঞ্জ সরাসরি রেললাইন নির্মাণ প্রকল্পে পরামর্শক হিসাবে দুটি ভারতীয় কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি করেছে বাংলাদেশ রেলওয়ে।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 27 Sept 2021, 02:16 PM
Updated : 27 Sept 2021, 02:16 PM

প্রায় সাড়ে ৮৬ কিলোমিটার দীর্ঘ এই ডুয়েল গেজ লাইন নির্মাণে সোমবার ঢাকার রেল ভবনে ভারতের রাইটস লিমিটেড ও আরভি অ্যাসোসিয়েটসের সঙ্গে বাংলাদেশ রেলওয়ের এই চুক্তি হয়।

৫ হাজার ৫৭৯ কোটি ৭০ লাখ টাকার এই প্রকল্পে ভারত সরকারের কাছ থেকে লাইন অব ক্রেডিটের (এলওসি) আওতায় পাওয়া ঋণের অর্থের পাশাপাশি বাংলাদেশ সরকারও অর্থায়ন করবে।

প্রকল্পে বাংলাদেশ সরকার দেবে দুই হাজার ৪৩৩ কোটি ১০ লাখ টাকা, যা মোট অংকের সাড়ে ৪৩ শতাংশের বেশি। বাকি ৫৬ শতাংশ অর্থাৎ তিন হাজার ১৪৬ কোটি ৬০ লাখ টাকা আসবে এলওসির অধীনে এক্সিম ব্যাংক অব ইন্ডিয়া থেকে।

পরামর্শকদের পেছনে খরচ হবে ৯৭ কোটি ৫৬ লাখ ৩৭ হাজার ৩৩৪ টাকা, যার ৭৪ শতাংশ অর্থাৎ ৭২ কোটি ২৬ লাখ ৯৪ হাজার ৩২১ টাকা এলওসির অধীনে আসবে। বাকি ২৫ কোটি ২৯ লাখ ৪৩ হাজার ১২ টাকার যোগান দেবে সরকার।

প্রকল্পের সম্ভাব্যতা সমীক্ষা, বিস্তারিত ইঞ্জিনিয়ারিং নকশা এবং সেতু, বাঁধ, রেলপথ, স্টেশন, সিগন্যালিং এবং সমস্ত স্থাপনার নকশা অঙ্কন, যাত্রাপথ নির্ধারণ, গাণিতিক মডেলিং, টেন্ডারিংসহ নির্মাণকাজ তত্ত্বাবধান করবে ভারতীয় দুই পরামর্শক কোম্পানি।

বর্তমানে বগুড়া ও রংপুরের মধ্যে সরাসরি ডুয়েল গেজ লাইন থাকলেও বগুড়া থেকে সিরাজগঞ্জ যাতায়াতের জন্য ১৮৭ কিলোমিটার পথ ঘুরে যেতে হয়।

উত্তরের এই সংযোগ জেলা থেকে সিরাজগঞ্জের ক্যাপ্টেন মনসুর আলী স্টেশনের পথে পার হতে হয় কাহালু, সান্তাহার, আব্দুলপুর, ঈশ্বরদী পাস ও জামতলী রেলস্টেশন।

এই প্রকল্পের আওতায় বগুড়া থেকে সিরাজগঞ্জে সরাসরি প্রায় সাড়ে ৮৬ কিলোমিটারের ডুয়েল গেজ লাইনের পাশাপাশি ১৬ দশমিক ৩০ কিলোমিটারের লুপ লাইনও নির্মাণ করা হবে।

নতুন এই রেলপথ প্রায় ১১২ কিলোমিটার দূরত্ব কমিয়ে আনবে, যার ফলে ঢাকা থেকে উত্তরের জেলাগুলোতে ভ্রমণের ক্ষেত্রে প্রায় তিন ঘণ্টা সময় সাশ্রয় হবে।

চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে জানানো হয় এর মাধ্যমে নির্বিঘ্নে ব্রডগেজ এবং মিটারগেজ ট্রেন চলাচল সহজতর হবে এবং দ্রুত ও উচ্চমানের যাত্রী পরিসেবা দেওয়া সম্ভব হবে।

প্রকল্পটি শেষ হওয়ার পর রাজধানী ঢাকা হয়ে বাংলাদেশের পশ্চিম ও উত্তরাঞ্চল এবং পূর্ব ও দক্ষিণাঞ্চলের মধ্যে একটি সংক্ষিপ্ত ডুয়াল গেজ সংযোগ স্থাপন করা হবে বলেও জানানো হয়।

রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন অনুষ্ঠানে বলেন, “ভারতের সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্যের মত যোগাযোগের ক্ষেত্রে আমরা অংশীদারিত্ব বাড়াতে চাই। সেটা সড়ক ও আকাশপথের পাশাপাশি রেল যোগাযোগেও।

“আমরা আশা করি, ভারত আমাদের রেলওয়ের সক্ষমতা বৃদ্ধিতে সব ধরনের সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেবে। যাতে ভারতীয় রেলওয়ের মত আমাদেরও বিশ্বব্যাপী সুনাম অর্জন হয় এবং আমাদের পরিবহনের সক্ষমতা অনেক দূর বাড়ে।”

ভারতীয় হাই কমিশনার বিক্রম কুমার দোরাইস্বামী বলেন, “রেলওয়ে হবে বাংলাদেশের উন্নয়নের অন্যতম চালিকাশক্তি। রেলওয়ে আমাদের কমন ডিএনএ। রেলওয়ে নিয়ে কাজ করার ক্ষেত্রে ভারত ও বাংলাদেশের দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে।

“ঔপনিবেশিক আমল থেকে আমরা উভয়দেশ রেলপথ পেয়েছি। আমরা আন্তরিকভাবে বিশ্বাস করি, রেলওয়েকে যথাযথ পথে এগিয়ে নিতে সফল হবে বাংলাদেশ।”

তিনি বলেন, “রেলওয়ের সক্ষমতা বাড়ানো ও প্রকল্পের বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের ভাই-বন্ধুদের পাশে দাঁড়াতে প্রস্তুত ভারত। রেলওয়ের কার্যকর অগ্রগতির মাধ্যমে বাংলাদেশের অর্থনীতিও বেশ লাভবান হবে।”

চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন রেলওয়ে সচিব সেলিম রেজা। অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক ধীরেন্দ্রনাথ মজুমদার, রাটস ইন্ডিয়া লিমিটেডের পরিচালক অনীল বিজ বক্তব্য দেন।