“করহার না বাড়িয়ে কেবল খুচরামূল্য বাড়ানোর কারণে তামাক কোম্পানিগুলো লাভবান হবে,” বলেন প্রজ্ঞা’র তামাক নিয়ন্ত্রণ বিষয়ক প্রকল্প প্রধান হাসান শাহরিয়ার।
Published : 13 Jun 2023, 12:35 AM
তামাক পণ্যের নিয়ন্ত্রণে বহুজাতিক কোম্পানি ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো থেকে সরকারের শেয়ার প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন জাতীয় তামাকবিরোধী মঞ্চের আহ্বায়ক কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ।
এই অর্থনীতিবিদ মনে করেন, জনস্বাস্থ্যের জন্য তামাক করকাঠামো সংস্কারের যে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল তা বাজেটে প্রতিফলন না ঘটার পেছনে নীতি নির্ধারণী ব্যক্তিরা জড়িত আছেন।
“আর এ জন্য ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো কোম্পানিতে সরকারের যে শেয়ার আছে, সেটা প্রত্যাহার করা জরুরি হয়ে পড়েছে।”
সোমবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে গবেষণা ও অ্যাডভোকেসি প্রতিষ্ঠান প্রজ্ঞা (প্রগতির জন্য জ্ঞান) এবং অ্যান্টি টোব্যাকো মিডিয়া এলায়েন্স- আত্মা আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ মন্তব্য করেন।
প্রজ্ঞা’র তামাক নিয়ন্ত্রণ বিষয়ক প্রকল্প প্রধান হাসান শাহরিয়ার বলেন, ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট পাস হলে নিত্যপণ্যের তুলনায় তামাক আরেক দফা সস্তাই শুধু হবে না, তামাক ব্যবহারজনিত অসুস্থতা ও মৃত্যু বাড়বে। তামাক কোম্পানি লাভবান হবে এবং সরকার অতিরিক্ত রাজস্ব আয়ের সুযোগ হাতছাড়া করবে।
“চূড়ান্ত বাজেটে সুনির্দিষ্ট সম্পূরক শুল্ক আরোপের মাধ্যমে সব ধরনের তামাক পণ্যের দাম কার্যকরভাবে বৃদ্ধি এখন তামাকবিরোধীদের দাবি।”
সংবাদ সম্মেলনে হাসান শাহরিয়ার বলেন, “প্রস্তাবিত বাজেটে মূল্যস্তর ভেদে দশ শলাকা সিগারেটের খুচরামূল্য ১ দশমিক ৮ শতাংশ থেকে ১২ দশমিক ৫ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। অথচ সরকারি তথ্যমতে একবছরের ব্যবধানে খোলা আটা, ব্রয়লার মুরগি, চিনি, ডিম, গুঁড়ো দুধ এবং মসুর ডালের মত নিত্যপণ্যের দাম বেড়েছে ১৪ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে ৭১ দশমিক ৭ শতাংশ পর্যন্ত।
“ফলে নিত্যপণ্যের তুলনায় তামাকপণ্য আরো সস্তা হয়ে পড়বে, মানুষ তামাক ব্যবহারে উৎসাহিত হবে এবং জনস্বাস্থ্য ক্ষতিগ্রস্ত হবে।”
বিড়ির দাম এবারও না বাড়ায় এ নিয়ে টানা চতুর্থবারের মতো পণ্যটির দাম অপরিবর্তিত রাখা হলো উল্লেখ করে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, প্রতি গ্রাম জর্দার দাম ৫০ পয়সা এবং গুলের দাম ৩০ পয়সা বাড়ানো হলেও সম্পূরক শুল্ক অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে।
হাসান শাহরিয়ার বলেন, “করহার না বাড়িয়ে কেবল খুচরামূল্য বাড়ানোর কারণে তামাক কোম্পানিগুলো লাভবান হবে এবং সরকার অতিরিক্ত রাজস্ব আয়ের সুযোগ হাতছাড়া করবে।
