বিদায়ী অর্থবছরে সাড়ে ৫ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দেওয়া হয়েছে।
Published : 20 Jun 2024, 07:39 PM
তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস-এলএনজি আমদানিতে ছয় বছরে ভর্তুকি বাবদ ২৬ হাজার ২১৫ কোটি টাকা খরচ হয়েছে বলে সাংসদকে তথ্য দিয়েছেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ।
বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদের প্রশ্নোত্তর পর্বে ঢাকা-৮ আসনের সংসদ সদস্য আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিমের প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেছেন তিনি।
এর আগে স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে প্রশ্নোত্তর টেবিলে উপস্থাপিত হয়।
নসরুল হামিদ বলেন, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে এলএনজি আমদানি শুরু হওয়ার পর থেকে সরকারকে এ খাতে ভর্তুকি দিতে হচ্ছে।
কোন অর্থ বছর কত ভর্তুকি
• ২০১৮-১৯: আড়াই হাজার কোটি টাকা
• ২০১৯-২০: সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকা
• ২০২০-২১: দুই হাজার চারশ কোটি টাকা
• ২০২১-২২: ছয় হাজার কোটি টাকা
• ২০২২-২৩: ছয় হাজার ৩১৫ কোটি টাকা
• ২০২৩-২৪ অর্থবছরে: সাড়ে ৫ হাজার কোটি টাকা
সংসদে প্রতিমন্ত্রীর দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, বিদায়ী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটে বিদ্যুৎ খাতে ভর্তুকির জন্য রাখা হয় ৩৫ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে ৩১ হাজার ৮৩৩ কোটি টাকার ভর্তুকি দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে নগদে দেওয়া হয়েছে ১১ হাজার ৭০০ কোটি টাকা। আর বন্ডের মাধ্যমে সমন্বয় করা হয়েছে ২০ হাজার ১৩৩ কোটি টাকা।
এ অর্থবছরে গ্যাস খাতে সব মিলে ভর্তুকির জন্য প্রয়োজন ৬ হাজার ৫০০ কোটি টাকা।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, ১৯৯৯-২০০০ থেকে ২০১৩-১৪ অর্থবছর পর্যন্ত বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন-বিপিসি ক্রমাগত লোকসানের মুখে ছিল। ওই সময় সরকারকে উল্লেখযোগ্য অঙ্কের ভর্তুকি দিতে হয়।
তবে জ্বালানি তেলের দাম আন্তর্জাতিক বাজারে কমে যাওয়ায় ২০১৪ সালের নভেম্বর থেকে ২০২২-২৩ অর্থবছর পর্যন্ত সরকারকে জ্বালানি তেলে কোনো ভর্তুকি দিতে হয়নি।
অবশ্য ২০২১-২২ অর্থবছরে ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের কারণে সৃষ্ট বৈশ্বিক পরিস্থিতিতে আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম বেড়ে গেলে বিপিসি দুই হাজার ৭০৫ কোটি ৬৪ লাখ টাকা লোকসান দেয়।
সরকার বর্তমানে ‘ডায়নামিক প্রাইসিং ফর্মুলায়’ জ্বালানি তেলের মূল্য নির্ধারণ করছে জানিয়ে নসরুল হামিদ বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে দেশে জ্বালানি তেলের মূল্য সমন্বয় করায় এ খাতে কোনো ভর্তুকি দিতে হচ্ছে না।
নোয়াখালী-২ আসনের মোরশেদ আলমের প্রশ্নের জবাবে প্রতিমন্ত্রী বলেন, অনুমোদিত এলপিজি প্ল্যান্টের সংখ্যা এখন ৭৮টি। এর মধ্যে প্রাথমিক অনুমোদন দেওয়া হয়েছে ৫২টি, চূড়ান্ত করা হয়েছে ২৪টি এবং বিপিসির সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ রয়েছে দুটি প্ল্যান্ট।
মামুনুর রশীদ কিরণের প্রশ্নের জবাবে নসরুল হামিদ বলেন, ছয়টি বিদ্যুৎ বিতরণকারী সংস্থা বা কোম্পানির মোট গ্রাহক ৪ কোটি ৭১ লাখ।
