কখনো গালে হাত দিয়ে উদাস ভঙ্গিতে বক্তব্য শুনতে দেখা যায় আব্দুর রউফ তালুকদারকে; কখনো সামান্য উপরের দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখা যায় নিবিষ্ট মনে।
Published : 07 Jun 2024, 09:23 PM
বাংলাদেশ ব্যাংকে সাংবাদিকদের প্রবেশাধিকার নিয়ে গভর্নরের সঙ্গে তাদের টানাপড়েন অর্থমন্ত্রীর বাজেটোত্তর সংবাদ সম্মেলন পর্যন্ত গড়াল।
২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট উপস্থাপনের পরদিন শুক্রবার অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী রেওয়াজ অনুযায়ী ওসমানী মিলনায়তনে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন। সরকারের বিভিন্ন দপ্তরের মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীর পাশাপাশি গভর্নর ও এনবিআর চেয়ারম্যানও ছিলেন সংবাদ সম্মেলনে।
কিন্তু প্রশ্নোত্তর পর্বের শুরুতেই গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদারকে বর্জনের ঘোষণা দিয়ে বসেন সাংবাদিকরা। এরপর পুরো অনুষ্ঠানে বাজেট, খেলাপি ঋণ, মুদ্রা বিনিময় হারে টাকার মান পড়ে যাওয়া, ব্যাংক ঋণ, অর্থপাচার ঠেকাতে ব্যর্থতা, আমদানি নিয়ন্ত্রণ ও রিজার্ভ সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী ও প্রতিমন্ত্রী ওয়াসিকা আয়শা খান। পৌনে দুই ঘণ্টার সংবাদ সম্মেলনে গভর্নর ছিলেন নিশ্চুপ।
বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকার বাজেট উপস্থাপন করেন অর্থমন্ত্রী।
‘টেকসই উন্নয়নের পরিক্রমায় স্মার্ট বাংলাদেশের স্বপ্নযাত্রা’ শিরোনামের এ বাজেটে মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছে ৬ দশমিক ৭৫ শতাংশ এবং মূল্যস্ফীতি আগামী বছরের জুনের মধ্যে সাড়ে ছয় শতাংশে নামিয়ে আনার লক্ষ্য ঠিক করা হয়েছে।
শুক্রবার সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পড়া শেষ করে অর্থমন্ত্রী প্রশ্নোত্তর পর্বে যান। শুরুতেই অর্থনীতি বিষয়ক সাংবাদিকদের সংগঠন ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরামের (ইআরএফ) সভাপতি মোহাম্মদ রেফায়েত উল্লাহ মীরধা অর্থমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
তিনি বলেন, “বাংলাদেশ ব্যাংকে সাংবাদিকদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন গভর্নর। সে জন্য সিদ্ধান্ত নিয়েছি, আমরা কেউ তার বক্তব্য শুনব না। তিনি যেন কোনো বক্তব্য না দেন, সে বিষয়ে আপনার দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর বক্তব্য দিলে আমরা তা বয়কট করব।”
অর্থমন্ত্রী এ সময় গভর্নরের দিকে তাকালে আব্দুর রউফ তালুকদার ইশারায় জানিয়ে দেন, তিনি কথা বলবেন না।
এরপর পুরো সংবাদ সম্মেলনে ‘চুপ’ করে ছিলেন গভর্নর। কখনো গালে হাত দিয়ে তাকে উদাস ভঙ্গিতে বক্তব্য শুনতে দেখা যায়। কখনো সামান্য উপরের দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখা যায় নিবিষ্ট মনে।
গত কয়েক বছর ধরে বাজেটোত্তর সংবাদ সম্মেলনে মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রীদের সারিতে পাশাপাশি বসছেন মন্ত্রণালয়ের সচিবরা। আগে দ্বিতীয় সারি বা খানিকটা দূরে ডানে ও বামে পৃথক টেবিলে তাদের বসার ব্যবস্থা হত। বাজেট সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয়ে স্পষ্টীকরণ, ব্যাখ্যা ও তথ্য দিয়ে তারা সহযোগিতা করেন মন্ত্রীদের।
এবারের সংবাদ সম্মেলনে অর্থমন্ত্রীর আহ্বানে বাজেট বিষয়ে বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন প্রধানমন্ত্রীর অর্থ বিষয়ক উপদেষ্টা মসিউর রহমান, পরিকল্পনা মন্ত্রী আব্দুস সালাম, স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী তাজুল ইসলাম, শিল্প মন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুন, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রী র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী, কৃষিমন্ত্রী আব্দুস শহীদ, শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, বাণিজ্য প্রতি মন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু, মন্ত্রিপরিষদ সচিব মাহবুব হোসেন ও অর্থ বিভাগের সচিব খায়েরুজ্জামান মজুমদার ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম।
অতীতে এই সংবাদ সম্মেলনে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে মুদ্রানীতির উদ্যোগ, সরকারের অর্থায়নে ব্যাংক ঋণের যোগান দেওয়া, রিজার্ভ বাড়ানো, খেলাপি ঋণ কমিয়ে আনা ও অর্থ পাচারের মত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তর দিতে দেখা গেছে গভর্নরকে। তবে সাবেক অর্থ সচিব আব্দুর রউফ তালুকদারের সামনে এবার সে সুযোগ আসেনি।
গত দুই মাস ধরে বাংলাদেশ ব্যাংকে সাংবাদিক প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দিয়ে রেখেছেন গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার। এর প্রতিবাদে বাংলাদেশ ব্যাংকের সব ধরনের সংবাদ সম্মেলন বর্জন করে আসছেন সাংবাদিকরা।