“তামাকবিরোধীদের প্রস্তাব অনুযায়ী নিম্নস্তরের সিগারেটে ৬৫ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক সুনির্দিষ্ট আকারে আরোপ করা হলে সরকার কমপক্ষে ১ হাজার ৭০০ কোটি টাকা অতিরিক্ত রাজস্ব আয় আহরণ করতে পারতো। সম্পূরক শুল্ক ৫৮ শতাংশ নির্ধারণ করায় কোম্পানিগুলো শুধু নিম্নস্তরের সিগারেট থেকেই ৪৮৬ কোটি টাকা বাড়তি আয় করবে।”
সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্রাটেজিক স্টাডিজের (বিআইআইএসএস) রিসার্চ ডিরেক্টর মাহফুজ কবীর বলেন, “নিম্নস্তরের সিগারেটে সম্পূরক শুল্ক বাড়িয়ে ৬৫ শতাংশ করে রাজস্ব আয় বৃদ্ধির সুযোগ রয়েছে। প্রস্তাবিত বাজেটে পেট্রোলিয়ামজাত পণ্যে অ্যাড ভেলোর্যামের পরিবর্তে সুনির্দিষ্ট সম্পূরক শুল্ক আরোপ করা হয়েছে, তামাকপণ্যেও একই কর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হলে অর্থনীতি ও জনস্বাস্থ্য উভয়ই উপকৃত হবে।”
সংবাদ সম্মেলনে চূড়ান্ত বাজেটে অন্তর্ভুক্তির জন্য কয়েকটি প্রস্তাব তুলে ধরা হয়, যার মধ্যে আছে-
>> নিম্নস্তরে প্রতি ১০ শলাকা সিগারেটের খুচরা মূল্য ৫৫ টাকা নির্ধারণ করে ৩৫.৭৫ টাকা সুনির্দিষ্ট সম্পূরক শুল্ক আরোপ, মধ্যম স্তরে ১০ শলাকা সিগারেটের খুচরা মূল্য ৭০ টাকা নির্ধারণ করে ৪৫ দশমিক ৫০ টাকা সুনির্দিষ্ট সম্পূরক শুল্ক আরোপ, উচ্চ স্তরে ১০ শলাকা সিগারেটের খুচরা মূল্য ১২০ টাকা নির্ধারণ করে ৭৮ টাকা সুনির্দিষ্ট সম্পূরক শুল্ক আরোপ এবং প্রিমিয়াম বা অতি উচ্চ স্তরে প্রতি ১০ শলাকা সিগারেটের খুচরা মূল্য প্রস্তাবিত বাজেট অনুযায়ী ১৫০ টাকা বহাল রেখে ৯৭ দশমিক ৫০ টাকা সুনির্দিষ্ট সম্পূরক শুল্ক আরোপ করা।
>> ফিল্টারবিহীন ২৫ শলাকা বিড়ির খুচরা মূল্য ২৫ টাকা নির্ধারণ করে ১১ দশমিক ২৫ টাকা সুনির্দিষ্ট সম্পূরক শুল্ক আরোপ এবং ফিল্টারযুক্ত ২০ শলাকা বিড়ির খুচরা মূল্য ২০ টাকা নির্ধারণ করে ৯ টাকা সুনির্দিষ্ট সম্পূরক শুল্ক আরোপ করা।
>> প্রতি ১০ গ্রাম জর্দার খুচরা মূল্য প্রস্তাবিত বাজেট অনুযায়ী ৪৫ টাকা বহাল রেখে ২৭ টাকা সুনির্দিষ্ট সম্পূরক শুল্ক আরোপ করা এবং প্রতি ১০ গ্রাম গুলের খুচরা মূল্য ২৫ টাকা নির্ধারণ করে ১৫ টাকা সুনির্দিষ্ট সম্পূরক শুল্ক আরোপ করা।
সংবাদ সম্মেলনে প্রজ্ঞার হাসান শাহরিয়ার দাবি করেন, তামাকবিরোধীদের কর ও মূল্য প্রস্তাব বাস্তবায়ন করা হলে ৪ লাখ ৮৮ হাজার প্রাপ্তবয়স্ক এবং ৪ লাখ ৯২ হাজার তরুণ জনগোষ্ঠীর অকালমৃত্যু রোধ করা সম্ভব হবে। পাশাপাশি ৯ হাজার ৬০০ কোটি টাকা অতিরিক্ত রাজস্ব আয় হবে।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের (সিপিডি) রিসার্চ ফেলো সৈয়দ ইউসুফ সাদাত, আত্মা’র কনভেনর মতুর্জা হায়দার লিটন, সিটিএফকে বাংলাদেশের প্রোগ্রাম ম্যানেজার মো. আব্দুস সালাম, প্রজ্ঞা’র নির্বাহী পরিচালক এবিএম জুবায়েরসহ বিভিন্ন তামাকবিরোধী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন আত্মা’র কো-কনভেনর নাদিরা কিরণ।