ন্যূনতম মজুরি: সিপিডির প্রস্তাব ১০ হাজার টাকা

পোশাক শিল্প শ্রমিকদের একটি অংশ যেখানে ১৬ হাজার টাকা ন্যূনতম মজুরির দাবিতে আন্দোলন করছে, বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগ তা ১০ হাজার ২৮ টাকা করার প্রস্তাব সামনে এনেছে।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 5 August 2018, 03:49 PM
Updated : 5 August 2018, 03:52 PM

রোববার রাজধানীতে ‘মিনিমাম ওয়েজ অ্যান্ড লাইভলিহুড কন্ডিশনস অব আরএমজি ওয়ার্কার্স’ শীর্ষক এক সংলাপে  সিপিডির গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম এই প্রস্তাব তুলে ধরেন।

সিপিডির প্রস্তাবে ষষ্ঠ গ্রেডে অ্যাসিসটেন্ট সুইং মেশিং অপারেটর, অ্যাসিসটেন্ট ড্রাই ওয়াশিং ম্যান ও লাইন আয়রন ম্যান পদে কর্মরত একজন শ্রমিকের জন্য ৪০০৬ টাকা মূল বেতনের সঙ্গে ১৬০২ টাকা বাড়িভাড়া, ৮০০ টাকা চিকিৎসা ভাতা, ২০০০ টাকা খাদ্য ভাতা, সন্তানদের ভরন পোষণ ও শিক্ষা ভাতা হিসেবে ৮০০ টাকা এবং ১২০ টাকা সার্ভিস বেনিফিট ধরে মোট ১০ হাজার ২৮ টাকা ন্যূনতম মজুরির কথা বলা হয়েছে।

মোট ৬টি গ্রেডে তৈরি এই প্রস্তাবে গ্রেড-১ এর বেতন উন্মুক্ত রেখেছে সিপিডি। এছাড়া গ্রেড-২ এ ১৫ হাজার ৩৩৮ টাকা, গ্রেড-৩ এ ১৩ হাজার ৩৩৭ টাকা, গ্রেড-৪ এ ১১ হাজার ৮০৩ টাকা এবং গ্রেড-৫ এ ১০ হাজার ৭৩০ টাকা মজুরির সুপারিশ করা হয়েছে।

পোশাক খাতের শ্রমিকদের জন্য ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণে গত ১৪ জানুয়ারি স্থায়ী মজুরি বোর্ডের পুনর্গঠন করে সরকার। গত মাসে মজুরি বোর্ডের সভায় মালিক পক্ষ ৬ হাজার ৩৬০ টাকা এবং মজুরি বোর্ডে শ্রমিক পক্ষের প্রতিনিধি ১২ হাজার ২০ টাকা ন্যূনতম মজুরির প্রস্তাব করে।

বাংলাদেশে পোশাক শিল্প শ্রমিক ফেডারেশন, সম্মিলিত গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশন এবং বাংলাদেশ মেটাল ক্যামিকেল গার্মেন্টস অ্যান্ড টেইলার্স  ওয়ার্কার্স ফেডারেশনসহ বিভিন্ন সংগঠন ওই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে ১৬ হাজার টাকা ন্যূনতম মজুরির দাবিতে অগাস্ট থেকে আন্দোলনের ঘোষণা দিয়ে রেখেছে।

সিপিডির ১০০২৮ টাকা ন্যূনতম মজুরির প্রস্তাবের বিরোধিতা করে গার্মেন্টস শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের সাধারণ সম্পাদক জলি তালুকদার বলেন,  চারজনের পরিবার হিসাব করে দুই বছর আগে তারা ১৬ হাজার টাকা মজুরির যে প্রস্তাব করেছিলেন,  বর্তমান বাজার দরে সেটাও এখন যথেষ্ট নয়।

