পরীক্ষামূলক এই প্রকল্প প্রথমে নির্বাচিত ১০ উপজেলার ১৫টি গ্রামে বাস্তবায়ন করা হবে। পর্যায়ক্রমে তা সারা দেশে ছড়িয়ে দেওয়া হবে।
Published : 18 Jul 2023, 08:29 PM
সকল সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করে বাংলাদেশের গ্রামকে শহরে রূপান্তরের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে ‘আমার গ্রাম-আমার শহর: পাইলট গ্রাম উন্নয়ন’ প্রকল্পে সায় দিয়েছে সরকার।
মঙ্গলবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় ৮০০ কোটি টাকার এ প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয় বলে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান জানিয়েছেন।
পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, “বৈঠকে প্রকল্পটি অনুমোদনের সময় প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, এই প্রকল্পটি পাইলট ভিত্তিতে বাস্তবায়ন করা হবে। প্রকল্পটির মাধ্যমে গ্রামীণ আবাসিক এলাকা তৈরি করা হবে। এখানে পানি সরবরাহ, জ্বালানি, পয়ঃনিষ্কাশন এবং পরিকল্পিত নগরের মত করে নির্মাণ করা হবে।
“সরকারি সংশ্লিষ্ট সকল কর্তৃপক্ষে সমন্বয়ে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করতে হবে। তবে পরের প্রকল্পগুলো এই নামে হবে না। এই প্রকল্পের মাধ্যমে গ্রামের নাগরিকদের শহুরে সুবিধা কীভাবে দেওয়া হবে তার একটি মডেল স্থাপন করা হবে। অন্য প্রকল্পগুলোতে ওই মডেল অনুসরণ করা হবে।”
২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগের ইশতেহারে শহরের সকল সুবিধা গ্রামে গ্রামে পৌঁছে দেওয়ার নিশ্চয়তা দেওয়া হয়। ওই নির্বাচনে জয়ী হয়ে টানা তৃতীয়বারের মত সরকারে আসে আওয়ামী লীগ।
এরপর দেশের গ্রামগুলোতে টেকসইভাবে আধুনিক নগর সুবিধা সম্প্রসারণের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ে ২০২১ সালে একটি কারিগরি সহায়তা প্রকল্প নেওয়া হয়। সেই প্রকল্পের আওতায়, স্থানীয় সরকার বিভাগ আটটি সমীক্ষা করে।
সেজন্য আট বিভাগের আট ইউনিয়ন এবং বিশেষ এলাকা হিসেবে হাওর, পাহাড় ও চরাঞ্চল থেকে সাতটি ইউনিয়ন বাছাই করা হয়। টানা দুই বছর নিবিড় সমীক্ষার পর প্রকল্প প্রস্তাব চূড়ান্ত করা হয়।
পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, পাইলট প্রকল্পের জন্য যোগাযোগ অবকাঠামোতে দেশের সবচেয়ে পিছিয়ে থাকা গ্রাম, বিশেষ করে হাওড় বা পানি বেষ্টিত এবং পাহাড়ঘেরা দুর্গম গ্রামগুলোকে বাছাই করা হয়েছে।
“মূলত এটি একটি মাস্টারপ্ল্যানের অংশ। এই মাস্টারপ্ল্যান বাস্তবায়নের জন্য এই প্রকল্পটি একটি মডেল হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে।”
স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে নেওয়া এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করবে এলজিইডি এবং জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর। পাইলট প্রকল্পের মেয়াদ ধরা হয়েছে ২০২৬ সালের জুন পর্যন্ত।
প্রকল্প প্রস্তাবে বলা হয়, বর্তমান সরকারের অন্যতম নির্বাচনী অঙ্গীকার ছিল ‘আমার গ্রাম- আমার শহর’। প্রতিটি গ্রামে আধুনিক নাগরিক সুবিধা সম্প্রসারণ করে সরকারের এই নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের মাধ্যমে পরিকল্পিতভাবে ২০৪১ সালে উন্নত বাংলাদেশ গড়ার প্রস্তুতি হিসেবে এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে।
পরীক্ষামূলক এই প্রকল্প প্রথমে নির্বাচিত ১০ উপজেলার ১৫টি গ্রামে বাস্তবায়ন করা হবে। এসব গ্রাম সংশ্লিষ্ট ১৫টি ইউনিয়ন পরিষদের রাজস্ব আহরণ, গ্রাম সহায়ক নীতি কাঠামো প্রয়োগ, স্বেচ্ছাসেবার অন্তর্ভুক্তি, ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে নগর পরিষেবা প্রদানের সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সেবা এসব গ্রামে সম্প্রসারণ করা হবে।
