রূপপুর প্রকল্পে ৩ হাজার জনবল নিয়োগ দেবে সরকার

পাবনার রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র প্রকল্পে তিন হাজার জনবল নিয়োগের প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গেছে বলে জানিয়েছেন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সচিব আনোয়ার হোসেন।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 10 August 2018, 02:07 PM
Updated : 10 August 2018, 02:07 PM

বৃহস্পতিবার রাতে রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে রূপপুর পারমাণবিক প্রকল্প সংক্রান্ত সেমিনারে তিনি এ তথ্য জানান।

আনোয়ার হোসেন বলেন, রূপপুর পারমাণবিক প্রকল্পে এখন ২০০ জনবল রয়েছে।

দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করার পর নিউক্লিয়ার এনার্জি বিষয়ে ভারত ও রাশিয়া থেকে উচ্চতর পড়াশোনা করে ফিরেছেন শতাধিক শিক্ষার্থী। আগামী শনিবার ৮২৫ জন প্রকৌশলী ও বিজ্ঞানীর একটি দল রাশিয়া যাচ্ছে পারমাণবিক প্রকল্প বিষয়ে উচ্চতর প্রশিক্ষণ নিতে।

আনোয়ার হোসেন বলেন, “প্রকল্পে সাপোর্ট সিস্টেমের জন্য দেড় হাজার জনবল নিয়োগ দেব। সব মিলিয়ে আমাদের তিন হাজার জনবল এখানে তৈরি করা হবে রূপপুরকে চালানোর জন্য। এটা আমাদের কন্টিনিউয়াস প্রসেস।”

ইন্টারন্যাশনাল এনার্জি এজেন্সির (আইইএ) নীতিমালা অনুযায়ী এ নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হবে বলে জানান আনোয়ার হোসেন।

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সচিব জানান, আইইএ ও বাংলাদেশের যৌথ কারিগরি বিষয়ক উপদেষ্টা কমিটি রয়েছে। পুরো নিয়োগ প্রক্রিয়াটি তারা দেখভাল করছে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ১৪ জুলাই রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের দ্বিতীয় ইউনিট নির্মাণে কংক্রিট ঢালাই কাজ উদ্বোধন করেন

এই নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পর্কে প্রধান অতিথির ভাষণে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী ইয়াফেস ওসমান বলেন, “এ নিয়োগ প্রক্রিয়ায় আমরা কড়া নজর রাখছি, যাতে কোনো জামায়াত-শিবির বা যুদ্ধাপরাধীর সন্তান ঢুকে না পড়ে। আর এখানে উচ্চপদস্থ মন্ত্রী বা সরকারি কর্মকর্তাদের সন্তান ও আত্মীয়দের লবিংকেও আমরা পাত্তা দেব না।”

সচিব আনোয়ার হোসেন দাবি করেন, সম্প্রতি আইইএর একটি প্রতিনিদিল দল রূপপুর পারমাণবিক প্রকল্প দেখতে এসে নিরাপত্তা, কারিগরি দিক নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করে গেছেন।

রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ১২ দশমিক ৬৫ বিলিয়ন ডলার, যার ৯০ শতাংশ রাশিয়া ঋণ হিসেবে দেবে। কেন্দ্র থেকে যে বিদ্যুৎ পাওয়া যাবে, তার প্রতি ইউনিটের দাম পড়বে সাড়ে তিন টাকা।

রুশ প্রতিষ্ঠান অ্যাটমস্ট্রয়ের নকশায় পাঁচ স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা সম্বলিত ‘সর্বাধুনিক তৃতীয় প্রজন্মের প্রযুক্তি’ দিয়ে রূপপুরে এই বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ করা হবে জানিয়ে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, এর নিরাপত্তা নিয়ে ‘দুশ্চিন্তার কিছু’ থাকবে না।

আনোয়ার হোসেন বলেন, “রাশিয়ান প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ভিভিইআর টেকনোলজি নিয়ে চুক্তি হয়েছে। তারা রিপোর্ট দিয়েছে। পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি সে মোতাবেক নকশা তৈরি করেছে, ডিপিপি তৈরি করে তারা কাজে নেমে পড়েছে। ০.২ মেগাহার্টজ ফ্রিকোয়েন্সিতে বিদ্যুৎ প্রবাহ করবে ইউনিটগুলো।”

বিশ্বের নানা দেশের উদাহরণ টেনে অনুষ্ঠানে এক প্রকৌশলী প্রশ্ন করেন, বিশ্বের অন্য অনেক দেশ যখন নিউক্লিয়ার প্রযুক্তি থেকে সরে আসছে, তবে কেন বাংলাদেশ সেদিকে যাচ্ছে?