রাজধানীর ব্র্যাক সেন্টার ইনে সিপিডির সংলাপে এ গবেষণা সংস্থার চেয়ারম্যান ড. রেহমান সোবহান বলেন, বাংলাদেশ একটি পোশাক রপ্তানি করে যে ৫ ডলার আয় করছে তা থেকে শ্রমিকদের মজুরি বাড়ানোর বিষয়ে আলোচনা হচ্ছে। কিন্তু সেটি যারা ২০ ডলারে বিক্রি করে ১৫ ডলার আয় করছে, তাদের বিষয়টি আলোচনায় আসছে না।

“পোশাকটি ওয়ালমার্ট বিক্রি করছে ২০ ডলারে। ১৫ ডলার লাভের অংশে শ্রমিকের পাওনা কতটুকু সেই বিষয়টি কখনোই আলোচনায় আসছে না সেভাবে। আমরাও করিনি, আন্তর্জাতিক মহলও সেটা আলোচনায় আনেনি। বিষয়টি নিয়ে আলোচনার সুযোগ আছে।”

শ্রমিক অধিকার নিয়ে কাজ করা আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো বাংলাদেশের ব্যাপারে দ্বৈতনীতি অনুসরণ করে বলে অভিযোগ করেন শ্রম প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হক চুন্নু।

তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো শ্রমিকদের মজুরি বাড়ানোর কথা বলে, অথচ মূল্য বাড়ানোর কথা বললে এড়িয়ে যায়।

“আপনারা কমপ্লায়েন্সের কথা বলবেন, আবার প্রাইসের কথা আসলে বলেন, প্রাইস হল ক্রেতা বিক্রেতার মধ্যে কমপিটিটিভ বিষয়। তাহলে আপনাদের অধিকার নাই এ বিষয়ে কথা বলার।”

প্রতিমন্ত্রী বলেন, “আইএলওর ডিজির সঙ্গে আমি একাধিকবার কথা বলেছি। আপনারা শ্রমিকদের বেতন বাড়ানোর কথা বলেন। আপনারা এক পেনি বাড়ালে এই পেনিই শ্রমিকরা পাবে, সেটা আমার মালিকরা নিশ্চিত করবে।

“কিন্তু তারা (বিদেশি ক্রেতা) সেটা করে না। তাদের কাছে ব্যবসাটাই মুখ্য। আমার শ্রমিকরা ভালো আছে না খারাপ আছে সেটা তারা মুখে বলে। কিন্তু যখন টাকা লাগবে, মূল্য বৃদ্ধির প্রশ্ন এলে তারা সেটি এড়িয়ে যায়।”   

সম্প্রতি বিশ্ববাজারে তৈরি পোশাকের দাম ও চাহিদা দুটোই কমেছে বলে জানান বিজিএমইএর সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান। এজন্য মজুরি কাঠামোতে `ভারসাম্য ’ রাখার ওপর জোর দেন তিনি।

“আপনার যদি সক্ষমতা না থাকে, তাইলে বেতন যতই বাড়ান, আস্তে আস্তে যদি ইন্ড্রাস্ট্রি বন্ধ হয়ে যায় তাহলে লাভটা কি হবে?”

মজুরি কাঠামো নির্ধারণের প্রক্রিয়ায় বিদেশি ক্রেতাদের অনুপস্থিতির বিষয়ে ইংগিত করে তিনি বলেন, “এখানে মূল স্টেকহোল্ডার বায়ার, তারা এখানে অনুপস্থিত। এখানে শ্রমিক, মালিক, সিভিল সোসাইটি আছি। কিন্তু যারা ১৫ ডলার নিয়ে যাচ্ছে তারা কিন্তু এখানে অনুপস্থিত। আমরাও মনে করি তাদের এর অংশ হওয়া উচিত।”

সিপিডির সম্মনিত ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের সঞ্চালনায় অন্যদের মধ্যে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজের নির্বাহী পরিচালক সৈয়দ সুলতান উদ্দিন আহমেদ, গার্মেন্টস ওয়ার্কার্স ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের সভাপতি মন্টু ঘোষসহ বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনের নেতারা এই সংলাপে উপস্থিত ছিলেন।