ন্যূনতম মজুরি ১৬ হাজার টাকার দাবিতে আন্দোলনের ডাক

মজুরি বোর্ডে জমা হওয়া পোশাক শিল্প শ্রমিকদের জন্য ন্যূনতম মজুরির প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে ১৬ হাজার টাকা করার দাবিতে আন্দোলনের ডাক দিয়েছে বাম দল সমর্থিত শ্রমিক সংগঠনগুলো।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 17 July 2018, 02:02 PM
Updated : 17 July 2018, 02:06 PM

পোশাক শ্রমিকদের জন্য নতুন মজুরি ঘোষণায় গঠিত মজুরি বোর্ডের তৃতীয় সভার একদিন পর মঙ্গলবার ঢাকায় সংবাদ সম্মেলন থেকে আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করেন শ্রমিক নেতারা।

মজুরি বোর্ডের সভায় পোশাক শিল্প শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি ৬ হাজার ৩৬০ টাকা প্রস্তাব করে মালিক পক্ষ। অন্যদিকে মজুরি বোর্ডে শ্রমিক পক্ষের প্রতিনিধি হিসাবে থাকা জাতীয় শ্রমিক লীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদক শামসুন্নাহার ভূঁইয়া ১২ হাজার ২০ টাকা করার প্রস্তাব দেন।

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সমর্থিত শ্রমিক লীগের নেতার ওই প্রস্তাবের বিরোধিতা করেন সিপিবি সমর্থিত গার্মেন্ট শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের নেতা জলি তালুকদার এবং  গণসংহতি আন্দোলন সমর্থিত শ্রমিক সংহতির নেতা তাসলিমা আখতার।

মঙ্গলবার ঢাকার পুরানা পল্টনে সিপিবি ভবনে সংবাদ সম্মেলনে গার্মেন্ট শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের সাধারণ সম্পাদক জলি তালুকদার পোশাক শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি ১৬ হাজার টাকার দাবিতে আগামী ২০ জুলাই জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে মিছিল ও সমাবেশের কর্মসূচি ঘোষণা করেন।

একই দাবিতে আগামী ২১ জুলাই বিকালে শাহবাগে বিক্ষোভ সমাবেশের ডাক দিয়েছে পোশাক শ্রমিকদের ১২টি সংগঠনের জোট গার্মেন্টস শ্রমিক অধিকার আন্দোলন।

এছাড়া ২৫ জুলাই বিকেএমইএ এর সামনে প্রতিকী অনশন, ২৭ জুলাই চট্টগ্রামে প্রতিকী অনশন করবে জোটের সংগঠনগুলো। এছাড়া ২৫ জুলাই থেকে ৫ অগাস্টের মধ্যে বিভিন্ন শ্রমিক এলাকায় বিক্ষোভ সমাবেশ করা হবে।

সংবাদ সম্মেলনে জলি বলেন, “মালিক পক্ষ থেকে যে প্রস্তাব করা হয়েছে তা থেকে স্পষ্ট বোঝা যায় যে, মালিক সরকার মিলে মজুরি বৃদ্ধির নামে প্রহসন মঞ্চস্থ করতে যাচ্ছে।”

১৬ হাজার টাকার পক্ষে যুক্তি দেখিয়ে তিনি বলেন, আইএলও কনভেনশন অনুসারে বর্তমান বাজার দর, মুদ্রাস্ফীতি, আর্থসামাজিক অবস্থা এবং শ্রমিকের জীবনমান বিবেচনায় এর চেয়ে কম মজুরি গ্রহণযোগ্য নয়।

সংবাদ সম্মেলনে গার্মেন্ট শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের কার্যকরি সভাপতি কাজী রুহুল আমিন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন, সাংগঠনিক সম্পাদক কে এম মিন্টু উপস্থিত ছিলেন।

১৬ হাজার টাকা ন্যূনতম মজুরির দাবিতে বিক্ষোভে গার্মেন্ট শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র

