নতুন অর্থবছরের দুই মাস চলে গেলেও বাংলাদেশ ব্যাংক মঙ্গলবার জুলাই মাসের লেনদেন ভারসাম্যের তথ্য প্রকাশ করেছে। তাতে দেখা যায়, অর্থবছরের প্রথম মাসে অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ এই সূচকে উদ্বৃত্তের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৯৬ কোটি ৫০ লাখ (প্রায় ২ বিলিয়ন) ডলার।
তার আগে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে এই ঘাটতি ছিল আরও বেশি, ৫১০ কোটি ২০ লাখ ডলার। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ঘাটতি ছিল ৯৫৬ কোটি ৭০ লাখ ডলার।
কোভিড-১৯ মহামারীর মধ্যেও ব্যালেন্স অফ পেমেন্টে বড় উদ্বৃত্ত নিয়ে অর্থবছর শুরু হওয়ায় সন্তোষ প্রকাশ করেছেন অর্থনীতির গবেষক আহসান এইচ মনসুর।
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্স, রপ্তানি আয় ও বিদেশি ঋণ সহায়তা বাড়ায় এই কঠিন সময়ে লেনদেন ভারসাম্যে স্বস্তি নিয়ে বছর শুরু করেছে বাংলাদেশ। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, এই উদ্বৃত্ত কতদিন থাকবে। এক মাসের তথ্য দিয়ে কিছুই বোঝা যাবে না। আরও দুই-তিন মাস গেলে প্রকৃত চিত্র পাওয়া যাবে।”
গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান মনসুর বলেন, “করোনাভাইরাস গোটা বিশ্ব অর্থনীতিকেই ওলোটপালট করে দিয়েছে এবং এখনও দিচ্ছে। এই অবস্থায় রেমিটেন্স ও রপ্তানি আয়ের ইতিবাচক ধারা কতদিন থাকবে সেটাই বড় বিষয় হয়ে দেখা দিয়েছে।
“অনেক প্রবাসী কাজ হারিয়ে দেশে ফিরে এসেছেন। অনেকে তার শেষ সঞ্চয়টুকু দেশে পাঠাচ্ছেন। সে কারণে রেমিটেন্স বেড়েছে। আগামী দিনগুলোতে রেমিটেন্সে খুব ভালো খবর আসবে বলে আমার কাছে মনে হয় না। রপ্তানির ক্ষেত্রেও একই শঙ্কা আমার।”
“কোভিড-১৯ মোকাবেলায় গত কয়েক মাসে সাড়ে ৪ বিলিয়ন ডলার ঋণ দিয়েছে ডোনাররা। এক্ষেত্রে আর খুব বেশি আশা করা উচিৎ হবে না। সব মিলিয়ে আগামী দিনগুলোতে বাংলাদেশের অর্থনীতি সংকটের মধ্য দিয়েই যাবে,” বলেন ব্র্যাক ব্যাংকের চেয়ারম্যান আহসান মনসুর।
বাণিজ্য ঘাটতি কমেছে
পণ্য বানিজ্যে প্রায় ১৮ বিলিয়ন ডলারের বাণিজ্য ঘাটতি নিয়ে গত অর্থবছর শেষ হয়েছিল। চলতি অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে এই ঘাটতি হয়েছে মাত্র ৮ কোটি ৬০ লাখ ডলার।
গত বছরের জুলাইয়ে ঘাটতি ছিল অনেক বেশি, ১০৬ কোটি ১০ লাখ ডলার। এই মাসে বিভিন্ন পণ্য রপ্তানি করে বাংলাদেশ ৩৮২ কোটি ৬০ লাখ ডলার আয় করেছে। আর আমদানিতে ব্যয় করেছে ৩৯১ কোটি ২০ লাখ ডলার।
এ হিসাবেই জুলাইয়ে পণ্য বাণিজ্যে সামগ্রিক ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৮ কোটি ৬০ লাখ ডলার।
সেবা খাতে ঘাটতিও কমেছে
সেবা খাতের বাণিজ্য ঘাটতিও কমেছে। গত বছরের জুলাই মাসে এ খাতের ঘাটতি ছিল ৫১ কোটি ৭০ লাখ ডলার। গত জুলাইয়ে তা কমে ৩৩ কোটি ৯০ লাখ ডলার হয়েছে।
মূলত বীমা, ভ্রমণ ইত্যাদি খাতের আয়-ব্যয় হিসাব করে সেবা খাতের বাণিজ্য ঘাটতি পরিমাপ করা হয়।
সামগ্রিক লেনদেন ভারসাম্যে উদ্বৃত্ত
সামগ্রিক লেনদেন ভারসাম্যেও (ওভারঅল ব্যালেন্স) বড় উদ্বৃত্ত ধরে রেখেছে বাংলাদেশ। ৩৬৫ কোটি ৫০ লাখ ডলারের উদ্বৃত্ত নিয়ে গত অর্থবছর শেষ হয়েছিল।
সেই ধারাবাহিকতায় ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রথম মাসেও ১১২ কোটি ৭০ লাখ ডলারের উদ্বৃত্ত রয়েছে। অথচ গত বছরের জুলাইয়ে এক্ষেত্রে ৭ কোটি ৭ লাখ ডলারের ঘাটতি ছিল।
আর্থিক হিসাবে ঘাটতি
তবে আর্থিক হিসাবে (ফাইন্যান্সিয়াল অ্যাকাউন্ট) ঘাটতি রয়ে গেছে। প্রায় ৮ বিলিয়ন ডলারের বড় উদ্বৃত্ত নিয়ে শেষ হয়েছিল গত অর্থবছর।
চলতি অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে সেটি ৪২ কোটি ৯০ লাখ ডলার ঘাটতি হয়েছে। গত বছরের জুলাইয়ে ঘাটতি ছিল ৩৯ কোটি ৬০ লাখ ডলার।
করোনাভাইরাসের ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে অর্থবছরের শেষ দিকে বিশ্ব ব্যাংক, আইএমএফসহ বিভিন্ন দাতা সংস্থার মোটা অংকের ঋণের কারণে আর্থিক হিসাবে বেশ ভালো উদ্বৃত্ত ছিল বলে মনে করেন আহসান মনসুর।
নিয়মিত আমদানি-রপ্তানিসহ অন্যান্য আয়-ব্যয় চলতি হিসাবের অন্তর্ভুক্ত। এই হিসাব উদ্বৃত্ত থাকার অর্থ হল, নিয়মিত লেনদেনে দেশকে কোনো ঋণ করতে হচ্ছে না। আর ঘাটতি থাকলে সরকারকে ঋণ নিয়ে তা পূরণ করতে হয়।