আমন মৌসুমে ইউরিয়া সারের দাম কেজিতে ৬ টাকা বাড়ালেও কৃষকের উৎপাদন ও উৎপাদন খরচে বিরূপ প্রভাব পড়বে না বলে মনে করছেন কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক।
সারের দাম বৃদ্ধি নিয়ে বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘নন ইউরিয়া’ সার (টিএসপি, ডিএপি ও এমওপি) বছরে ব্যবহার হয় ৩২ লাখ টনের বেশি। এর পুরোটাই বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়।
“এসব সারের দাম আন্তর্জাতিক বাজারে ৪ গুণ বেড়েছে, কিন্তু দেশে আমরা দাম বাড়াইনি। কাজেই, ইউরিয়া সারের দাম কেজিতে ৬ টাকা বৃদ্ধির ফলে ফসলের উৎপাদনে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে না। ইউরিয়া সারের সুষম ব্যবহার করলে কৃষকের উৎপাদন খরচও বাড়বে না।”
বিশ্ব বাজারে সারের দাম বৃদ্ধি এবং দেশে অপ্রয়োজনে ব্যবহারের কারণ দেখিয়ে গত ১ অগাস্ট থেকে ইউরিয়া সারের দাম কৃষক পর্যায়ে কেজিতে ১৬ টাকা থেকে বাড়িয়ে ২২ টাকা করা হয়েছে। ডিলার পর্যায়ে ওই দাম বেড়ে ১৪ টাকা থেকে হয়েছে ২০ টাকা।
সারের দাম বৃদ্ধির পর বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর সমালোচনার মধ্যে সরকারের সিদ্ধান্ত নেওয়ার যৌক্তিকতা তুলে ধরতে বৃহস্পতিবার সংবাদ সম্মেলনে আসেন কৃষিমন্ত্রী।
তিনি বলেন, “আমরা লক্ষ্য করছি, সারের দাম বাড়ায় বিএনপি এবং কিছু বাম দল উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। সার নিয়ে বিএনপির উদ্বেগ প্রকাশ তাদের চরম নির্লজ্জতার প্রমাণ বলে আমি মনে করি। বিএনপির শাসনামলে সারসহ কৃষি উপকরণের চরম সংকট ছিল।”
ইউরিয়া সারের ব্যবহার কমিয়ে কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধিতে অন্যান্য সার বাড়ানোর উপর জোর দেন কৃষিমন্ত্রী রাজ্জাক।
তিনি বলেন, “ফসলের জমিতে সুষম সার প্রয়োগ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমরা ইউরিয়া সারের বর্তমান ব্যবহার কমপক্ষে ২০% কমিয়ে ইউরিয়ার ব্যবহার যৌক্তিক পর্যায়ে রাখতে পারি। এতে ফসল উৎপাদনে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে না, বরং উৎপাদন আরও বৃদ্ধি পাবে।”
ইউরিয়ার ব্যবহার কমাতে এবং উৎপাদন বৃদ্ধির স্বার্থে ডিএপি সার দাম ২০১৯ সালে ২৫ টাকা থেকে ১৬ টাকা করার কথা তুলে ধরেন কৃষিমন্ত্রী।
”এ উদ্যোগের ফলে বিগত কয়েক বছরে ডিএপি সারের ব্যবহার দ্বিগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০১৯ সালে ডিএপি ব্যবহার হতো ৮ লাখ টন, বর্তমানে ব্যবহার হচ্ছে ১৬ লাখ টন।”
ডিএপি সারের ব্যবহার বাড়ার ফলে ইউরিয়া সারের ব্যবহার কমার কথা থাকলেও বাস্তবে তা হয়নি জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, “২০১৯ সালে ইউরিয়া ব্যবহার হতো ২৫ লাখ টন, বর্তমানে ব্যবহার হচ্ছে ২৬ লাখ ৫০ হাজার টন। এক্ষেত্রে আমাদেরও ব্যর্থতা আছে। আমরা কৃষকদের সেভাবে বোঝাতে পারিনি।”
দেশে বর্তমানে সারের পর্যাপ্ত মজুদ থাকার কথা তুলে ধরে কোনো ধরনের সংকট হবে না বলেও আশ্বস্ত করেন আব্দুর রাজ্জাক।
তিনি বলেন, আমন মৌসুমে ৬ লাখ ১৯ হাজার টন ইউরিয়ার চাহিদার বিপরীতে ৭ লাখ ২৭ হাজার টন মজুদ আছে। টিএসপি মজুদ আছে ১ লাখ ১৯ হাজার টনের বিপরীতে ৩ লাখ ৯ হাজার টন, ডিএপি ২ লাখ ২৫ হাজার টনের বিপরীতে ৬ লাখ ৩৪ হাজার টন এবং এমওপি ১ লাখ ৩৭ হাজার টনের বিপরীতে ২ লাখ ১০ হাজার টন।