ডলার সংকট না হলে রামপালে ‘উৎপাদন থামবে না’

৫৫ হাজার টন কয়লা নিয়ে আরেকটি জাহাজের রামপালের জেটিতে ভেড়ার কথা রয়েছে।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 16 Feb 2023, 07:05 PM
Updated : 16 Feb 2023, 07:05 PM

বাগেরহাটের রামপাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রটি উৎপাদনে ফেরার পর কর্তৃপক্ষ বলছে, ডলার সংকটের কারণে কয়লা আমদানি ব্যাহত না হলে উৎপাদন অব্যাহত থাকবে।

কয়লা সংকটে এক মাস বন্ধ থাকার পর গত বুধবার পুনরায় উৎপাদন শুরু করে রামপাল তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রথম ইউনিট।

পরদিন বৃহস্পতিবার কেন্দ্রটি দেখতে যাওয়া একদল সাংবাদিকদের কাছে কেবল কয়লা সংকটকে উৎপাদনের প্রধান অন্তরায় হিসেবে চিহ্নিত করেন নির্মাণাধীন বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির প্রকল্প পরিচালক সুভাস চন্দ্র পান্ডিয়া।

তিনি বলেন, “এখন পাইপলাইনে যে কয়লা রয়েছে সেটি দিয়ে কেন্দ্রটির একটি ইউনিট আগামী মার্চ এপ্রিল পর্যন্ত চালানো সম্ভব। এর মধ্যে এলসি জটিলতা না কাটলে কয়লা আমদানি ব্যাহত হবে। ফলে কেন্দ্রটি চালু রাখা সম্ভব হবে না।”

বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি এক মাস বন্ধ থাকার বিষয়ে সুভাস পান্ডে বলেন, ডলার সংকটে এলসি খোলা যায়নি বলে কয়লার অভাবে উৎপাদন বন্ধ রাখতে হয়েছিল। এখন কয়লার সরবরাহ হওয়ায় কেন্দ্রটি চালু করা হয়েছে।

বুধবার রাত ১১টা ৩ মিনিটে পুনরায় উৎপাদন শুরু হয় রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রে। বৃহস্পতিবার দুপুরে কেন্দ্রটি থেকে প্রায় ৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ করা হয়।

বাংলাদেশ-ভারতের যৌথ বিনিয়োগে ১৩২০ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতা সম্পন্ন দুই ইউনিটের বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি বাগেরহাটের রামপালে পশুর নদীর ধারে। বাংলাদেশ-ইন্ডিয়া ফ্রেন্ডশিপ পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেডের (বিআইএফপিসিএল) নামে এটি পরিচালিত হচ্ছে।

বাংলাদেশ-ইন্ডিয়া ফ্রেন্ডশিপ পাওয়ার কম্পানি লিমিটেডের (বিআইএফপিসিএল) উপমহাব্যবস্থাপক আনোয়ারুল আজিম জানান, গত ৯ ফেব্রুয়ারি একটি কয়লাবাহী জাহাজ ৩০ হাজার মেট্রিক টন কয়লা নিয়ে বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জেটিতে ভিড়েছে। আগামী ১৮ ফেব্রুয়ারি ৫৫ হাজার মেট্রিক টন কয়লা নিয়ে আরেকটি জাহাজ এসে পৌঁছানোর কথা রয়েছে।

Also Read: ছয় দিনের কয়লার মজুদ নিয়ে ফের উৎপাদনে রামপাল

২০১৭ সালের ২৪ এপ্রিল আনুষ্ঠানিক নির্মাণকাজ শুরুর পর ২০২২ সালের ১৫ আগস্ট বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির প্রথম ইউনিট পরীক্ষামূলক উৎপাদন শুরু করে। গত ১৭ ডিসেম্বর রাত থেকে জাতীয় গ্রিডে কেন্দ্রটি থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু হয়।

এলসি জটিলতায় কয়লা আমদানি ব্যহত হওয়ায় গত ১৪ জানুয়ারি সকাল ৯টার দিকে বিদ্যুৎকেন্দ্রটির উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়। কেন্দ্রটিতে কয়লা মজুদের সক্ষমতা রয়েছে তিন মাসের। নিয়ম অনুযায়ী এক মাসের কয়লা মজুদ রাখার বাধ্যবাধকতা থাকলেও উৎপাদন বন্ধ হওয়ার আগে কেন্দ্রটিতে কয়লার কোনো মজুদ ছিল না।

কয়লা খালাসে জেটির সক্ষমতা নিয়ে এক প্রশ্নের উত্তরে প্রকল্প পরিচালক বলেন, জেটির সক্ষমতা নিয়ে কোনো সমস্যা নেই। তিনটি জেটি থেকে দৈনিক আনলোড করার সক্ষমতা রয়েছে ১২ হাজার টন, কিন্তু একটি ইউনিটে কয়লার প্রয়োজন হচ্ছে চার থেকে সাড়ে চার হাজার টন। জুনে দ্বিতীয় ইউনিট চালু হলে দুই ইউনিটে দৈনিক কয়লার প্রয়োজন হবে ৯ হাজার টন। সে হিসাবে প্রয়োজনের চেয়ে কয়লা আনলোড করার সক্ষমতা বেশি।

সুভাস পান্ডে জানান, আন্তর্জাতিক বাজারে কয়লার দাম বেড়ে যাওয়ায় বিদ্যুৎ কেন্দ্রটিতে বর্তমানে বিদ্যুৎ উৎপাদন খরচ পড়ছে প্রতি ইউনিট ১৩ থেকে ১৪ টাকা। তবে সামনে বিশ্ববাজারে কয়লার দাম কমে এলে উৎপাদন খরচও কমে আসবে।

বিদ্যুৎ কেন্দ্রের সামগ্রিক কাজের অগ্রগতির বিষয়ে প্রকল্প পরিচালক বলেন, সামগ্রিক কাজের অগ্রগতি ৮৩ শতাংশ। একটি ইউনিট তো উৎপাদনে রয়েছে। দ্বিতীয় ইউনিটে উৎপাদন আগামী জুনে শুরু করার পরিকল্পনা রয়েছে।

৯১৫ একর জমির উপর বাস্তবায়নাধীন প্রকল্প এলাকা ঘুরে দেখা যায়, ভৌত অবকাঠামোগত অনেক উন্নয়ন কাজই বাকি।

কেন্দ্রের বিভিন্ন প্রান্তে চলাচলের উপযোগী রাস্তা তৈরি করা হয়নি। সীমানা প্রাচীরের পাশ ঘেঁষে অবস্থিত ভূমি উন্নয়ন ও প্রস্তুতির কাজ এখনও বাকি। যে ইউনিটটি থেকে বর্তমানে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হয়েছে, তার আশপাশেও অসংখ্য অর্ধনির্মিত অবকাঠামো।

বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির একটি বাষ্প সঞ্চালন লাইন বারবার ফেটে যাচ্ছে বলে এক সাংবাদিক প্রশ্ন করলে প্রকল্প পরিচালক বলেন, সেই সমস্যাটির সমাধান হয়েছে।