অতিরিক্ত বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও তা আরও বাড়নোর ওপর জোর অব্যাহত রয়েছে বলে সানেমের পর্যবেক্ষণ।
Published : 25 Jun 2024, 09:35 PM
প্রস্তাবিত বাজেটে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের বরাদ্দ মূল্যায়ন করতে গিয়ে সরকারের নতুন এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণ পরিকল্পনার সমালোচনা করেছে গবেষণা প্রতিষ্ঠান সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকনমিক মডেলিং- সানেম।
২০২৪-২৫ অর্থবছরে জ্বালানি ও বিদুৎ খাতের বাজেট বিশ্লেষণ করে গবেষণা প্রতিষ্ঠানটি মঙ্গলবার বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে, যেখানে নতুন এলএনজি টার্মিনাল বানানোর পরিকল্পনার যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে।
নতুন অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকার বাজেট প্রস্তাব করা হয়েছে। এতে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে মোট বাজেটের ৩ দশমিক ৮ শতাংশ বরাদ্দ রাখা হয়েছে, যা ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে ছিল ৪ দশমিক ৬ শতাংশ।
দেশে এখন দুটি এলএনজি টার্মিনালে ১ হাজার ১০০ এমএমসিএফডি গ্যাস সরবরাহের সক্ষমতা রয়েছে। ভবিষ্যৎ জ্বালানি চাহিদা পূরণে আরও এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণের পরিকল্পনা আছে সরকারের হাতে। বাজার অস্থিতিশীল হওয়ায় মাঝে মধ্যে দাম চড়া থাকলে এলএনজি কেনা বন্ধও রাখতে হচ্ছে।
বাজেটের বিভিন্ন পদক্ষেপের সমালোচনা করে সানেমের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, অতিরিক্ত বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও আরও উৎপাদন সক্ষমতা বাড়ানোর ওপর জোর অব্যাহত রয়েছে। বর্তমানে ৯১৪৪ মেগাওয়াট সক্ষমতার ২৭টি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণাধীন। নতুন এলএনজি অবকাঠামো নির্মাণ করাও হবে প্রশ্নবিদ্ধ। কারণ আন্তর্জাতিক বাজারে এলএনজির দাম অস্থিতিশীল থাকে, যা এরই মধ্যে আমাদের অর্থনীতিতে গুরুতর প্রভাব ফেলেছে।
কূপ খননের হালচিত্র তুলে ধরে সানেম বলছে, স্থলভাগে গ্যাস অনুসন্ধান ও উত্তোলনের জন্য জানুয়ারি ২০২৩ থেকে ডিসেম্বর ২০২৫ পর্যন্ত ৪৮টি কূপ খনন করার পরিকল্পনা করেছে বাপেক্স। তবে গত ফেব্রুয়ারি ২০১৪ থেকে দশ বছরে বাপেক্স ৪৯টি কুপ খনন করেছে, যার সঙ্গে এ লক্ষ্যমাত্রা অসামঞ্জস্যপূর্ণ। বাংলাদেশ অফশোর মডেল প্রোডাকশন শেয়ারিং চুক্তি (পিএসসি) ২০২৩ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, যা ৯টি অগভীর এবং ১৫টি গভীর সমুদ্র ব্লকে তেল ও গ্যাস অনুসন্ধানের জন্য আন্তর্জাতিক কোম্পানিগুলোকে নিযুক্ত করার জন্য 'বাংলাদেশ অফশোর বিডিং রাউন্ড ২০২৪' শুরু করেছে।
এগুলো আশাব্যঞ্জক উদ্যোগ হলেও ‘বেশ অনিশ্চয়তা, কালবিলম্ব এবং খরচের বাহুল্য রয়েছে’ মন্তব্য করে সানেম বলছে, এ পরিস্থিতিতে জ্বালানি উৎসগুলোকে বৈচিত্র্যময় করতে হবে এবং নবায়নযোগ্য সম্ভাবনাগুলো অন্বেষণ করতে হবে। কারণ এটি সবচেয়ে নিশ্চিত এবং টেকসই পদ্ধতি।
“জানুয়ারি ২০২৩ থেকে ফেব্রুয়ারি ২০২৪ পর্যন্ত গত এক বছরে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিপিডিবি) চারবার বিদ্যুতের ট্যারিফ হার বৃদ্ধি করেছে, যার মধ্যে তিনবার ৫ শতাংশ এবং শেষবার ৮.৯ শতাংশ হারে।”
বিদ্যুৎ, জ্বালানি এবং গ্যাসের মূল্য সমন্বয়ের সূচনা করা হয়েছিল বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে ভর্তুকি কমানোর জন্য, কিন্তু মার্কিন ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়ন বিদ্যুৎ খাতে ভর্তুকি প্রদানে গুরুতর প্রভাব ফেলেছে বলে গবেষণায় দেখতে পেয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।
বিপিডিবির একটি হিসাবে দেখা গেছে, ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে মার্কিন ডলারের বিপরীতে এক টাকা অবমূল্যায়ন ভর্তুকির পরিমান বাড়িয়ে দিতে পারে ৪৭৩ কোটি টাকা। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়নের ফলে (১০৭.৭ টাকা প্রতি ডলার থেকে ১১৭ টাকা প্রতি ডলার) এ বছর ভর্তুকির বোঝা বেড়ে হতে পারে ৪ হাজার ৪০৪ কোটি টাকা।
সানেম জ্বালানি খাতে বাজেট বরাদ্দ পরিচালনার জন্য এমন একটি কৌশলগত পদ্ধতি গ্রহণের অনুরোধ করেছে, যা নবায়নযোগ্য জ্বালানি প্রকল্পের প্রসার, দেশীয় প্রাকৃতিক গ্যাস অনুসন্ধান, মুদ্রার অবমূল্যায়নের প্রভাব ব্যবস্থাপনা এবং কার্যকর নীতি ব্যবস্থার মাধ্যমে ভর্তুকির বোঝা নিরসনে কাজ করবে।