“আমি বিশ্বাস করি না, বাংলাদেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি কখনো শ্রীলঙ্কার মত হতে পারে”, বলেন সিপিডির চেয়ারম্যান।
Published : 09 Oct 2023, 10:20 PM
রিজার্ভের পতন ঠেকাতে বিলাসদ্রব্য আমদানি নিয়ন্ত্রণের ওপর জোর দিয়েছেন খ্যাতনামা অর্থনীতিবিদ রেহমান সোবহান। উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেছেন, এই মুহূর্তে বিএমডব্লিউ গাড়ি না কি সার-ডিম আমদানি করা হবে, সেই সিদ্ধান্ত নেওয়া জরুরি।
বর্তমান রিজার্ভ আরও কমে গেলে তা বিপদ ডেকে আনতে পারে। যদি তা ১০ বিলিয়ন ডলারের নিচে নেমে যায় তাহলে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) মতো আন্তর্জাতিক সংস্থার ঋণ পাওয়া নাও যেতে পারে বলে সোমবার সতর্ক করে দেন গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফল পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) চেয়ারম্যান।
তবে অর্থনীতিতে সংকট থাকলেও বাংলাদেশের পরিস্থিতি শ্রীলঙ্কার মতো বিপর্যয়কর হওয়ার শঙ্কা দেখছেন না রেহমান সোহবান।
খোলামেলা এই আলোচনায় উঠে আসে অর্থনীতির বিভিন্ন সমস্যা ও সমাধানের উপায়। ব্যাংকিং চ্যানেলে প্রবাসী আয় কমলেও খোলা বাজারে বা হুন্ডিতে বাড়ছে জানিয়ে এক কারণ অনুসন্ধানেও জোর দিয়েছেন বিশিষ্ট এই অর্থনীতিক।
সোমবার রাজধানীর পল্টনে অর্থনীতিবিষয়ক সাংবাদিকদের সংগঠন ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম-ইআরএফের আয়োজনে ‘অধ্যাপক রেহমান সোবহানের সঙ্গে সংলাপে’ এসব কথা বলেন তিনি।
ডলার সংকটের সময়ে দরকারি পণ্যের আমদানিও কমে গেলেও প্রশাসনিক কাঠামোগত দুর্বলতার কারণে ‘বিলাস পণ্য’ আমদানি ঠেকানো যায়নি বলে মত প্রকাশ করেন রেহমান সোবহান। তিনি বলেন, “নীতি র্নিধারকদের এই মুহূর্তে সিদ্ধান্ত নিতে হবে বিএমডব্লিউ গাড়ি আমদানি করা হবে না-কি জ্বালানি, সারসহ ডিম আমদানি করবে।”
রিজার্ভ ১০ বিলিয়নে নামলে বিপদ
সিপিডি চেয়ারম্যান বলেন, বাংলাদেশের রিজার্ভ কমতে কমতে ২৪ বিলিয়ন ডলারে নেমেছিল। এখন বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে সেটা আছে ১৮ বিলিয়ন ডলারে। রিজার্ভ যদি ১০ বিলিয়ন ডলারও হয়, তবে নীতি-নির্ধারকদের রিজার্ভ বাঁচাতে আমদানি নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।
রিজার্ভ ১০ বিলিয়নে নামলে তা বাংলাদেশের অর্থনীতিতে বিপদ ডেকে আনতে পারে, এমন পর্যবেক্ষণ দিয়ে তিনি বলেন, “তখন আইএমএফ এর মত আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো সহায়তা পাওয়া যাবে না।”
শ্রীলঙ্কার মতো পরিস্থিতির শঙ্কা নেই
বাংলাদেশের অর্থনীতি চাপে থাকলেও শ্রীলঙ্কার মতো বিপর্যয়ের আশঙ্কা দেখছেন না রেহমান সোহবান।
তিনি বলেন, “আমাদের বড় একটি রপ্তানি খাত আছে। সেই সঙ্গে আছে রেমিটেন্স বা প্রবাসী আয়, যা শ্রীলঙ্কার চেয়ে অনেক বেশি।…আমি বিশ্বাস করি না, বাংলাদেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি কখনো শ্রীলঙ্কার মত হতে পারে।”
বৈদেশিক ঋণ ব্যবস্থাপনায় বাংলাদেশ ‘ভালো করছে’ মত দিয়ে সিপিডি চেয়ারম্যান বলেন, “বাংলাদেশ সবসময় বৈদেশিক ঋণ পরিশোধের ব্যাপারে তৎপর ছিল।”
প্রবাসী আয় কমার কারণ ‘হুন্ডি’
ব্যাংকিং চ্যানেলে বৈদেশিক মুদ্রার সরবরাহ কমে গেলেও বা হুন্ডিতে তা বাড়ছে জানিয়ে এর কারণ অনুসন্ধানেরও তাগিদ দেন এই অর্থনীতিক।
রেমিট্যান্স কমে যাওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, “এর মানে এই নয় যে- প্রবাসী আয় বাস্তবে কমে গেছে। আনুষ্ঠানিক পথে না এসে অনানুষ্ঠানিক বা হুন্ডিতে আসছে।
“প্রবাসীদের পরিবার টাকা ঠিকই টাকা পেয়ে যাচ্ছে। শুধু বৈদেশিক মুদ্রা দেশে আসছে না-যা অর্থপাচারকারীদের জন্য সুবিধা বয়ে আনছে।”
ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণের উচ্চ হার নিয়েও কথা বলেন রেহমান সোবহান। তিনি বলেন, “বাংলাদেশের আর্থিক খাতের সংস্কৃতি পরিবর্তন হয়ে যাচ্ছে। ঋণ নেওয়ার পর তা ফেরত না দেওয়া নিয়মে পরিণত হচ্ছে। বড় বড় ব্যবসায়ীরা নয়, রাজনীতিবিদ হিসেবে পরিচয় দিয়ে তারা এটি করছেন।”
আয় বৈষম্য বেড়ে যাওয়া ও বৈদেশিক ঋণ ব্যবস্থাপনা নিয়েও নিজের পর্যবেক্ষন তুলে ধরে সিপিডি চেয়ারম্যান বলেন, “পাকিস্তান আমলে আমি লিখেছিলাম ‘এক দেশ দুই অর্থনীতি’। এখন দেশে অর্থনৈতিক উন্নতি হলেও এর সুফল সবাই সমহারে পাচ্ছে না। এ ধরনের আয় বৈষম্য বজায় রেখে টেকসই উন্নয়ন সম্ভব নয়।”
আয়োজক সংগঠন ইআরএফের সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেমের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে উদ্বোধনী বক্তব্য দেন সংগঠনের সভাপতি রেফায়েত উল্লাহ মীরধা।