শেষ পর্যন্ত ব্যাংক ঋণের সুদের হার এক অংকে নামিয়ে আনার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
Published : 24 Dec 2019, 10:19 PM
আর এই সুদহার হবে ৯ শতাংশ। নতুন বছরের প্রথম দিন থেকে উৎপাদন খাতে অর্থাৎ শিল্প খাতে ৯ শতাংশ সুদে ঋণ বিতরণ করতে হবে ব্যাংকগুলোকে।
মঙ্গলবার বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের সভায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম রাতে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানিয়েছেন।
বর্তমানে ব্যাংক ভেদে উৎপাদন খাতে সুদ হার ১১ থেকে ১৪ শতাংশ।
সিরাজুল ইসলাম বলেন, “ব্যাংকঋণের সুদের হার এক অঙ্কে নামিয়ে আনার কৌশল ঠিক করতে গত ১ ডিসেম্বর ডেপুটি গভর্নর এস এম মনিরুজ্জামানকে আহ্বায়ক করে সাত সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছিল। সেই কমিটির সুপারিশের আলোকেই কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বোর্ড সভায় শিল্প খাতে ৯ শতাংশ সুদহার নির্ধারণের সিদ্ধান্ত হয়েছে।”
গভর্নর ফজলে কবির সভায় সভাপত্বি করেন।
দীর্ঘদিন ধরে সরকারের পক্ষ থেকে এক অঙ্কে (১০ শতাংশের কম) সুদ হার কমানোর ঘোষণা দেওয়া হচ্ছে। ব্যাংক মালিকেরাও দেড় বছর ধরে এমন ঘোষণা দিয়ে নানা সুবিধা নিয়ে আসছেন। তবে সুদ হার আর কমেনি।
এবার ব্যাংক খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ ব্যাংক ঋণের সুদের সীমা বেঁধে দিচ্ছে, যা মুক্তবাজার অর্থনীতির দেশে নজিরবিহীন ঘটনা বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা।
“কেননা, বেসরকারি ব্যাংকগুলোর পরিচালন ব্যয় অনেক বেশি। এখন ব্যাংকগুলোকে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার জন্য আধুনিক তথ্য প্রযুক্তির জন্যই অনেক অর্থ ব্যয় করতে হয়। এরপর কম সুদে ঋণ নিলে তার আয় অনেক কমে যাবে যাবে।”
তিনি বলেন, “সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে, মুক্তবাজার অর্থনীতিতে সবকিছুই যেখানে বাজারের উপর; সেখানে সুদের হারও বাজারের উপর ছেড়ে দেওয়া উচিৎ বলে আমি মনে করি। সেক্ষেত্রে যদি কোনো ব্যাংক তার অন্যান্য খরচ কমিয়ে ৭/৮ শতাংশ সুদেও ঋণ বিতরণ করতে পারে সেটাও করবে।”
“বেঁধে দেওয়ার পক্ষপাতি আমি নই,” বলেন ব্র্যাক ব্যাংকের চেয়ারম্যান আহসান মনসুর।
এদিকে ব্যবসায়ী শিল্পপতিদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই সভাপতি শেখ ফজলে ফাহিম কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এ সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “আমরা দীর্ঘ দিন ধরে এই দাবিটি করে আসছিলাম। সরকার বেশ কয়েকবার উদ্যোগও নিয়েছে। কিন্তু ব্যাংকগুলো মানেনি। এবার একটি কাঠামোর মধ্যে এনে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ৯ শতাংশ নির্ধারণ করে দিয়েছে।”
“আশা করছি ব্যাংকগুলো এটা বাস্তবায়ন করবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কড়া নজরদারি থাকবে।”
অন্যদিকে বেসরকারি ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) চেয়ারম্যান মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ৯ শতাংশ সুদ হারে ঋণ দিলে প্রতিটি ব্যাংকের আয় ১৫০ কোটি টাকার মতো কমে যাবে। যার ফলে ব্যাংকগুলোর মুনাফায় নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। এতে রাজস্ব আদায় ও শেয়ারবাজারেও নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।