‘অযৌক্তিক’ শর্তে মোবাইল সংযোজন শিল্প টিকবে না: বিএমপিআইএ

প্রস্তাবিত বাজেটের সঙ্গে জারি হওয়া মূল্য সংযোজন কর অব্যাহতি সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনের কয়েকটি শর্ত দেশে মোবাইল হ্যান্ডসেট সংযোজন ও উৎপাদন শিল্পের সঙ্গে সরাসরি সাংঘর্ষিক বলে দাবি করেছে মোবাইল ফোন আমদানিকারকদের সংগঠন বাংলাদেশ মোবাইল ফোন ইম্পোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিএমপিআইএ)।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 9 June 2018, 12:39 PM
Updated : 9 June 2018, 12:39 PM

তারা বলছে, ‘অযৌক্তিক’ এসব শর্তে বিনিয়োগকারীরা বিশাল ক্ষতির সম্মুখীন হবে, মোবাইল সংযোজন শিল্প টিকবে না এবং হাজার হাজার শ্রমিক কর্মসংস্থান হারাবে। এর ফলে ‘মেইড ইন বাংলাদেশ’ স্বপ্ন চিরতরে বন্ধ হয়ে যাবে।

প্রস্তাবিত বাজেট নিয়ে শনিবার ঢাকার স্থানীয় একটি হোটেলে সংবাদ সম্মেলনে এই আশঙ্কার কথা জানায় বিএমপিআইএ।

প্রস্তাবিত বাজেটে মোবাইল ফোন উৎপাদনে সারচার্জ অব্যাহতি দিয়ে ফোনসেট আমদানিতে ২ শতাংশ সারচার্জ আরোপের প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী, যা দেশে মোবাইল ফোন উৎপাদনকে উৎসাহিত হবে বলে মনে করা হচ্ছে।

প্রজ্ঞাপনের শর্তের কথা তুলে ধরে বিএমপিআইএ বলছে, গত বছর প্রজ্ঞাপন জারি করে এ বছরই তার বিপরীত প্রজ্ঞাপন জারি করে অতিরিক্ত ১৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপ করায় পূর্ণাঙ্গ মোবাইল আমদানির খরচের চাইতে স্থানীয়ভাবে সংযোজিত মোবাইলের খরচ বেশি পড়বে।

সংগঠনের সভাপতি রুহুল আলম আল মাহবুব বলেন, “প্রস্তাবিত বাজেটের সঙ্গে জারিকৃত মূল্য সংযোজন কর অব্যাহতি সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন -১৬৮ এর কয়েকটি শর্ত দেশে মোবাইল হ্যান্ডসেট সংযোজন ও উৎপাদন শিল্পের সাথে সরাসরি সাংঘর্ষিক।

“প্রজ্ঞাপনের শর্ত (ক)-তে বলা হয়েছে, “সংযোজন প্রতিষ্ঠান ব্যতীত উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে ইহা প্রযোজ্য হইবে।” এই শর্ত অনুযায়ী শুধু উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান ভ্যাটের আওতামুক্ত থাকবে, সংযোজনকারী প্রতিষ্ঠান  নয়। অথচ গত অর্থ বছরের বাজেটের সময় জারি করা প্রজ্ঞাপনে সংযোজন এবং উৎপাদনকারী উভয় প্রতিষ্ঠানকেই ভ্যাটের আওতামুক্ত রাখা হয়েছিল।”

বিএমপিআইএ সভাপতি বলেন, গত বছরের প্রজ্ঞাপন সুবিধার কারণে স্যামসং, ওয়ালটন, সিম্ফনি, আইটেল, উইয়ের মতো কোম্পানি দ্রুততম সময়ে সংযোজন কারখানা স্থাপন করেছে।

“এই কারখানাগুলোতে শত-শত কোটি টাকা বিনিয়োগ করা হয়েছে এবং কয়েক হাজার লোকের কর্মসংস্থান হয়েছে, যা অর্থনীতিতে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখছে।” 

এবারের প্রজ্ঞাপন হতাশার সৃষ্টি করেছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, মোবাইল প্রস্তুতকারক কোম্পানিগুলোই একটি পূর্ণাঙ্গ মোবাইল ফোন তৈরির জন্য অনেকগুলো সহযোগী শিল্পপ্রতিষ্ঠান থেকে যন্ত্রাংশ সরবরাহ নিয়ে তা সংযোজনের মাধ্যমেই নিজস্ব ব্র্যান্ড-এর মোবাইল উৎপাদন করে থাকে।

“যেখানে বিশ্বের কোনো কোম্পানিই এককভাবে সবগুলো যন্ত্রাংশ প্রস্তুত করে না, সেখানে বাংলাদেশে তা কীভাবে সম্ভব?”

বিএমপিআইএ সভাপতির দাবি, এক বছরের মধ্যে অতিরিক্ত ১৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপ হলে স্থানীয়ভাবে সংযোজিত মোবাইলের খরচ আমদানি করা মোবাইল সেটের চেয়ে বেশি পড়বে। ফলে এই সংযোজনশিল্প টিকিয়ে রাখা সম্ভব হবে না।

প্রজ্ঞাপনের (ঙ) শর্ত অনুযায়ী যেসব যন্ত্রপাতি স্থাপনের কথা বলা হয়েছে, তাও ‘অবাস্তব’ বলে মনে করে বিএমপিআইএ।

মূসক প্রজ্ঞাপনের (চ) শর্ত অনুযায়ী ৩০ শতাংশ মূল্য সংযোজনও ‘বাস্তবসম্মত নয়’ বলে মনে করেন আল মাহবুব।

প্রজ্ঞাপনটিতে ‘বাস্তবসম্মত’ শর্ত অন্তর্ভুক্ত করা এবং সংযোজন শিল্পকে ভ্যাটমুক্ত করার জন্য অর্থমন্ত্রীকে অনুরোধ জানিয়েছে বিএমপিআইএ।

অবৈধভাবে যারা হ্যান্ডসেট আনছে বা অন্য কোনো মহল যদি এ বিষয়ে ষড়যন্ত্র করে থাকে, তাহলে বিষয়টি অনুসন্ধান করার দাবি জানান আল মাহবুব।

সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক জাকারিয়া শহীদ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মেজবাহ উদ্দিন, ট্রানশান বাংলাদেশের সিইও রেজওয়ানুল হকসহ অন্যান্য নেতারা উপস্থিত ছিলেন।