কর্মকর্তারা বলছেন, ২০৪১ সালের মধ্যে গ্রামবাসীদের একটি উন্নত জীবন দেওয়ার মেগা পরিকল্পনার সূচনা হবে এই পাইলট প্রকল্পের মাধ্যমে।
নির্বাচিত ১৫টি গ্রামে শহরের মত নাগরিক সুবিধা, পাইপের মাধ্যমে পানি সরবরাহ, বাড়ির ইউনিট এবং কমিউনিটি স্পেস দিয়ে সজ্জিত করা হবে।
প্রস্তাবে বলা হয়েছে, ১১০ কোটি টাকা ব্যয়ে ৬১৬টি আবাসন ইউনিট নির্মাণ করা হবে। গ্রাম প্রতিরক্ষা বাঁধ, খাল, এবং পুকুর নির্মাণের কথাও আছে পরিকল্পনায়।
সেতু ও কালভার্ট নির্মাণের পাশাপাশি পাইলট গ্রামের রাস্তার উন্নয়ন করা হবে। এসব কাজের জন্য মোট ১৮১ কোটি টাকা প্রস্তাব করা হয়েছে।
এছাড়া অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডকে আরও গতিশীল করতে এসব গ্রামে ২৩টি হাট বাজার, গ্রোথ সেন্টার এবং কৃষিপণ্য সংগ্রহ কেন্দ্র নির্মাণ করা হবে।
বিশুদ্ধ পানির জন্য পাইপযুক্ত পানি সরবরাহ, মিনি পাইপযুক্ত পানি সরবরাহ এবং সাবমারসিবল-টিউবওয়েল স্থাপন করা হবে। একই সঙ্গে রিং ওয়েলস, রেইন ওয়াটার হার্ভেস্টিং সিস্টেম, ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট ও পুকুর খনন করা হবে। পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থার উন্নয়ন করা হবে।
পরিকল্পনা মন্ত্রী বলেন, বৈঠকে ১৮ হাজার ১০ কোটি টাকা ব্যয়ে মোট ১৫টি উন্নয়ন প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে ১২ হাজার ১৯২ কোটি টাকা, প্রকল্প ঋণ সহায়তা খাত থেকে ৫ হাজার ২৩৩ কোটি টাকা এবং সংস্থার নিজস্ব তহবিল থেকে প্রায় ৫৮৫ কোটি টাকার অর্থায়ন করা হবে।
অনুমোদন পাওয়া অন্য প্রকল্পগুলো হল–
>> বড়পুকুরিয়া-বগুড়া-কালিয়াকৈর ৪০০ কেভি লাইন দ্বিতীয় সংশোধিত প্রকল্প: ব্যয় বাড়ছে ৫ হাজার ৭৫৩ কোটি ৬১ লাখ টাকা।
>> বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ফিল্ম সিটি (২য় পর্যায়) প্রকল্প: ব্যয় প্রায় ৩৮০ কোটি টাকা।
>> সিলেট মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (এসএমইউ) স্থাপন প্রকল্প: ব্যয় ২ হাজার ৩৬ কোটি টাকা।
>> জিনাই, ঘাঘট, বংশী এবং নাগদা নদীর প্রবাহ পুনরুদ্ধারের জন্য শুষ্ক মৌসুমে নদীর প্রবাহ নিশ্চিতকরণ, নৌ-পথের উন্নয়ন ও বন্যা ব্যবস্থাপনা প্রকল্প: ব্যয় ৪ হাজার ১৬৮ কোটি টাকা।
>> উলিপুর (হেলিপ্যাড মোড়)-চিলমারি (গুনাইগাছ) সংযোগ সড়ক নির্মাণ প্রকল্প: ব্যয় ৬৮ কোটি টাকা।
>> বেসরকারি ভবনসমূহের রেজিলিয়েন্সির (স্থিতিস্থাপকতা/সহনশীলতা) জন্য ডিজাইন এবং নির্মাণ এর গুণগত মান বৃদ্ধিকরণ প্রকল্প: ব্যয় ৭০ কোটি ৫৮ লাখ টাকা।
>> পার্বত্য চট্টগ্রামে সমন্বিত ও টেকসই পৌর পানি সরবরাহ ও স্যানিটেশন প্রকল্প: ব্যয় ১ হাজার ১৯৬ কোটি টাকা।
>> বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের জন্য রেকর্ড ভবন নির্মাণ প্রকল্প: ব্যয় ২৭৯ কোটি ৪১ লাখ টাকা।
>> বরিশাল, ভোলা, ঝালকাঠি ও পিরোজপুর জেলা সেচ উন্নয়ন প্রকল্প: ব্যয় প্রায় ৩৪৯ কোটি টাকা।
>> ডাবল লিফটিং পদ্ধতিতে পদ্মা নদীর পানি বরেন্দ্র এলাকায় সরবরাহ ও সেচ সম্প্রসারণ প্রকল্প: ব্যয় ৫৪৮ কোটি টাকা।
>> টিস্যু কালচার ল্যাবরেটরি কাম হর্টিকালচার সেন্টার স্থাপন ও উন্নয়ন প্রকল্প: ব্যয় প্রায় ৩৯৯ কোটি টাকা।
>> ভূমি পুনরুদ্ধারের লক্ষ্যে উড়িরচর-নোয়াখালী ক্রস ড্যাম নির্মাণ প্রকল্প: ব্যয় প্রায় ৫৮৯ কোটি টাকা।
>> চট্টগ্রাম জেলার সন্দ্বীপ উপজেলার পোল্ডার নং-৭২ এর ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধের স্থায়ী পুনর্বাসনসহ ঢাল সংরক্ষণ প্রকল্প: ব্যয় ৫৬২ কোটি টাকা।
>> দেশের বিভিন্ন কৌশলগত স্থানে নতুন খাদ্য গুদাম ও আনুষঙ্গিক সুবিধাদি নির্মাণ প্রকল্প: ব্যয় ৮১৪ কোটি ৫০ লাখ টাকা।