জবাবে আনোয়ার হোসেন বলেন, “আমেরিকা, রাশিয়া ও জাপানে যেসব নিউক্লিয়ার প্রকল্প বন্ধ হয়েছে, সেসবের কারণ প্রকল্প কর্মকর্তাদের জ্ঞানের অভাব। আমরা সে দিকটি খেয়াল রেখেছি। ফুকুসিমা দুর্ঘটনার পর জাপান কিন্তু আবারো সেই নিউক্লিয়ার প্রকল্পে ফিরে গেল। আমাদের এখন বিদ্যুৎ প্রয়োজন। পেট্রোবাংলা বলছে, গ্যাসের মেয়াদও ফুরিয়ে আসছে। ওদিকে কয়লা তুলতে গেলে রক্তারক্তি হয়ে যাচ্ছে।

“পাবলিক অ্যাওয়ার্নেস বাড়াতে রোসাটমের জয়েন্ট কমিউনিকেশন প্লান্ট তৈরি করেছি, চুক্তি হয়েছে তারও আগে। কারও কোনো প্রশ্ন এখনও থেকে থাকলে সেই চুক্তি পড়ুন,” বলেন আনোয়ার হোসেন।

চুক্তি অনুযায়ী, এই কেন্দ্রের তেজস্ক্রিয় বর্জ্য রাশিয়াই ফেরত নিয়ে যাবে। কেন্দ্রের মেয়াদ ৩০ থেকে ৮০ বছর পর্যন্ত হবে বলে জানান সচিব।

২০১৩ সালের জানুয়ারিতে শেখ হাসিনার রাশিয়া সফরের সময় পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কারিগরি গবেষণার জন্য রাশিয়ার কাছ থেকে ৫০ কোটি ডলার ঋণ পাওয়ার একটি চুক্তি হয়। ওই বছরই অক্টোবরে রূপপুরে হয় ভিত্তিস্থাপন।

পরে রুশ সরকারের সহায়তায় বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণে রাশিয়ান ফেডারেশনের প্রতিষ্ঠান অ্যাটমস্ট্রয় এক্সপোর্টের সঙ্গে ২০১৫ সালের ২৫ ডিসেম্বর চুক্তি হয় বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশনের। অ্যাটমস্ট্রয় রোসাটমের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান।

দুই ইউনিট মিলিয়ে এ প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ১২ দশমিক ৬৫ বিলিয়ন ডলার (এক লাখ এক হাজার ২০০ কোটি টাকা)।

মূল পর্বের কাজ বাস্তবায়নে প্রকল্প সহায়তা হিসেবে রাশিয়া ৪ শতাংশ হারে সুদে ৯১ হাজার ৪০ কোটি টাকা বা ১১ দশমিক ৩৮ বিলিয়ন ডলার ঋণ দিচ্ছে।

মন্ত্রী ইয়াফেস ওসমান অনুষ্ঠানে বলেন, “প্রকল্প শুরুর পর উৎপাদনে গেলে ৩০ বছরের মধ্যে আমরা এই টাকা রাশিয়াকে ফেরত দেব।”

এ প্রকল্পটির ব্যয়ে সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে এক হাজার ৫২৭ কোটি ৬৩ লাখ টাকা, ভারতীয় ঋণ থেকে ৮ হাজার ২১৯ কোটি টাকা এবং বাস্তবায়নকারী সংস্থা পাওয়ার গ্রিড কোম্পানির নিজস্ব তহবিল থেকে এক হাজার ২৩৫ কোটি ৬ লাখ টাকা ব্যয় করা হবে।

সরকার আশা করছে, ২০২৩ সালের মাঝামাঝি সময়ে রূপপুরের ৫০ বছর আয়ুর ১২০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার প্রথম ইউনিটের বিদ্যুৎ যোগ হবে জাতীয় গ্রিডে। পরের বছর চালু হবে সমান ক্ষমতার দ্বিতীয় ইউনিট।

গত বছরের ৩০ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রূপপুরে পরমাণু চুল্লির জন্য কংক্রিটের মূল স্থাপনা নির্মাণ উদ্বোধন করেছিলেন। আর গত ১৪ জুলাই কেন্দ্রের দ্বিতীয় ইউনিট নির্মাণে কংক্রিট ঢালাইয়ের কাজ উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। 

‘নিউক্লিয়ার এনার্জি ডেভেলপমেন্ট ইন বাংলাদেশ: অপুরচিউনিটি অ্যান্ড চ্যালেঞ্জেস’ শীর্ষক এই সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পারমাণবিক প্রকৌশল বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মো. শফিকুল ইসলাম।