সামষ্টিক অর্থনীতির চিড় সারানোই চ্যালেঞ্জ: সিপিডি

বাংলাদেশে গত ১০ বছরে এখনই সামষ্টিক অর্থনীতি সবচেয়ে চাপে রয়েছে দাবি করে গবেষণা সংস্থা সিপিডি বলেছে, তা রক্ষা করাই আগামী বাজেটের মূল চ্যালেঞ্জ।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 11 June 2019, 11:58 AM
Updated : 11 June 2019, 11:58 AM

বাজেট ঘোষণার আগে মঙ্গলবার ঢাকার সিরডাপ মিলনায়তনে ‘জাতীয় অর্থনীতির পর্যালোচনা ও আসন্ন বাজেট প্রসঙ্গ’ নিয়ে সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের (সিপিডি) এক সংবাদ সম্মেলনে একথা বলা হয়।

বাজেট প্রণয়নের ক্ষেত্রে তিনটি বিষয়ে জোর দিতে সরকারকে সুপারিশ করেছে সিপিডি। এগুলো হল রাজস্ব আহরণ, ব্যাংক খাত সংস্কার এবং টাকার বিনিময় হারকে নমনীয় করা।

আওয়ামী লীগের তৃতীয় মেয়াদের সরকারের প্রথম ১০০ দিনের মূল্যায়নে সিপিডি বলেছিল, তা ছিল ‘উৎসাহহীন, উদ্যোগহীন, উচ্ছ্বাসহীন এবং উদ্যমহীন’।

শেখ হাসিনা নেতৃত্বাধীন এই সরকারই দেড়শ দিন পার করার পর ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেট দিতে যাচ্ছে।

বাজেটের চালেঞ্জ নিয়ে সিপিডির সম্মানীয় ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য্য বলেন, “সামষ্টিক অর্থনীতিতে চিড় ধরছে, এটি রক্ষা করা বড় চ্যালেঞ্জ।

“এর ভেতরে তিনটি বিষয়কে জোর দিয়ে নিয়ে এসেছি। একটি হল রাজস্ব আহরণ, ব্যাংকিং খাতে সংস্কার এবং টাকার বিনিময় হারকে নমনীয় করে নিচের দিকে ঠিক করে নিয়ে আসা। আর সামাজিক খাতের ব্যয়ের বিষয়টি তো রয়েছেই।”

আওয়ামী লীগের গত ১০ বছরের শাসনকালে অর্থনীতিতে যে অগ্রগতি হয়েছে, তা এখন ‘সীমান্ত রেখায় উপনীত’ বলে মন্তব্য করেন দেবপ্রিয়।

প্রবৃদ্ধির হার ও মাথাপিছু আয়ের হারকে ‘ভালো’ বললেও বেসরকারি বিনিয়োগে খরাকেই বড় সমস্যা হিসেবে দেখছে সিপিডি।

দেবপ্রিয় বলেন, “বাংলাদেশের ব্যক্তি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে, শিল্পায়নের ক্ষেত্রে ও সামাজিক ক্ষেত্রে আশানুরূপ উন্নতি দেখতে পাচ্ছি না। প্রবৃদ্ধির ধারার সাথে অন্যান্য উন্নয়নের সূচকগুলোর একটি বৈসাদৃশ্য আছে।

“বাংলাদেশে গত ১০ বছরে যে কোনো সময়ের চেয়ে সামষ্টিক অর্থনীতি এখন চাপের মুখে আছে। সামষ্টিক অর্থনীতির স্থিতিশীলতা অর্থনীতির একটি শক্তি ছিল। সেই শক্তিতে চিড় ধরছে, সেই শক্তিতে দুর্বলতা দেখা দিচ্ছে।”

তিনি বলেন, “এটি অতিক্রম না করা গেলে উন্নয়নের জন্য যে অভিলাষ সেখানে প্রয়োজনীয় বিনিয়োগ করার সুযোগ কম হবে। এবং অন্য উৎস থেকে যদি বিনিয়োগ করার চেষ্টা করি, তাহলে এই সামষ্টিক অর্থনীতি আরও খারাপ হওয়ার সুযোগ আছে।”

রেমিটেন্স ও রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি আশাপ্রদ হলেও বৈদেশিক লেনদেনে ঘাটতি বেড়ে যাওয়ার বিষয়টি উদ্বেগের বলে মনে করছে সিপিডি।

দেবপ্রিয় বলেন, “এর ফলে আমাদের বৈদেশিক রিজার্ভ দ্রুততার সাথে নেমে আসছে। সরকার যেটা করছে ডলার বিক্রি করে টাকা কে স্থিতিশীল রাখার চেষ্টা করছে। টাকাকে নিচে নামিয়ে আনতে হবে, প্রতিযোগিতার সক্ষমতাকে চালু রাখতে হবে। ৩ শতাংশের বেশি উচ্চ রয়ে গেছে।”

ডলারের বিপরীতে টাকার মান কমানোর পক্ষে যুক্তি দেখিয়ে তিনি বলেন, “সরকার মনে করে, টাকাকে সস্তা করলে আমদানিকৃত পণ্যের দাম বাড়বে এবং মূল্যস্ফীতিতে প্রভাব পড়বে। আমরা মনে করি, মূল্যস্ফীতি এখন যে অবস্থায় আছে, তা যথেষ্ট নিয়ন্ত্রণে আছে, এ সময় টাকাকে অবনমন করা হলে তা সহ্য করার শক্তি অর্থনীতিতে আছে।”

ব্যাংক খাতে নিয়ে আগের মতোই সরকারের সমালোচনা করে দেবপ্রিয় বলেন, “বর্তমান সরকার আসার পর যে কয়টি পদক্ষেপ নিয়েছে, প্রতিটি পদক্ষেপ ব্যাংকিং খাতের জন্য আরও বেশি ক্ষতিকারক হয়েছে। খেলাপি ঋণ ১ টাকাও বাড়বে না বলে ঘোষণার পর তার বদলে ১৭ হাজার কোটি টাকা বেড়েছে।

“সুদের হার নিয়ে নাড়াচাড়া করে ব্যাংকিং খাতের সমাধান হবে না। সুদ সুবিধা দিলে কোটি কোটি টাকা ব্যাংকে দিয়ে যাবে, এটা ভুল তত্ত্ব। কাঠামোগতভাবে যদি সুশাসনের ব্যবস্থা না আনা যায়, যদি প্রকৃত তসরুফকারীদের শাস্তি না দেওয়া যায়, ব্যাংকিং খাতে আস্থার সংকট দেখা দেবে।”

অর্থনৈতিক নীতিমালা বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে অর্থ মন্ত্রণালয়ের যে নেতৃত্বমূলক ভূমিকা ছিল, তা সাম্প্রতিককালে ‘দুর্বল’ হয়ে গেছে বলেও মনে করছে সিপিডি।

কালো টাকা সাদা করার নতুন সুযোগ দেওয়া হলে তা আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ হবে না বলেও মন্তব্য করেন দেবপ্রিয়।

বহুল আলোচিত ভ্যাট আইনের বিষয়ে তিনি বলেন, তারা একক ও কম হারের পক্ষপাতি।

সংবাদ সম্মেলনে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সিপিডির সিনিয়র রিসার্চ ফেলো তৌফিকুল ইসলাম খান। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন সংস্থার গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম।