কাজ ফিরে পেলেও বেতন কমেছে ৯% শ্রমিকের: সিপিডি

করোনাভাইরাসের প্রথম ঢেউয়ের ধাক্কায় কাজ হারানো শ্রমিকদের মধ্যে যারা আবার যোগদান করেছেন তাদের ৯ শতাংশের বেতন কমেছে বলে সিপিডির এক জরিপে উঠে এসেছে।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 8 May 2021, 12:01 PM
Updated : 8 May 2021, 12:01 PM

এই জরিপে দেখা গেছে, ৭৭ দশমিক ৭ শতাংশ শ্রমিক আগের বেতনেই যোগদান করেছেন।

শনিবার ‘পোশাক খাতে করপোরেট জবাবদিহিতা- প্রেক্ষিত কোভিড-১৯ মহামারী’ শীর্ষক ভার্চুয়াল আলোচনা সভায় মূল প্রবন্ধে সিপিডির গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম জরিপের এই তথ্য তুলে ধরেন।

তিনি জানান, মহামারীকালে বন্ধ হয়ে যাওয়া ১২০টি কারখানা ও সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান, কোভিড-১৯ এর কারণে ছাঁটাইয়ের পর আবার কাজে যোগ দেওয়া ৩০০ জন শ্রমিক, এখনো বেকার ১০০ জনসহ মোট ৪০০ জন শ্রমিকের কাছ থেকে তথ্য নিয়ে এই জরিপ করা হয়েছে।

মার্চ মাসে এই জরিপ পরিচালনা করা হয় এবং এতে গত ডিসেম্বর ও জানুয়ারির তথ্য ব্যবহার করা হয়েছে বলে তিনি জানান।

গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, জরিপে ৩০ শতাংশ শ্রমিক বলেছেন- নতুন করে কাজে যোগ দিয়ে কাজের পরিধি বেড়েছে। ২২ শতাংশ শ্রমিক জানিয়েছেন তারা কারখানায় হয়রানির শিকার হচ্ছেন।

এসব তথ্য বিশ্লেষণ করে এই গবেষক বলেন, কারখানা নিয়ে অনিশ্চয়তায় ভোগা শ্রমিকের সংখ্যা ৬ শতাংশে নেমে এসেছে। এই সংখ্যা গত জুলাইয়ের জরিপে অনেক বেশি ছিল।

বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সিপিডি ও সজাগ কোয়ালিশন আয়োজিত এই আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি।

তিনি বলেছেন, “কোভিড-১৯ এর কারণে গত এক বছরে পোশাক খাতের শ্রমিকদের সুযোগ সুবিধা কমেছে। এটাকে বাড়িয়ে আগের অবস্থায় নিয়ে আসতে হলে মালিক, শ্রমিক, ক্রেতা ও সরকার সকল পক্ষকেই দায়িত্ব নিতে হবে।“

এই খাতের শ্রমিকদের সুযোগ সুবিধা বাড়ানোর জন্য আন্তর্জাতিক ভ্যালু চেইনের উন্নতিও করতে হবে বলে তিনি উল্লেখ করেন।

পোশাকশিল্পে শ্রমিকের অধিকার আদায়, সুযোগ সুবিধা পাওয়া বা বঞ্চিত হওয়ার পরিমাপের ক্ষেত্রে কারখানার সংখ্যায় না গিয়ে শ্রমিকের সংখ্যা উল্লেখ করার আহবান জানান টিপু মুনশি।

মন্ত্রী সিপিডিসহ দেশের গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলোর উদ্দেশ্যে বলেন, “ধরা যাক আপনারা কোনো গবেষণায় দেখালেন যে মাত্র একটি কারখানা মানলেও ৫০টি কারখানা সরকারের নির্দেশনা মানছে না বা শ্রমিকরা সুযোগ সুবিধা পাচ্ছে না। এতে সমাজের কাছে যথাযথ খবর যায় না।

“কারণ ওই একটি কারখানায় ৫০ হাজার শ্রমিক কাজ করতে পারে। তেমনিভাবে ওই ৫০টি কারখানায় ৫০ হাজার শ্রমিক কাজ করতে পারে।

