কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দাবি, এর মধ্যে ৮৫ কোটি ডলার বেহাত হওয়া থেকে ঠেকানো গেছে।
শুক্রবার বেলা সাড়ে ৩টায় বাংলাদেশ ব্যাংকের ফেইসবুক পেইজে এক পোস্টে একথা জানানো হয়।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সহকারী মুখপাত্র এ এফ এম আসাদুজ্জামান।
রাতে তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “পেইজটি বাংলাদেশ ব্যাংকেরই। শুক্রবার ছুটির দিন হওয়ায় আমরা বিষয়টি ফেইসবুকের মাধ্যমে সর্বসাধারণকে অবহিত করেছি।”
ফেইসবুকে বাংলাদেশ ব্যাংকের ওই পোস্টে বলা হয়, “সাইবার আক্রমণে ৩৫টি ভুয়া পরিশোধ নির্দেশের ৯৫ কোটি ১০ লাখ মার্কিন ডলারের মধ্যে ৩০টি নির্দেশের ৮৫ কোটি ডলার বেহাত হওয়া শুরুতেই প্রতিহত করা গেছে। অবশিষ্ট ১০ কোটি ১০ লাখ ডলারের মধ্যে দুই কোটি ডলার এরই মধ্যে ফেরত আনা গেছে।
“বাকি ৮ কোটি ১০ লাখ ডলার (প্রায় ৬৩৫ কোটি টাকা) ফেরত আনার প্রয়োজনীয় প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।”
অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার ঘটনা কয়েকদিন আগে বাংলাদেশে প্রকাশ পেলেও গত মাসেই ফিলিপিন্সের ‘দি ফিলিপিন্স ডেইলি ইনকোয়ারার’ চীনা হ্যাকাররা বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে ১০১ কোটি ডলার লোপাট করেছে বলে খবর প্রকাশ করেছিল।
এই অর্থ পাচারের ঘটনাটি এখন বাংলাদেশের সঙ্গে ফিলিপিন্সেও আলোচিত ঘটনা। সেখানেও এর তদন্ত চলছে।
ইনকোয়ারার বলেছে, সুইফট মেসেজিং সিস্টেমের মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংকের অর্থ সরানো হয় ফিলিপিন্স ও শ্রীলঙ্কার ব্যাংকে।
তাদের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশ ব্যাংকের সিস্টেম হ্যাক করে ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউ ইয়র্কের অ্যাকাউন্ট থেকে অর্থ স্থানান্তরের আদেশ দেওয়া হয়। সে অনুযায়ী অর্থ চলে যায় দুই দেশের দুই ব্যাংকে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের ওই পোস্টে আরও বলা হয়, “ভবিষ্যৎ সাইবার আক্রমণের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যপ্রযুক্তি প্ল্যাটফরমে আধুনিকতম প্রতিরোধ ব্যবস্থার সন্নিবেশও দ্রুত অগ্রসর হচ্ছে। এ বিষয়ে কোনোরূপ বিভ্রান্ত না হওয়ার জন্য সর্বসাধারণকে অনুরোধ জানানো যাচ্ছে।”
বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ব্যাংকের দুই কর্মকর্তার বরাত দিয়ে রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে জানানো হয়, একটি বানান ভুল দেখে শ্রীলঙ্কার ব্যাংক কর্মকর্তাদের সন্দেহ, আর তাতেই বাংলাদেশ ব্যাংকের ২ কোটি ডলার লোপাট হওয়া থেকে রক্ষা পেয়েছে।
এই ২ কোটি ডলার যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউ ইয়র্কের বাংলাদেশ ব্যাংকের অ্যাকাউন্ট থেকে হ্যাকাররা সরানোর চেষ্টা করেছিল।
শ্রীলঙ্কায় সফল না হলেও ৮ কোটি ডলার ফিলিপিন্সে সরাতে পেরেছিল হ্যাকাররা। সেই অর্থের একটি অংশ ইতোমধ্যে ব্যাংক চ্যানেলের বাইরে চলে গেছে বলে বাংলাদেশ ব্যাংক কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তাদের উদ্ধৃত করে রয়টার্স বলেছে, শালিকা ফাউন্ডেশন নামে শ্রীলঙ্কার একটি এনজিওর ডয়চে ব্যাংকের অ্যাকাউন্টে পাঠানো হয়েছিল ২ কোটি ডলার।
“কিন্তু অর্ডারে ‘foundation’ এর জায়গায় লেখা হয়েছিল ‘fandation’, তাতে ব্যাংক কর্মকর্তাদের সন্দেহ হয়। তখন এটি অ্যাকাউন্টে স্থানান্তর আটকে দেওয়া হয়। যোগাযোগ করা হয় বাংলাদেশ ব্যাংকে।”
রয়টার্স অনুসন্ধান চালিয়ে দেখেছে, শ্রীলঙ্কার সরকারি তালিকায় শালিকা ফাউন্ডেশন নামে কোনো এনজিওই নেই।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক শুভংকর সাহা বুধবার সাংবাদিকদের বলেন, “শ্রীলঙ্কার ব্যাংকে যে ২০ মিলিয়ন ডলার গিয়েছিল, সে অর্থ আমরা ইতোমধ্যে ফেরত পেয়েছি।”
এরই মধ্যে হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংকের অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার ঘটনায় অর্থমন্ত্রী ও গভর্নরকে দায়ী করে তাদের পদত্যাগ চেয়েছে বিএনপি।
শুক্রবার বিকালে এক সংবাদ সম্মেলনে দলের পক্ষে যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী এ দাবি জানান।
এরপর রাতে অর্থ লোপাটের ঘটনায় গভর্নরের ব্যাখ্যা দাবি করে বিএনপি।
দলটির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এক অনুষ্ঠানে বলেন, “বাংলাদেশ ব্যাংক কিন্তু এখন পর্যন্ত আনুষ্ঠানিকভাবে এ ব্যাপারে কোনো বক্তব্য দেয়নি। এই বিষয়ে কোনো বক্তব্য না দিয়ে গভর্নর ভারতে চলে গেলেন। গভর্নরের কাছে অবশ্যই এই জাতি দাবি করছে, তাদেরকে এ বিষয়ে একটা সঠিক ব্যাখ্যা দিতে হবে।”
ব্যাংকের টাকা চুরির যেসব ঘটনা এ পর্যন্ত বিশ্বে ঘটেছে, তার মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের এ ঘটনাকে ‘অন্যতম বড়’ জালিয়াতির ঘটনা বলা হচ্ছে।