পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, “সুশীল সমাজের আলোচনায় সুশাসন ও গণতন্ত্রের চাহিদা থাকলেও গ্রামের দরিদ্র মানুষের চাহিদা রাস্তা, স্বাস্থ্য সেবা এবং বিদ্যুতের মতো চাহিদা।”
Published : 07 Dec 2023, 09:19 PM
যথাযথ উন্নয়ন নিশ্চিত করতে হলে আগে দেশে ন্যায়বিচার এবং মত প্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে হবে বলে মনে করেন যুক্তরাজ্যের অলস্টার ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক এস আর ওসমানী।
জনগণের স্বাধীনতা নিশ্চিত করার পরই আসবে অবকাঠামোগত উন্নয়ন বলে মন্তব্য করেন তিনি।
বৃহস্পতিবার ঢাকার লেকশোর হোটেলে সরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান (বিআইডিএস) আয়োজিত বার্ষিক সম্মেলনের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনকালে এসব কথা বলেন যুক্তরাজ্য প্রবাসী এই অধ্যাপক।
বার্ষিক এ সম্মেলন চলবে তিন দিন। এবারের সম্মেলনের বিষয়বস্তু ‘উন্নয়ন, ন্যায্যতা ও স্বাধীনতা’। অনুষ্ঠানে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান, প্রধানমন্ত্রীর সাবেক অর্থনৈতিক বিষয়ক উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমান বক্তব্য দেন।
ন্যায় বিচারের সংজ্ঞা দিতে গিয়ে অধ্যাপক ওসমানী বলেন, “ন্যায় বিচার মানে দেশের উন্নয়নের সব ক্ষেত্রে সমাজের সকল শ্রেণি পেশার মানুষের অংশগ্রহণ থাকবে। অর্থাৎ সাম্যের ভিত্তিতে উন্নয়ন করতে হবে। যেখানে সকল সমাজের মূল স্রোতের মানুষ এবং আদিবাসীসহ সমাজের উঁচু নিঁচু, পিছিয়ে পড়া মানুষসহ সব শ্রেণি পেশার মানুষের অংশগ্রহণ থাকবে।”
যে উন্নয়ন সবার জন্য সমান সুযোগ সৃষ্টি করবে সেটাই মৌলিক উন্নয়ন, মনে করেন তিনি।
তার মতে, শুধু জনগণের ভোটে জনপ্রতিনিধি নির্বাচনই গণতন্ত্র নয়। সত্যিকারের গণতন্ত্রের মধ্যে ‘ফ্রিডম অব এক্সপ্রেশন’ থাকতে হবে।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান বলেন, “সুশীল সমাজের আলোচনায় সুশাসন ও গণতন্ত্রের চাহিদা থাকলেও গ্রামের দরিদ্র মানুষের চাহিদা রাস্তা, স্বাস্থ্য সেবা এবং বিদ্যুতের মতো চাহিদা।”
তিনি বলেন, “দীর্ঘদিন একটি সরকার ক্ষমতায় থাকলে উন্নয়ন ত্বরান্বিত হয়। রাজনৈতিক স্থিতিশীলতাও বজায় রাখতে হয়।”
মান্নানের দাবি, বর্তমান সরকার দীর্ঘদিন ক্ষমতা আছে বলেই দেশের উন্নয়ন সম্ভব হয়েছে। আশ্রয়ন প্রকল্পের মাধ্যমে আশ্রয়হীনরা আশ্রয় পেয়েছে। এরপর ভূমিহীনরা আশ্রয় পেয়েছে।
তিনি বলেন, “আমাদের প্রধানমন্ত্রীর বার্তা গ্রামের দিকে। ভূমিহীন, নারী ও শিশুর দিকে। লাইফ ইস প্রোডাক্ট ফ্রিডম ইস বাই প্রোডাক্ট।”