“তাই আমরা মনে করি কারখানার সংখ্যায় তুলনা না করে শ্রমিকদের সংখ্যায় তুলনা করলে যথাযথ তথ্য উঠে আসবে, যোগ করেন তিনি।

বাণিজ্যমন্ত্রী আরো বলেন, “তাজরিন ফ্যাশন ও রানা প্লাজার বিপদকে আমরা সম্পদে রূপান্তর করেছিলাম। এই সময়ে আমরা বিশ্বের সবচেয়ে পরিবেশবান্ধব কারখানা নির্মাণ করেছি। তাই এখন ক্রেতারাও সহজে আমাদের ছেড়ে চলে যেতে পারবে না।”

এমন পরিস্থিতিতে এই খাতের শ্রমিকদের জীবনমান উন্নয়নের জন্য ক্রেতাদেরও আলোচনায় নিয়ে আসার ওপর গুরুত্বারোপ করেন তিনি।

সিপিডির সম্মাননীয় ফেলো অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমানের সঞ্চালনায় বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বিজিএমইএ এর নবনির্বাচিত সভাপতি মো. ফারুক হাসান বলেন, “কোভিড-১৯ কেন্দ্র করে সুতাসহ অনেক পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় উৎপাদন ব্যয় বেড়েছে, সার্বিকভাবে উৎপাদন কমে গেছে।“

এই পরিস্থিতিতেও বিজিএমইএ এই খাতের শ্রমিকদের করপোরেট দায়বদ্ধতা পূরণ করছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এর বাইরেও আরো বৃহত্তর পরিসরে শ্রমিক সমাজের কল্যাণ কিভাবে করা যায় তা নিয়েও কাজ করা হচ্ছে।

এসময় তিনি আগামী বছরে রপ্তানির প্রধান খাতটি ঘুরে দাঁড়ানোর আশা প্রকাশ করে বলেন, “এরইমধ্যে আমরা কিছু লক্ষণ দেখছি। আগামী বছর এই খাত ভালো মত ঘুরে দাঁড়াতে পারে।”

আলোচনা সভায় শ্রমিক নেতাদের অভিযোগের প্রেক্ষিতে তৈরি পোশাক রপ্তানিকারকদের সংগঠনের এই নেতা বলেন, “পোশাক খাতে কর্মীর তালিকা প্রায় ৪৭ থেকে ৫৭ লাখ লোকের। এতদীর্ঘ তালিকা থেকে কাউকে কালো তালিকাভূক্ত করা অসম্ভব। তাই কোনো শ্রমিককে কালো তালিকাভুক্ত করার অভিযোগ ঠিক নয়।”

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বিকেএমইএ সহ-সভাপতি মো. হাতেম বলেন, “মুনাফার অর্থ নিয়ে কারখানার সম্প্রসারণ করে থাকি। বরং যা মুনাফা করি তার চেয়েও বেশি পুন:বিনিয়োগ করি। তাই আমাদের হাতে ৪-৫ মাস বেতন দেওয়ার মতো অর্থ থাকে না।“

কর্মীদের বেতন কমানোর অভিযোগের প্রেক্ষিতে তার দাবি কোথাও বেতন কমানো হয়নি।

আলোচনা সভায় শ্রমিক নেতা মন্টু চন্দ্র ঘোষ, নমিতা নাথ, আহসান হাবিব বুলবুল, বাবুল আক্তারসহ অনেক শ্রমিক প্রতিনিধি বক্তব্য দেন।

তারা এই খাতের শ্রমিকদের সুযোগ সুবিধার ক্ষেত্রে করপোরেট জবাবদিহিতা মানা হচ্ছে না বলে অভিযোগ করেন।

শ্রমিকদের বেতন কমিয়ে দেওয়া, শ্রম ঘন্টা বাড়ানো এবং আন্দোলনে জড়িত শ্রমিকদের চিহ্নিত করে কালো তালিকাভুক্ত করে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে বলে তারা দাবি করেন।