“দেখা যাক, চেষ্টাতো করতে হবে। এবং আপনারা এটাও লক্ষ্য করেছেন, বাজেটের আকার আমরা অনেক কমিয়ে রেখেছি, যাতে করে কোনো প্রেশার না পড়ে প্রাইসের উপরে।”
Published : 07 Jun 2024, 04:48 PM
মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়ার প্রেক্ষাপটে দেশের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে সংকোচনমূলক নীতি-কৌশল আরো কিছুদিন চালু রাখার কথা বলেছেন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী।
আগামী ছয় মাসের মধ্যেই তার ফল দেখার আশা প্রকাশ করে তিনি বলেছেন, “আমরা আশা করছি, এ বছরের শেষের দিকে (মূল্যস্ফীতি) কমতে শুরু করবে। দেখা যাক, চেষ্টাতো করতে হবে। এবং আপনারা এটাও লক্ষ্য করেছেন, বাজেটের আকার আমরা অনেক কমিয়ে রেখেছি, যাতে করে কোনো প্রেশার না পড়ে প্রাইসের উপরে।”
২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট উপস্থাপনের পরদিন শুক্রবার রেওয়াজ অনুযায়ী ঢাকার ওসমানী মিলনায়নে বাজেট পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে আসেন অর্থমন্ত্রী। সরকারের বিভিন্ন দপ্তরের মন্ত্রী, উপদেষ্টা ও সচিবরাও তার সঙ্গে ছিলেন।
অর্থমন্ত্রী বলেন, “মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ যেহেতু এখন আমাদের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার সেহেতু সংকোচনমূলক নীতি-কৌশল আরও কিছুদিন চলমান থাকবে।”
তবে সংকোচনের নীতির মধ্যে প্রবৃদ্ধির ধারা যাতে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সেদিকে লক্ষ্য রাখার কথাও বলেন অর্থমন্ত্রী।
“আমাদের কৃষি, শিল্প এবং সেবাখাত যেন তাদের স্বাভাবিক কার্যক্রম বজায় রাখতে পারে, সেজন্য প্রয়োজনীয় সব সহায়তা অব্যাহত রাখা হয়েছে। এর ফলে সংকোচনমূলক নীতি অনুসরণ স্বত্বেও চলতি অর্থবছরে ৫.৮২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে। আগামী অর্থবছরে আমরা ৬.৭৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জনে সক্ষম হব।”
বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকার বাজেট উপস্থাপন করেন মাহমুদ আলী। অর্থমন্ত্রী হিসেবে এটাই তার প্রথম বাজেট।
প্রয়োজনীয় ব্যয় নির্বাহের জন্য দেশীয় উৎস থেকে ৫ লাখ ৪১ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব যোগান দেওয়ার পরিকল্পনার কথা বাজেটে বলেছেন মাহমুদ আলী। তাতে ঘাটতি থাকবে ২ লাখ ৫১ হাজার ৬০০ কোটি টাকা, যা জিডিপির ৪.৬ শতাংশের সমান।
রিজার্ভে টান আর বিশ্ববাজারের অস্থিরতাকে সঙ্গী করে সরকার যখন আইএমএফ এর ঋণের শর্ত মেনে ভর্তুকি তুলে নিয়ে ধাপে ধাপে বিদ্যুতের দাম বাড়াচ্ছে, সেই সময়ে গড় মূল্যস্ফীতি ৬ দশমিক ৫ শতাংশের মধ্যে ধরে রাখার লক্ষ্য ঠিক করেছেন অর্থমন্ত্রী।
বিদায়ী ২০২৩-২৪ অর্থবছরে অর্থনীতির অন্যতম প্রধান এই সূচককে ৬ শতাংশে বেঁধে রাখার লক্ষ্য ঘোষণা করেছিলেন আওয়ামী লীগের গত মেয়াদের অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। পরে তা সংশোধন করে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ করা হয়। তবে সেই লক্ষ্যও পূরণ করা যায়নি।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের মে পর্যন্ত সময়ে ১১ মাসের গড় মূল্যস্ফীতি দাঁড়িয়েছে ৯ দশমিক ৭৩ শতাংশে, যা বহু বছরের মধ্যে বেশি। তাতে নিম্নবিত্ত আর মধ্যবিত্তের সংসারে তেল-নুনের হিসাব মেলাতে স্বাভাবিকভাবেই প্রচণ্ড চাপ পড়ছে।
দুই বছরে ধরে গড় মূল্যস্ফীতি ৯ শতাংশের উপরে থাকার প্রেক্ষাপটে অর্থমন্ত্রী নিজের পরিকল্পনায় ঠিক থাকতে পারবেন কি-না, সন্দিহান অর্থনীতিবিদরা।
তবে লক্ষ্য অর্জনে সফল হওয়ার বিষয়ে আশাবাদী অর্থমন্ত্রী মাহমুদ আলী বলছেন, “মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় সকল পদক্ষেপ আমরা নিয়েছি এবং আরও কী কী পদক্ষেপ নেওয়া যায়, তা পর্যালোচনা করছি।
“আমাদের গৃহীত পদক্ষেপের ফলে মূল্যস্ফীতি ৯ শতাংশে রাখা সম্ভব হয়েছে। গতকাল উপস্থাপিত বাজেট বক্তৃতায় মুদ্রানীতি এবং রাজস্ব নীতির আওতায় যেসব পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে তা উল্লেখ করেছি।”
কোভিড-১৯ মহামারীর পর রাশিয়া-ইউক্রেইন যুদ্ধের কারণে মূল্যস্ফীতির প্রেক্ষাপট তুলে ধরে অর্থমন্ত্রী বলেন, “মূল্যস্ফীতি এখনো আমাদের দেশে ৯ শতাংশের ঘরে রয়েছে। বিশ্বের উন্নত দেশগুলো মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে তাদের দেশে সুদের হার বাড়াতে থাকলে আমাদের দেশে ক্যাপিটাল ফ্লো কমে যেতে থাকে। একই সময়ে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের পরিমাণও অনেকাংশে বৃদ্ধি পায়।
“এর ফলে আমাদের চলতি হিসাবের ভারসাম্যে বড় ঘাটতি তৈরি হয়। সব মিলিয়ে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের উপর চাপ বাড়তে থাকে এবং এর ফলে বৈদেশিক মুদ্রার বিপরীতে টাকার উল্লেখযোগ্য ডেপ্রিসিয়েশন ঘটে। আমাদের মূল্যস্ফীতি বেশি হওয়ার এটা একটা প্রধান কারণ।”
২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর দুই বছরের মধ্যে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আনার কথা তুলে ধরে অর্থমন্ত্রী বলেন, “আমি আপনাদের স্মরণ করিয়ে দিতে চাই, আমরা ক্ষমতায় আসার পর মূল্যস্ফীতি উচ্চ পর্যায়ে থাকলেও আমরা কিন্তু তা দুই বছরের মধ্যে নিয়ন্ত্রণে এনেছিলাম।
“এবারও আমরা যেসকল পদক্ষেপ নিয়েছি, তার ফলে আগামীতে মূল্যস্ফীতি কমে আসবে, এটা আমি আপনাদেরকে দৃঢ়ভাবে জানাতে চাই।”
তিনি বলেন, “মূল্যস্ফীতি থেকে সাধারণ মানুষকে সুরক্ষা দিতে ওএমএস এবং ফ্যামিলি কার্ডসহ যে সকল কার্যক্রম চলছে তা চলমান থাকবে এবং প্রয়োজনে এগুলোর পরিসর আরও বাড়াবার বিষয়টি বিবেচনায় নেওয়া হবে।”