Published : 20 Aug 2023, 09:46 PM
পরীক্ষা-নিরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর দেশে বিটি তুলার দুটি জাত চাষের জন্য অবমুক্ত করেছে সরকার।
কৃষিমন্ত্রী মো. আব্দুর রাজ্জাক আশা করছেন, এই তুলার আবাদ শুরু হলে দেশে তুলার উৎপাদন এখনকার দুই লাখ বেল থেকে বাড়িয়ে ১৫ লাখ বেলে উন্নীত করা সম্ভব হবে।
বিশ্বে ১৯৯৬ সালে প্রথম বিটি তুলার চাষ করা হয়। প্রতিবেশী দেশ ভারতে ২০০২ সালে বিটি তুলার চাষ শুরু হয়। বাংলাদেশে বায়োসেইফটি গাইডলাইন অনুযায়ী সব গবেষণা কার্যক্রম শেষ করার পর গত ৭ মে ন্যাশনাল কমিটি অন বায়োসেইফটি ভারতের জে কে এগ্রি-জেনেটিক্স লিমিটেডের উদ্ভাবিত দুটি জাতকে চাষাবাদের জন্য অবমুক্ত করার অনুমোদন দেয়। এগুলো হল জে কে সি এইচ ১৯৪৭ বিটি এবং জে কে সি এইচ ১৯৫০ বিটি।
কৃষি মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, রোববার বিকালে রাজধানীর ফার্মগেইটে তুলা উন্নয়ন বোর্ডের (সিডিবি) মিলনায়তনে দেশে প্রথমবারের মত এ দুটি বিটি তুলার জাত আনুষ্ঠানিকভাবে অবমুক্ত করেন কৃষিমন্ত্রী।
তিনি বলেন, দেশে বছরে ৮৫ লাখ বেল তুলা প্রয়োজন হয়, আর উৎপাদন হয় দুই লাখ বেল। চাহিদার কমপক্ষে ২০ শতাংশ বা ১৫ লাখ বেল তুলা দেশে উৎপাদন করার সুযোগ রয়েছে। সে লক্ষ্যে সুনির্দিষ্ট কর্মসূচি নিয়ে কাজ করতে হবে। হাইব্রিড ও বিটি তুলার চাষ করতে পারলে বছরে দেশে ১৫ লাখ বেল তুলা উৎপাদন সম্ভব হবে।
কৃষি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব রবীন্দ্রশ্রী বড়ুয়ার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিএআরসির নির্বাহী চেয়ারম্যান শেখ মো. বখতিয়ার, বিএডিসির চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ সাজ্জাদ, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বাদল চন্দ্র বিশ্বাস, সিডিবির অতিরিক্ত পরিচালক শেফালী রানী মজুমদার বক্তব্য দেন।
সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সিডিবির নির্বাহী পরিচালক ফখরে আলম ইবনে হাবিব। তিনি বলেন, বিপুল পরিমাণ তুলা আমদানিতে বছরে ৩৩ হাজার কোটি টাকা ব্যয় হয়। বিটি তুলা চাষ করে বিশ্বের অনেক দেশ আমদানিকারক দেশ হতে রপ্তানিকারক দেশে পরিণত হয়েছে।
প্রবন্ধে জানান হয়, বিটি তুলার গড় ফলন হেক্টরপ্রতি ৪৫০০ কেজি। বলওয়ার্ম নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে উৎপাদন ব্যয় ১২ শতাংশ থেকে ১৫ শতাংশ কমবে এবং উৎপাদন ১৫ থেকে ২০ শতাংশ বাড়বে। বিটি তুলা চাষে প্রাকৃতিক দূষণ কম ও কৃষকের স্বাস্থ্যঝুঁকি নেই।
বর্তমানে হাইব্রিড তুলা চাষ লাভজনক। দুই বিঘা তুলা চাষে একজন কৃষক এক লাখ টাকারও বেশি আয় করতে পারেন। এছাড়াও, তুলা বীজ বপনের পর প্রথম দেড় মাস স্বল্পকালীন শাক-সবব্জি (যেমন: লাল শাক, ডাটা শাক), মসলা জাতীয় ফসল (যেমন: গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ, ধনেপাতা) এবং ডাল জাতীয় ফসল (যেমন: মুগ, মাসকলাই) আবাদ করে চাষিরা বাড়তি আয় করতে পারেন।
বর্তমানে এক কেজি তুলা উৎপাদনের ফলে তিন ডলার বৈদেশিক মুদ্রার সাশ্রয় হয় এবং প্রতি টন বীজতুলা উৎপাদন ও প্রক্রিয়াজাতকরণে ৫ জন লোকের কর্মসংস্থান হয়।
তুলা থেকে আঁশ ছাড়াও ভোজ্য তেল, খৈল ও জ্বালানি উপজাত হিসেবে পাওয়া যায়। তুলা বীজ থেকে ১৫-২০% ভোজ্য তেল পাওয়া যায়, যা উচ্চ প্রোটিন সমৃদ্ধ ও পুষ্টিকর। তুলা চাষের পর একই জমিতে বোরো ধান, আউশ ধান, ভুট্টা, মুগ, তিল বিভিন্ন এলাকায় লাভজনকভাবে আবাদ করা হচ্ছে বলে মূল প্রবন্ধে জানানো হয়।