ঝুঁকিতে থাকা শ্রমিকদের বাঁচাতে সামাজিক সংলাপের তাগিদ

চলমান মহামারীতে ঝুঁকিপূর্ণ কাজে জড়িত শ্রমিকদের বাঁচানোর চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় মালিক, শ্রমিক সংগঠন ও সরকারের ত্রিপক্ষীয় পদক্ষেপ নিতে নিয়মিত বৈঠকের পরামর্শ এসেছে এই বিষয়ক এক আলোচনা সভায়।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 17 April 2021, 02:42 PM
Updated : 17 April 2021, 02:43 PM

‘চলমান কোভিড-১৯ শ্রমবাজার পুনরুদ্ধার: ট্রেড ইউনিয়নের ভূমিকা’ শীর্ষক এই আলোচনা সভায় বক্তারা সরকারসহ সংশ্লিষ্টদের কাছে এই পরামর্শ দেন।

তারা নিয়মিত ‘সামাজিক সংলাপ’ আয়োজনের কথা বলেন।  

শনিবার ভার্চুয়াল প্ল্যাটফর্মে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়লাগ (সিপিডি) ও বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজ (বিলস) আয়োজিত এই আলোচনা সঞ্চালনা করেন সিপিডির ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য সৈয়দ মঞ্জুর এলাহী।

সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্যে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত জাতীয় সংসদের স্থায়ী কমিটির সদস্য শিরিন আক্তার বলেন, “চলমান মহামারীর মধ্যে এখন আবার লকডাউন শুরু হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে কোনখাতের শ্রমিক কেমন আছে, কোথায় সমস্যা আছে এসব জানার জন্য সামাজিক সংলাপ করা দরকার।

“দেশে চলমান পরিস্থিতিতে শ্রমিকদের জন্য স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা গ্রহণ করা জরুরি।”

তিনি বলেন, শ্রমিকরা কিভাবে ভ্যাকসিন নেবে, সেজন্য একটি পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। কোন জায়গায় ভ্যাকসিন নিলে শ্রমিকদের সুবিধা হয় তা ঠিক করতে হবে।

এসব বিষয়ে জানতে শ্রমিক, মালিক ও সরকার ত্রিপক্ষীয় বৈঠকের প্রয়োজন। এই বৈঠকের মাধ্যমে শ্রমিকদের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার জন্য সিদ্ধান্ত নেওয়া যেতে পারে।

আরেক বিশেষ অতিথি শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রনালয়ের সচিব মো. আব্দুস সালাম জানান, কোভিড পরিস্থিতিতে কারখানায় শ্রমিকদের উন্নত কর্মপরিবেশের জন্য গঠিত কমিটি গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ১৩৬টি কারখানা পরিদর্শন করেছে।

তিনি বলেন, “এই কমিটি কাউকে অবহেলা করার কাউকে সুযোগ না দিয়ে উভয়ের স্বার্থ রক্ষায় কাজ করছে। সংকট মোকাবিলায় সরকার প্রয়োজনে আরও কার্যক্রম গ্রহণ করবে।“

এর আগে সিপিডির চেয়ারম্যান অধ্যাপক রেহমান সোবহান বলেন, কোভিড-১৯ পরিস্থিতিতে শ্রমিকদের স্বার্থ কিভাবে রক্ষা করবে তা ট্রেড ইউনিয়নগুলো ঠিক করবে।

শ্রমিক ও কারখানার নিরাপত্তার পাশাপাশি কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করতে সরকারি বেসরকারি যৌথ উদ্যোগে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের যৌথ বৈঠকের মাধ্যমে করণীয় বের আসবে বলে মনে করেন তিনি।

মঞ্জুর এলাহী বলেন, অংশগ্রহণমূলক সামাজিক সংলাপের উদ্যোগ নেয়ার দায়িত্ব সরকারের।

সভায় মূল প্রবন্ধে সিপিডির জ্যেষ্ঠ গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, “কোভিড-১৯ মহামারীতে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হচ্ছে শ্রমিকরা। বিশ্বের ১২৪টি দেশের মধ্যে ১০৮টিতে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) কোভিড-১৯ বিষয়ে সরকারের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে কার্যক্রম গ্রহণ করেছে।“

তিনি বলেন, “সিপিডির এক সমীক্ষা অনুযায়ী চলতি অর্থবছরের প্রথম ও দ্বিতীয় প্রান্তিকে দেশের প্রায় ১ কোটি ৬৪ লাখ লোক নতুনভাবে দারিদ্রসীমার মধ্যে ঢুকে পড়েছে। নারীর প্রতি সহিংসতা বেড়েছে।”

“প্রণোদনা হিসেবে সরকার শ্রমিকদের জন্য যে প্যাকেজ ঘোষণা করেছে, গত একবছরে সেটির মাত্র ৫৬ ভাগ বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়েছে।“

প্রবন্ধ উপস্থাপনকালে মোয়াজ্জেম বলেন, দেশে সকল খাতের শ্রমিকদের ট্রেড ইউনিয়ন নেই। পাটকল, পরিবহণ এবং পোশাক খাতসহ মাত্র কয়েকটি খাতে ট্রেড ইউনিয়ন রয়েছে। অথচ বাংলাদেশসহ বিশ্বে চলমান মহামারীতে শ্রমিকদের দাবি দাওয়া ও তাদের কী প্রয়োজন এসব তুলে ধরার জন্য ট্রেড ইউনিয়ন সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন।

এসময় তিনি এই মহামারী পরিস্থিতির মধ্যে শ্রমিকদের আর্থিক সহায়তা দিতে কারখানা মালিক, ক্রেতা এবং সরকার ত্রিপক্ষীয় মিলে একটি তহবিল গঠনের পরামর্শ দেন।

সভায় গার্মেন্ট শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি ও বিলস এর উপদেষ্টা আমিরুল হক আমিন বলেন, “কোভিড-১৯ এর শুরু থেকে এ পর্যন্ত দেশে পোশাক খাতে প্রায় ২ লাখ শ্রমিক কাজ হারিয়েছেন। তারমধ্যে প্রায় দেড় লাখ আবার কাজ ফিরে পেয়েছেন। বাকি ৫০ হাজার শ্রমিক এখনো বেকার।

তিনি ঝামেলা এড়াতে ঈদের অন্তত ১০ দিন আগে বেতন বোনাস পরিশোধের পরামর্শ দেন।

মালিক, শ্রমিক ও সরকারের ত্রিপক্ষীয় বৈঠকের আচরণ নিয়ে আপত্তি তুলে ধরে তিনি বলেন, “সংলাপে সামনের চেয়ার মালিকপক্ষের দখল করে নেওয়ার প্রবণতা দূর করতে হবে।“

তিনি সামাজিক সংলাপ খাতভিত্তিক করার তাগিদ দেন।

সভায় জাতীয় শ্রমিক জোট বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক ও বিলস এর উপদেষ্টা নাঈমুল আহসান জুয়েল বলেন, দেশে ৬ কোটি ৩৫ লাখ শ্রমিক আছেন। তাদের স্বার্থ রক্ষায় মালিক, শ্রমিক ও সরকার প্রতিনিধিদের উদ্যোগে সমন্বয় করে সিদ্ধান্ত নিতে পারলে ভালো ফল পাওয়া যাবে।