বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, চার ডেপুটি গভর্নর, বিএফআইইউয়ের প্রধান ও পলিসি এডভাইজারকে অপসারণ চাইছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা।
Published : 07 Aug 2024, 04:18 PM
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, চার ডেপুটি গভর্নর, বিএফআইইউয়ের প্রধান ও পলিসি এডভাইজারকে অপসারণের জন্য আপাতত অন্তর্বর্তী সরকারে সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় থাকবেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আন্দোলনরত কর্মকর্তারা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মেজবাউল হক বুধবার এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হলে জরুরি ভিত্তিতে এসব দাবি সরকারের কাছে উপস্থাপন করা হবে।
গণ আন্দোলনে রাষ্ট্র ক্ষমতায় পালাবদলের পর মঙ্গলবার থেকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকেও অস্থিরতা শুরু হয়। গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার এবং চার ডেপুটি গভর্নরের পদত্যাগের দাবিতে বুধবার সকালে বিক্ষোভ শুরু করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা।
তাদের এই আন্দোলনে মতিঝিলের বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান কার্যালয় স্লোগানে বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে ওঠে।
এক পর্যায়ে বিক্ষোভকারীদের রোষানলে পদত্যাগপত্র দিতে বাধ্য হন ডেপুটি গভর্নর কাজী ছাইদুর রহমান। বিক্ষোভকারীদের শান্ত করতে তিনি সবার সামনে একটি কাগজে সই করেন। সেটি তিনি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রথম নির্বাহী পরিচালকের কাছে জমা দেন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রায় সব বিভাগের কর্মকর্তারা এ বিক্ষোভে অংশ নেন। তাদের ভাষ্য, বাংলাদেশ ব্যাংক একটি স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান। কিন্তু কেন্দ্রীয় ব্যাংক নানা ‘অপকর্মে’ জড়িয়ে গেছে। ডেপুটি গভর্নররা কোনো কাজ ‘সঠিকভাবে’ করতে পারেন না। আর্থিক কেলেঙ্কারির ঘটনাগুলোতে তারা সঠিক পদক্ষেপ নেননি।
বিক্ষোভকারীরা বলেন, দেশ থেকে অনেক টাকা পাচার হয়েছে, কিন্তু বিএফআইইউর প্রধান মাসুদ বিশ্বাস তা ঠেকাতে সঠিক পদক্ষেপ নিতে পারেননি। টাকা পাচার ও আর্থিক অনিয়মে এরা সবাই দায়ী।
একজন কর্মকর্তা বলেন, “এসব কর্মকর্তার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক নিজের মত কাজ করতে পারছে না। কারণ এরা নানা রকম অনৈতিক কাজের সাথে জড়িয়ে গেছে।”
বিক্ষোভকারীরা ডেপুটি গভর্নর নুরুন নাহারের কক্ষে গিয়ে বিক্ষোভ দেখালে তিনি বলেন, তিনি অফিস কক্ষ চেড়ে চলে যাবেন। ডেপুটি গভর্নর মো. খুরশীদ আলম ও মো. হাবিবুর রহমানকেও তারা পদত্যাগ করতে বলেন। গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার এ সময় বাংলাদেশ ব্যাংকে ছিলেন না।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক জাকির হোসেন চৌধুরী আন্দোলনকারীদের শান্ত থাকার অনুরোধ করেন। অন্তর্বর্তী সরকারের দেওয়া নির্দেশনা মেনে চলতে বলেন। আলোচনা সাপেক্ষে কার্যকর ব্যবস্থ্যা নেওয়ার আশ্বাস দেন।
এক পর্যায়ে পরবর্তী করণীয় ঠিক করতে বৈঠকে বসেন আন্দোলনরত কর্মকর্তারা। সেখান থেকে বেরিয়েই ব্রিফিংয়ে আসেন মুখপাত্র মেজবাউল হক।
তিনি বলেন, “বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা অসন্তোষ থেকে প্রশাসনের কাছে ব্যাংক অর্ডারসহ সব অনিয়মের সংস্কারের দাবি জানিয়েছেন। একইসঙ্গে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগপ্রাপ্ত ডেপুটি গভর্নর, অ্যাডভাইজার ও বিএফআইইউয়ের প্রধানের পদত্যাগ দাবি করেছেন কর্মকর্তারা।"
দুর্নীতিবাজরা অনেকে ব্যাংক থেকে টাকা তুলে নিচ্ছে, তাদের ঠেকাতে বিএফআইইউ তাদের অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ করবে কিনা, সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে মুখপাত্র বলেন, “বিএফআইইউ বাংলাদেশ ব্যাংকের অধীন কোনো প্রতিষ্ঠান নয়। ফলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক তাদের কোনো নির্দেশ দিতে পারে না।”
সংবাদ সম্মেলনে বিএফআইইউর কর্মকর্তাদের কেন ডাকা হয়নি, সে বিষয়েও সংবাদ সম্মেলনে প্রশ্ন করেন সাংবাদিকরা।
মুখপাত্র বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পূর্ণ স্বায়ত্তশাষণ, অযাচিত রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ, ব্যাংক খাতে দুর্নীতি এবং ব্যাংক অর্ডারসহ সব ধরনের আইন সংশোধনের দাবি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।