মহামারীতে খরচ কমিয়েছেন ৭৮% মানুষ: জরিপ

করোনাভাইরাস মহামারীর এক বছরে অর্থনৈতিক ধাক্কা সামলাতে দেশের ৭৮ শতাংশ মানুষ তাদের দৈনন্দিন খরচ কমিয়েছেন বলে উঠে এসেছে সিপিডির এক জরিপে। 

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 5 May 2021, 12:23 PM
Updated : 5 May 2021, 12:23 PM

বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠানটির এই জরিপে আরও দেখা গেছে, ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারির তুলনায় এই বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সময়ে ৫০ শতাংশ মানুষ তাদের সঞ্চয় কমিয়েছেন। এই সময়ে মানুষের আয় কমেছে প্রায় ৭ শতাংশ; তবুও আয় নিয়ে সন্তুষ্টির কথা জানিয়েছেন ৮৬ শতাংশ।

বুধবার গবেষণার তথ্য উপস্থাপনাকালে সিপিডি’র গবেষণা পরিচালক তৌফিকুল ইসলাম খান জানান, মহামারীর শুরুর প্রথম দিকে এপ্রিল-মে মাসে যারা চাকরি হারিয়েছিলেন, তাদের বেশিরভাগই এক মাস পর চাকরি পেয়েছেন।

 ‘কোভিডকালে আয় ও কর্মসংস্থান পরিস্থিতি: কীভাবে মানুষগুলো টিকে আছে’’ শীর্ষ এই জরিপ এ বছরের জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসে দেশের ১৪ জেলার ২ হাজার ৬০০ লোকের বাড়িতে গিয়ে পরিচালনা করা হয়। আন্তর্জাতিক সংস্থা অক্সফাম ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের এতে সহযোগিতা করে।

বুধবার এই জরিপের ফলাফল প্রকাশের ভাচুর্য়াল অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সিপিডি’র গবেষণা পরিচালক তৌফিকুল ইসলাম খান।

অনুষ্ঠানে বক্তারা মহামারীর দ্বিতীয় ঢেউয়ের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সরকারকে আগামী বাজেটে স্বল্প ও মাঝারি আয়ের মানুষের কাছে প্রণোদনার অর্থ পৌঁছানোর পরামর্শ দিয়ে একটি মধ্য মেয়াদী ‘শোভন’ কর্মসংস্থান তৈরির পরিকল্পনা গ্রহণের পরামর্শ দেন।

সিপিডি‘র সম্মানীয় ফেলো অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে সম্মানীয় বক্তা হিসেবে সিপিডি চেয়ারম্যান অধ্যাপক রেহমান সোবহান বলেন, “অনেকগুলো বেসরকারি সংস্থা দেশের প্রয়োজনে বিশেষ সময়ে অনেক পরামর্শ দিয়ে থাকেন। এসব পরামর্শ কী সরকার শোনে, নাকি তাদের মতো করে চালাচ্ছেন।“

তিনি দেশের উন্নয়নে বাস্তবভিত্তিক ও মাঠ থেকে উঠে আসা এসব জরিপের ফলাফলে আমলে নিয়ে সুধীজন ও বিশ্লেষকদের পরামর্শ গ্রহণ করে সরকারি কর্মসূচী নেওয়ার পরামর্শ দেন।

আগামী বাজেটে তিনি সব খাতের স্বল্প আয়ের মানুষকে কেন্দ্র করে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচীর (এডিপি) আওতায় আয়বর্ধক কর্মসূচী নেওয়ার তাগিদও দেন।

সম্মানিত অতিথির ব্ক্তব্যে স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সাবেক তত্তাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা তপন চৌধুরী বলেন, “দ্বিতীয় ঢেউয়ের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ এখনো জানা না গেলেও এটা নিশ্চিত যে প্রথম ঢেউয়ের ক্ষতি কিছুটা কাটিয়ে ওঠা গেছে।

“অন্যদের কথা বলতে পারব না, তবে অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক বাজারে আমাদের বিপুল চাহিদা দেখেছি। গত দুই বছর ধরে আমরা বিপুল সম্প্রসারনে গিয়েছি। কর্মসংস্থানও বাড়ছে।”

এখন অন্যান্য খাতেও বিনিয়োগ সম্প্রসারণ হলে কর্মসংস্থান বাড়বে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।

সিপিডি‘র সম্মানীয় ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য প্রবৃদ্ধির চেয়ে মানুষের হাতে অর্থ পৌছানোর ব্যবস্থা করার ওপর গুরুত্ব দিয়ে বলেন, “এতে অর্থনীতি অনেক বেশি অন্তর্ভূক্তিমুলক হবে।“

প্রবৃদ্ধি নিয়ে সরকারের মনোযোগকে ‘অন্ধকারে কালো বেড়াল খোঁজার’ সঙ্গে তুলনা করে তিনি বলেন, “সরকার এই বিপদের সময়ও তথাকথিত প্রবৃদ্ধির পেছনে দৌড়াচ্ছে, যেখানে মানুষের কর্মসংস্থান ও আর্থিক সচ্ছলতা নিশ্চিত হচ্ছে না।“

বিশেষ করে কম আয়ের মানুষের বেশি সংকটে পড়ার কথা উল্লেখ করে তিনি আগামী বাজেটে এসব নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য আর্থিক সুবিধা নিশ্চিত করার পরামর্শ দেন।

জরিপের তথ্য নিয়ে প্রবন্ধ উপস্থাপনকালে সিপিডির গবেষণা পরিচালক তৌফিক বলেন, “গত বছরের মার্চে দেশে কোভিড-১৯ চিহ্নিত হওয়ার পর মহামারীর প্রথম ধাক্কায় এপ্রিল - মে সময়ে ৬২ শতাংশ শ্রমিক চাকরি হারিয়েছেন। এরমধ্যে ৮৫ শতাংশ অন্তত এক মাসের বেশি বেকার ছিলেন।“

তিনি বলেন, সেখান থেকে এ বছরের ফেব্রুয়ারিতে যখন এই জরিপ পরিচালনা করা হয় তখন প্রায় সবাই চাকরি ফেরত পেয়েছেন।

একইসময়ে আগের বছরের চেয়ে কর্মসংস্থান আরও কিছুটা বেড়েছে। তবে শিল্পখাতে ৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হলেও সেবাখাতে কর্মসংস্থান প্রায় দেড় শতাংশের মতো কমে গেছে।

তিনি বলেন, জরিপের তথ্য অনুযায়ী ওই সময়কালে সেবাখাত থেকে কর্মসংস্থানের জন্য মানুষ কৃষির দিকে গেছেন। এসময় কৃষিতে কর্মসংস্থান বাড়লেও এই খাতে কর্মঘন্টা কমে গেছে।

সিপিডি‘র এই গবেষক জানান, এখন পর্যন্ত কর্মসংস্থান সন্তোষজনক কীনা এমন প্রশ্নের উত্তরে অংশগ্রহণকারীদের ৪৩ শতাংশ আগের চেয়ে খারাপ বলে জানিয়েছেন। ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারির তুলনায় এ বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মানুষের আয় কমেছে প্রায় ৭ শতাংশ। আবার ৮৬ শতাংশ বলেছেন যা আয় হচ্ছে তা সন্তোষজনক।