বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবাহের লক্ষ্য কমিয়ে সতর্ক মুদ্রানীতি

বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবাহের প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য কমিয়ে চলতি অর্থবছরের পুরো মেয়াদের জন্য সতর্ক মুদ্রানীতি ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 31 July 2019, 10:15 AM
Updated : 31 July 2019, 10:16 AM

গভর্নর ফজলে কবির বলেছেন, “ভালো মানের ঋণের অভাবেই বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবাহ কমে গেছে। যদি ভালো ঋণ বাড়ে তাহলে আমরা এ খাতের ঋণ প্রবাহের লক্ষ্য বাড়িয়ে দেব।”

রাজধানীর মতিঝিলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সম্মেলন কক্ষে বুধবার ২০১৯-২০ অর্থবছরের এই মুদ্রানীতি ঘোষণা করেন গভর্নর।

এতদিন বছরে দুটি মুদ্রানীতি ঘোষণা করা হলেও বাংলাদেশ ব্যাংক এখন থেকে পুরো অর্থবছরের জন্য একবাই মুদ্রানীতি ঘোষণা করবে বলে জানানো হয় সংবাদ সম্মেলনে।

নতুন মুদ্রানীতিতে বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবাহে প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছে ১৪ দশমিক ৮০ শতাংশ। গত অর্থবছরের দ্বিতীয়ার্ধের (জানুয়ারি-জুন) মুদ্রানীতিতে এই লক্ষ্য ছিল ১৬ দশমিক ৫ শতাংশ।

গভর্নর ফজলে কবির বলেন, ১৬ দশমিক ৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য ধরা হলেও অর্জিত হয়েছে ১১ দশমিক ৩ শতাংশ। তা থেকে বাড়িয়ে এবার ১৪ দশমিক ৮০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি আশা করা হচ্ছে।

“বাজেটে ঘোষিত মূল্যস্ফীতি ৫ দশমিক ৫ শতাংশে পরিমিত রেখে ৮ দশমিক ২০ শতাংশ প্রকৃত জিডিপি অর্জনের জন্য পর্যাপ্ত ঋণ প্রসার সঙ্কুলানের লক্ষ্যে ২০১৯-২০ অর্থবছরে মুদ্রানীতির নীতিভঙ্গীটি আগেকার মতোই সতর্কভাবে সঙ্কুলানমুখী রয়েছে।”

দেশের বিভিন্ন জেলায় বন্যায় উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, “জিডিপি প্রবৃদ্ধির বহমান জোরালো ধারার সৃষ্ট আস্থা ও মূল্যস্ফীতি নিম্নমুখী রেখে উচ্চতর হারে প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য অর্জনের সহায়ক মুদ্রানীতিভঙ্গী ও কর্মসূচির প্রতিশ্রুতি রেখে মুদ্রনীতির আগাম ঘোষণার এই আয়োজন করতে পারায় আমাদের সন্তোষ ও পরিতুষ্টিবোধের পাশাপাশি রয়েছে ঘনবর্ষার এই শ্রাবণে উজানের নামতে থাকা বন্যার প্লাবনে দেশের অনেক অঞ্চলের বিপন্ন জনগোষ্ঠীর জন্য বিষণ্নতা ও সমবেদনা।”

অতীতের মত এবারও বাংলাদেশ ব্যাংক ও আর্থিক খাতের প্রতিষ্ঠানগুলো সামাজিক দায়বদ্ধতা কার্যক্রমের আওতায় দরিদ্র জনগোষ্ঠী ও বন্যার্তদের জন্য সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিচ্ছে বলে জানন গভর্নর।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলছে, নতুন অর্থবছরের মুদ্রানীতির লক্ষ্য অর্জনে অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক- দুই দিকেই ‘কিছু ঝুঁকি ও অনিশ্চয়তা’ রয়েছে।

নতুন ভ্যাট আইন কার্যকরের ফলে এবং বন্যায় ফসলহানির কারণে বাজার দরে চাপ সৃষ্টি হলে মূল্যষ্ফীতি সরকারের প্রত্যাশিত সীমায় বেঁধে রাখা কঠিন হতে পারে বলে মনে করছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

মুদ্রানীতিতে বলা হয়েছে, “এগুলোর সমন্বিত প্রভাব সমগ্র অর্থবছরে কেমন দাঁড়াবে তার ধারণা পেতে কিছুটা সময় লাগবে।”

আবার বিশ্ব বাণিজ্যে চীন ও যুক্তরাষ্ট্রপন্থিদের চলমান দ্বন্দ্ব এবং ব্রেক্সিট বাস্তবায়ন নিয়ে অনিশ্চয়তাকে বৈদেশিক খাতের সম্ভাব্য ঝুঁকি বলে মনে করা হচ্ছে।

অবশ্য আন্তর্জাতিক ওই বিষয়গুলোকে ‘ঝুঁকি’ না বলে ‘অনিশ্চয়তা’ বলতে চান গভর্নর ফজলে কবির।

তিনি বলেন, “বাংলাদেশের মত উন্নয়নশীল অর্থনীতির দেশসমূহের জন্যে এসব অনিশ্চয়তা থেকে লাভজনক সুযোগ গ্রহণের কিছু অবকাশও সামনের মাসগুলোতে আসতে পারে।”