‘ভুতুড়ে বিদ্যুৎ বিলে’র অভিযোগ নিয়ে এক প্রশ্নে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘কারিগরি ও অ-কারিগরি’ কারণে অনেক সময় ভুতুড়ে বা অস্বাভাবিক বিলের ঘটনা ঘটতে পারে। এটি রোধ করতে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে প্রি-পেইড, স্মার্ট প্রি-পেইড মিটার বসানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য মোহাম্মদ হুছামুদ্দীন চৌধুরীর এক প্রশ্নের জবাবে নসরুল হামিদ বলেন, দেশজুড়ে তীব্র তাপদাহের কারণে বিদ্যুৎ ব্যবহার বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে করে গ্রামাঞ্চলে কিছু কিছু এলাকায় চাহিদার তুলনায় প্রাপ্তি কম হয়েছে এবং সীমিত আকারে লোডশেডিং হয়েছে। রক্ষণাবেক্ষণ কাজেও প্রয়োজনীয় সময়ের জন্য লোডশেডিং করা হয়।
সরকার শহর ও গ্রাম নির্বিশেষে সমতার ভিত্তিতে বিদ্যুৎ সরবরাহে সচেষ্ট রয়েছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, সেচ মৌসুমে গ্রামাঞ্চলে বিদ্যুৎ সরবরাহে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে।
স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য মো. সোহরাব উদ্দিনের প্রশ্নের উত্তরে নসরুল হামিদ বলেন, “২০০৯ সালের জানুয়ারি থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত ২৫ হাজার ৭৯৬ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হয়েছে। ফলে বিদ্যুতের স্থাপিত ক্ষমতা ক্যাপটিভ ও নবায়নযোগ্য জ্বালানিসহ ৩০ হাজার ৭৩৮ মেগাওয়াটে উন্নীত হয়েছে। দেশে চাহিদার চেয়েও স্থাপিত বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা বেশি।
“তবে কোভিড-১৯ মহামারীর পর ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ ও বৈশ্বিক জ্বালানি সংকটের কারণে পরিপূর্ণ সক্ষমতায় বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভব হচ্ছে না। এর ফলে বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও কিছু কিছু স্থানে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহে সাময়িক অসুবিধা হচ্ছে।”
বর্তমানে নবায়নযোগ্য উৎস থেকে ১৩১২ দশমিক ৭৬ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদিত হচ্ছে তথ্য দিয়ে আমাতুল কিবরিয়া কেয়া চৌধুরীর প্রশ্নের জবাবে প্রতিমন্ত্রী বলেন, চলমান ও প্রক্রিয়াধীন নবায়নযোগ্য উৎসের প্রকল্পগুলো থেকে বিদ্যুতের পরিমাণ সামনে দাঁড়াবে ১২ হাজার ৫৪৭ দশমিক ২২ মেগাওয়াট। ২০৩০ সালের মধ্যে এ বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হবে।
জ্বালানি গ্যাসের পরিস্থিতি সম্পর্কে সংসদ সদস্য মুহাম্মদ সাইফুল ইসলামের প্রশ্নের জবাবে খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী বলেন, ২০২৫ সালের মধ্যে ৫০টি বিভিন্ন ধরনের কূপ খননের কার্যক্রম নেওয়া হয়েছে। এর সফল বাস্তবায়নে গড়ে দৈনিক ৬১৮ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস জাতীয় গ্রিডে যুক্ত করা সম্ভব হবে। এর মধ্যে ১১টির খনন ও ওয়াকওভার কার্যক্রম শেষ হয়েছে। যার মাধ্যমে দৈনিক ১২৬ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের উৎপাদন নিশ্চিত করা হয়েছে। দৈনিক ৩৩ মিলিয়ন ঘনফুট হারে গ্যাস জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হচ্ছে।
আওয়ামী লীগের সদস্য এম আবদুল লতিফ জানতে চান, পরিকল্পিত শিল্পাঞ্চলে গ্যাস সংযোগের হাল কী।
জবাবে নসরুল হামিদ বলেন, বর্তমানে দৈনিক গ্যাসের চাহিদা প্রায় ৩৮০০-৪০০০ মিলিয়ন ঘনফুট, যার বিপরীতে দেশীয় উৎপাদন ও এলএনজি আমদানি করে ৩০০০-৩১০০ এমএমসিএফডি গ্যাস সরবরাহ করা হচ্ছে। চাহিদা ও সরবরাহে ঘাটতি থাকায় পরিকল্পিত শিল্পাঞ্চলে এবং বিদ্যুৎ ও সার খাতে অগ্রাধিকার বিবেচনায় গ্যাস সংযোগ চালু রয়েছে।