নতুন সংশোধনীতে আরও ছাড় দেওয়া যেমন হয়েছে, তেমনি বেশ কিছু ক্ষেত্রে কড়াকড়িও করা হয়েছে।
Published : 04 Aug 2022, 12:07 AM
ব্যাপক ছাড় দিয়ে খেলাপি ঋণ পুনঃতফসিল নীতিমালায় আমূল পরিবর্তনের ১৬ দিনের মাথায় আবারও সংশোধন আনা হয়েছে; যাতে ব্যাংকারদের ক্ষমতা বাড়ানোর পাশাপাশি মন্দ মানে ঋণ শ্রেণিকরণ এবং পুনঃতফসিল করা ঋণের সুদ আয় হিসেবে দেখানোর শর্ত কঠোর করা হয়েছে।
বুধবার সংশোধিত সার্কুলার সব ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীদের কাছে পাঠিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
নতুন সার্কুলারে দুটি অনুচ্ছেদ পুরোপুরি বাতিল করে নতুন সংযোজন করা হয়েছে এবং কয়েকটির শর্ত পরিবর্তন ও সংযোজন করে ছাড় দেওয়া হয়েছে।
এর আগে নতুন গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার দায়িত্ব নেওয়ার এক সপ্তাহের মধ্যে খেলাপি ঋণ কমাতে ঋণ পুনঃতফসিলে বড় ধরনের ছাড় দিয়ে গত ১৮ জুলাই নিদের্শনা দেওয়া হয়; যেটিকে এ বিষয়ক ‘মাস্টার সার্কুলার’ বলছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
ঋণ খেলাপিদের অনেক ছাড় দেওয়া নিয়ে তখন সমালোচনা করেন সাবেক ব্যাংকার ও অর্থনীতিবিদরা। সেই সার্কুলারে ১৬ দিনের মধ্যে আবার বেশ কিছু পরিবর্তন এল এবার।
আগের নির্দেশনায় ঋণ পুনঃতফসিলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এখতিয়ারের বদলে তা শুধু ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ ও নির্বাহী কমিটিকে ক্ষমতা দেওয়া ছিল। এবার সেই সিদ্ধান্ত বদলে সেই ক্ষমতা ব্যাংকারদের দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
একইসঙ্গে ঋণ পুনঃতফসিলে গ্রহীতার আর্থিক প্রতিবেদন নিরীক্ষিত হওয়ার বাধ্যবাধকতা তুলে দিয়ে শিথিল করা হয়েছে।
এছাড়া ‘বিশেষ বিবেচনা’র পরিবর্তে ‘গ্রাহকের নিয়ন্ত্রণ বহির্ভূত কারণে শিল্প/ব্যবসা ক্ষতিগ্রস্ত হলে’ই শুধু চতুর্থবার ঋণ পুনঃতফসিল করা যাবে বলে নতুন সংযোজন আনা হয়েছে সাকুর্লারে।
সংশোধনীতে পরিদর্শনের পর কোনো ঋণ পুনঃতফসিলের বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নেওয়া সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত বলে বিবেচনা কথা বলা হয়েছে।
এতে বলা হয়, “পরিদর্শনের সময়ে বাণিজ্যিক ব্যাংক কর্তৃক খেলাপি ঋণ পুনঃতফসিল সংক্রান্ত শর্ত পারিপালন যাচাই-বাছাই শেষে ঋণটিকে যেকোনো শ্রেণিমানে রাখতে পারবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।“
আগের নির্দেশনায় পুনঃতফসিলের পর ব্যাংক চাইলে যেকোনো শ্রেণিমানে রাখতে পারে ঋণটিকে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতিমালা অনুযায়ী, ঋণ শ্রেণিকরণ করা হলে বিভিন্ন হারে