তোপখানা রোডে নির্মল সেন অডিটরিয়ামে গার্মেন্টস শ্রমিক অধিকার আন্দোলনের সংবাদ সম্মেলনে জোটের সমন্বয়কারী মাহবুবুর রহমান ইসমাইল বলেন, “কালক্ষেপণ না করে আগামী সেপ্টেম্বরের মধ্যে ১৬ হাজার টাকা মজুরি ঘোষণা করতে হবে। অন্যথায় বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।”

১৪ সেপ্টেম্বর ঢাকায় জাতীয় কনভেনশন করা হবে বলেও জানান তিনি।

সংবাদ সম্মেলনে গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় নেতা ফখরুদ্দীন কবীর আতিক বলেন, “সরকারি লোকসানি প্রতিষ্ঠানগুলোতে শ্রমিকদের মজুরি বাড়িয়ে যদি ১৫ হাজার টাকা হয়, তাহলে রপ্তানিমুখী পোশাক খাতের মজুরি কেন মাত্র ১২ হাজার টাকা প্রস্তাব করা হল? অথচ এই খাতে ১৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি রয়েছে বলে মালিকরা বিভিন্ন সময় তথ্য দিচ্ছেন।”

২০১৩ সালের ১ ডিসেম্বর তিন হাজার টাকা মূল বেতন ধরে পোশাক শ্রমিকদের জন্য ৫ হাজার ৩০০ টাকা ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণ করে সরকার। এরপর এবার মজুরি বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হল। 

বাংলাদেশ গার্মেন্টস শ্রমিক মুক্তি আন্দোলনের উপদেষ্টা শামীম ইমাম বলেন, “কারখানা মালিকরা মজুরি বোর্ডে বেতন বাড়িয়ে ৬৩৬০ টাকা করার যে প্রস্তাব দিয়েছে, তাতেও প্রতারণা রয়েছে। কারণ ২০১৩ সালে নতুন মজুরি ঘোষণার সময় প্রতিবছর ৫ শতাংশ হারে বেতন বাড়ানোর কথা বলা হয়েছিল। সেই প্রবৃদ্ধি চালু রাখা হলেও একজন শ্রমিকের বেতন ৬ হাজার টাকা হয়।”

গার্মেন্ট শ্রমিক নেতা মোশরেফা মিশু বলেন, “সরকার দলীয় শ্রমিক প্রতিনিধি আমাদের কাছে ১৬ হাজার টাকা ন্যূনতম মজুরি ঘোষণা করা হবে বলে কথা দিলেও তিনি তা পারলেন না। তিনি শ্রমিক লীগ নেত্রী ও মালিক পক্ষের মতোই কাজ করলেন। আমরা এই প্রস্তাব বাতিল করুন। অন্যথায় রাজপথে আন্দোলন করতে বাধ্য হব।”

শ্রমিক সংহতির নেতা তাসলিমা আখতার বলেন, “একদিকে দিন দিন পোশাকের দাম বাড়ছে, তেমনি মালিকদের প্রবৃদ্ধিও বাড়ছে ১৬ শতাংশ হারে। কিন্তু বেতন দেওয়ার প্রসঙ্গ আসলে নিজেদের নাই নাই অবস্থার কথা উপস্থাপন করে।”

তিনি ‘নিরপেক্ষ সংস্থা’ দিয়ে পোশাক মালিকদের প্রকৃত সক্ষমতা যাচাই করে শ্রমিকদের মজুরি ঠিক করার দাবি জানান।

এই সংবাদ সম্মেলনে ওএসকে গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক প্রকাশ দত্ত, গার্মেন্টস শ্রমিক মুক্তি আন্দোলনের উপদেষ্টা শামীম ইমাম, বিপ্লবী গার্মেন্টস শ্রমিক সংহতির সভাপতি মীর মোফাজ্জল হোসেন মোশতাক, বিপ্লবী গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি অরবিন্দ ব্যাপারী বিন্দু, গার্মেন্ট শ্রমিক সভার সভাপতি শামসুজ জোহা, গার্মেন্টস শ্রমিক আন্দোলনের কেন্দ্রীয় নেতা বিপ্লব ভট্টাচার্য্য উপস্থিত ছিলেন।