সেমিনারে মূল প্রবন্ধে স্বাধীনতাকে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ হিসেবে উল্লেখ করে অধ্যাপক ওসমানী বলেন, “দেশের সকল সমাজে সকল স্তরে মত প্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে হবে। বাক স্বাধীনতা থাকলে কোনো সমাজে কী সমস্যা তা তারা তুলে ধরতে পারেন। এবং সেই অনুযায়ী পদক্ষেপ নেওয়া সম্ভব হয়।”
চীনে বাক স্বাধীনতা (ফ্রিডম অব স্পিচ) না থাকার কারণে কোভিড-১৯ এর একদম শুরুর দিকে উদ্যোগ নেওয়া সম্ভব হয়নি বলে মনে করেন অধ্যাপক ওসমানী।
তিনি বলেন, “অনেক ক্ষেত্রেই বলা হচ্ছে যে, চীনে ফ্রিডম অব এক্সপ্রেশন থাকলে কোভিড-১৯ এতটা ছড়াতে পারত না। কারণ চীনের মানুষের বাক স্বাধীনতা না থাকায় বিষয়টি প্রথমেই তারা তুলে ধরতে পারেননি। মানুষ ভয়ে বিষয়টি গোপন রেখেছে। এজন্যই কোভিড-১৯ এত ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে।”
মূল প্রবন্ধে যুক্তরাজ্য প্রবাসী এই অধ্যাপকের মতে, দেশের সম্পদ যদি অসাম্যের ভিত্তিতে বন্টন হয় তখন সমাজে ভারসাম্যহীনতার সৃষ্টি হয়। এরমধ্যে সার্বজনীনভাবে শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতেই সবচেয়ে বেশি সম্পদ বরাদ্দ করতে হবে। উন্নয়নের পথে একটা জাতি গঠনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে এ দুটি বিষয়।
তিনি বলেন, সম্পদ বন্টনের ক্ষেত্রে এরপরে রাখতে হবে লিঙ্গ ভিত্তিক বন্টন। যেমন আমাদের মতো দেশে নারীরা শ্রম শক্তির বাইরে থাকলে পুরোমাত্রার উৎপাদন করা সম্ভব হবে না। তাই নারীকে শ্রম শক্তির শক্তিশালী পর্যায়ে রাখতে লিঙ্গভিত্তিক সম্পদ বন্টন নিশ্চিত করতে হবে। এরপর অগ্রাধিকার ভিত্তিতে স্বাস্থ্য খাতে বিশেষ করে শিশু পুষ্টির উন্নয়নে কাজ করতে হবে।
দীর্ঘদিন একটি সরকার ক্ষমতায় থাকলে তা উন্নয়নে ইতিবাচক প্রভাব রাখে উল্লেখ করে পরিকল্পনামন্ত্রী মান্নান বলেন, “সিঙ্গাপুরের লি-কুয়ান একটি জেলেপাড়াকে পৃথিবীর সবচেয়ে উন্নত দেশে পরিণত করেছেন। মাহাথির মুহাম্মদ দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থেকে মালয়েশিয়ার ব্যাপক উন্নয়ন করেছেন।
“আমাদের সরকারের প্রধান লক্ষ্য হচ্ছে দারিদ্র্য দূরীকরণ। গ্রামের মানুষের স্বাস্থ্য রক্ষায় বিশুদ্ধ পানির যোগান দেওয়া। আমরা দেশে গ্রামে গ্রামে লক্ষ্য লক্ষ্য টিউবওয়েল গেড়েছি।”
বিআইডিএস মহাপরিচালক বিনায়ক সেন বলেন, গণতন্ত্র না থাকলে দেশের মানুষের মন পাথর হয়ে যায়। আমাদের বর্তমান বাস্তবতায় আমাদের উন্নয়ন, ন্যায় বিচার এবং স্বাধীনতা তিনটি বিষয়ের সমন্বয়ে দেশ এগিয়ে নিতে হবে।