প্রভিশন সংরক্ষণ করতে হয়। এতে মুনাফা কমে যায় ব্যাংকের। আর ঋণ পুনঃতফসিল করা হলে এর বিপরীতে রাখা ব্যাংকের প্রভিশনের অর্থ মুনাফার খাতায় চলে যায়। এতে ব্যাংকের আয় বাড়ায় অনেকে পুনঃতফসিলে আগ্রহী হয়ে থাকেন।
নতুন সার্কুলারে একই সঙ্গে ছয় মাস অনাদায়ী থাকলে ওই ঋণ সরাসরি মন্দ মানে শ্রেণিকরণ করতে হবে।
তাছাড়া প্রকৃত আদায় ছাড়া পুনঃতফসিল করা ঋণের সুদ আয় দেখাতে পারবে না ব্যাংক বলে আগের শর্ত কিছুটা কঠোর করা হয়েছে।
উল্লেখযোগ্য পরিবর্তনগুলো
>> মাস্টার সার্কুলারের ৬(৩) অনুচ্ছেদে উল্লেখ ছিল, ঋণ পুনর্গঠন সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত পরিচালনা পর্ষদ/নির্বাহী কমিটি কর্তৃক অনুমোদিত হতে হবে। নতুন সংশোধনীতে অনুচ্ছেদটি বাতিল করা হয়েছে।
>> ফলে এখন থেকে ঋণ মঞ্জুরকারী কর্মকর্তার এক ধাপ উপরের কর্মকর্তাই ঋণটি পুনঃতফসিল ও পুনর্গঠন করতে পারবেন।
>> আগের সার্কুলারে প্রথম ও দ্বিতীয়বার ঋণ পুনঃতফসিল ও পুনগর্ঠনের ক্ষমতা ব্যাংকের পরিচালক পর্ষদ ও নির্বাহী কমিটিকে দেওয়া হয়েছিল। আর তৃতীয় ও চতুর্থবারের বেলায় শুধু পর্ষদের অনুমোদনের প্রয়োজন ছিল।
>> নতুন সিদ্ধান্তে প্রথম ও দ্বিতীয় বার পুনঃতফসিল বা পুনর্গঠন করতে ঋণ অনুমোদনকারী ব্যাংক কর্মকর্তার এক ধাপ উপরের কর্মকর্তাকে ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে।
তবে কৃষি, কটেজ, মাইক্রো ও ক্ষুদ্র ঋণ ব্যতিরেকে অন্য সব খেলাপি ঋণ তৃতীয় ও চতুর্থ বার পুনঃতফসিল/পুনর্গঠন করতে ব্যাংকের পর্ষদের অনুমোদন নিতে বলার নির্দেশনাটি বহাল রাখা হয়েছে।
>> আগের নীতিমালায় ৩(৬) অনুচ্ছেদে নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদনের বাধ্যবাধকতা থাকার বিষয়টি তুলে দিয়ে প্রয়োজ্য ক্ষেত্রে বলা হয়েছে।
>> আগের সার্কুলারের ৩(৮) অনুচ্ছেদে ঋণ পুনঃতফসিলে গ্রাহকের পাওনা পরিশোধে সক্ষমতার বিষয়ে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের ‘নিশ্চিত’ হওয়ার শর্তের বদলে ‘যৌক্তিক মর্মে প্রতীয় মান’ কথাগুলো যুক্ত করা হয়েছে।
>> মাস্টার সার্কুলারের ৮ ও ৯ অনুচ্ছেদটি পুরোপুরি বাতিল করে নতুন করে প্রতিস্থাপন করা হয়েছে।
>> নতুন সংযোজনীতে অনুচ্ছেদ ৮(১) এ বলা হয়েছে, “ব্যাংক নিজস্ব বিবেচনায় পুনঃতফসিলকৃত ঋণকে যেকোনো বিরূপ শ্রেণিমান বিবেচনায় প্রয়োজনীয় প্রভিশন সংরক্ষণ করতে পারবে।“
>> সংশোধনীতে ৮(৩) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘‘পুনঃতফসিলিকরণ ঋণ পরবর্তীতে আসল এবং সুদ মাসিক/ত্রৈমাসিক ভিত্তিতে সম কিস্তিতে আদায়যোগ্য হবে। ছয়টি মাসিক অথবা দুইটি ত্রৈমাসিক কিস্তি অনাদায়ী হলে পুনঃতফসিলকৃত ঋণ সরাসরি মন্দ/ক্ষতিজনক মানে শ্রেণিকরণ করতে হবে।’’