চট্টগ্রামে চিনির বাজারে গুদাম পোড়ার আঁচ

খাতুনগঞ্জ-চাক্তাইয়ের ব্যবসায়ীরা বলছেন, মঙ্গলবার পাইকারিতে বস্তাপ্রতি চিনির দাম ৭০ থেকে ৮০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 5 March 2024, 06:06 PM
Updated : 5 March 2024, 06:06 PM

এস আলম গ্রুপ আশ্বস্ত করার চেষ্টা করলেও তাদের গুদাম পুড়ে যাওয়ার জেরে চট্টগ্রামের পাইকারি বাজারে চিনির দাম বেড়েছে, এক দিনের ব্যবধানে এর প্রভাব পড়েছে খুচরা বাজারেও।

দেশের অন্যতম বড় পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জ-চাক্তাইয়ের ব্যবসায়ীরা বলছেন, মঙ্গলবার বস্তাপ্রতি চিনির দাম ৭০ থেকে ৮০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে।

যদিও দেশের অন্যতম বৃহৎ চিনি আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান এস আলম গ্রুপের দাবি, তাদের পরিশোধন মিলের গুদাম আগুনে পুড়ে যাওয়ায় চিনির বাজারে তেমন ‘প্রভাব পড়বে না’। দাম যেটুকু বেড়েছে সেটা ব্যবসায়ীদের ‘কারসাজি’, পরিস্থিতি ‘দুয়েক দিনের মধ্যে’ স্বাভাবিক হয়ে যাবে।

মঙ্গলবার দুপুরে খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীরা এস আলমের চিনির এক মণের (৩৭ দশমিক ৩২ কেজি) বস্তার দাম পেয়েছেন ৪৯৯০ টাকা পর্যন্ত। সে হিসেবে প্রতিকেজি চিনির দাম পাইকারি বাজারে উঠেছে ১৩৩ টাকা ৭০ পয়সা পর্যন্ত।

অথচ আগের দিন সোমবার প্রতি বস্তা চিনির পাইকারি দর ছিল ৪৯১০ টাকার মত। সে হিসেবে কেজিপ্রতি দর ছিল ১৩১ টাকা ৫৬ পয়সা।

পাইকারি ব্যবসায়ীরা জানান, সোমবার বিকালে কর্ণফুলীর তীরে এস আলম সুগার রিফাইনারি ইন্ডাস্ট্রিজের অপরিশোধিত চিনির একটি গুদামে আগুন লাগার খবর আসার পরপরই পাইকারি বাজারে চিনির দরে প্রভাব পড়ে। সোমবারই বস্তাপ্রতি ৪০ টাকা পর্যন্ত দাম বেড়ে যায়।

খাতুনগঞ্জের চিনির একজন পাইকারি ব্যবসায়ী নাম প্রকাশ না করে বলেন, চট্টগ্রামের পাইকাররা মূলত এস আলম গ্রুপের মিল গেইট থেকে সংগ্রহ করা চিনির ওপর নির্ভরশীল। অন্যান্য কোম্পানির চিনি থাকলেও চট্টগ্রামে এর চাহিদা কম।

মূলত এস আলমের চিনির ডিও (ডেলিভারি অর্ডার) সংগ্রহ করে মিল গেইট থেকে পরিশোধিত চিনি পাইকাররা সংগ্রহ করেন। পরে পাইকার বা আড়তদারদের হাত হয়ে সেই চিনি খুচরা দোকানদারদের মাধ্যমে ভোক্তার হাতে পৌঁছায়।

বাংলাদেশ চিনি ডিলার ব্যবসায়ী সমিতির যুগ্ম সম্পাদক আনোয়ার হোসেন চৌধুরী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এস আলমের মিলে আগুন লাগার প্রভাবে দাম কিছুটা বাড়তি। খুচরাতেও কোনো কারণ ছাড়াই দাম বাড়ানো হয়েছে।”

চট্টগ্রামের রেয়াজুদ্দিন বাজারে বেশিরভাগ মুদি দোকানিই একদিনের ব্যবধানে চিনির দাম কেজিপ্রতি দুই থেকে তিন টাকা পর্যন্ত বাড়তি রাখছেন। তারা কেজি প্রতি চিনি ১৪২ থেকে ১৪৩ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করছেন।

অথচ সোমবার দুপুরে খোলা চিনির দর ছিল ১৪০ টাকা। নগরীর হেমসেন লেইনের গলির দোকানদাররা মঙ্গলবার বিকালে ১৪৪ থেকে ১৪৫ টাকায় বিক্রি করছিলেন প্রতি কেজি চিনি।

হেমসেন লেনের এক দোকানদার বলেন, “মিলে আগুন লাগায় দাম বাড়তি। পাইকারি বাজারে দাম বেশি জানানোর পর খুচরা দোকানদারও কেজিপ্রতি কয়েক টাকা বাড়তি নিচ্ছে।”

তবে এস আলম গ্রুপ বলছে, তাদের এক লাখ টন পরিশোধিত চিনি পুড়লেও আসন্ন রোজায় এর প্রভাব পড়বে না।

এস আলম গ্রুপের জিএম (কর্মাশিয়াল) মো আকতার হোসেন বলেন, “আগুনে ক্ষয়ক্ষতি কত তা এখন আমরা বলতে না পরলেও বাজারে এর প্রভাব পড়বে না। আমাদের এখনো ১০-১৫ দিনের মত পরিশোধিত চিনি হাতে আছে। আশা করি দুয়েক দিনের মধ্যে আমরা আবার বাজারে ফিরে আসব। আমাদের পাইপলাইনে ৬-৭ লাখ টন চিনি আছে।

“শুধু একটি গোডাউন পুড়েছে। আরো চারটি গোডাউন আছে। বাজারে কোনো প্রভাব পড়বে না।”

এস আলম সুগার রিফাইনারি নামের এই কারখানার দৈনিক পরিশোধন ক্ষমতা ২২০০ টন।

ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে মঙ্গলবার দুপুরে এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান সাইফুল আলম মাসুদ আগুন নেভার পর দুইদিনের মধ্যে পরিশোধনে ফিরতে চাওয়ার কথা বলেন।

বাজারে কোনো প্রভাব পড়বে কি না, এ প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, “আপনারা জানেন কিছু ব্যবসায়ী আছে, দুয়েকদিনের জন্য করে এরা; এগুলো ঠিক হয়ে যাবে। হয়ত দুয়েকদিন হবে আরকি। দুয়েকদিন পর তো আমার ডেলিভারি ঠিক হয়ে যাবে।”

এস আলমের চেয়ারম্যান সাইফুল আলম মাসুদ বলেন, “আমার প্রোডাকশন চালু করব। আমার বানানো মাল আছে। ওইটা দিয়ে এক সপ্তাহ মিনিমাম চলবে। প্রোডাকশনে যাইতে লাগবে দুই দিন।”

বাজারে যে প্রভাব পড়বে না, সেটা কীভাবে বোঝা যাচ্ছে জানতে চাইলে এস আলম গ্রুপের জিএম (এইচআর) মোহাম্মদ হোসেন বলেন, "রোজায় সারাদেশে এক লাখ টন চিনি লাগে। শুধু আমাদেরই এর চেয়ে অনেক বেশি চিনি আছে। র সুগারের একটা গুদাম জ্বলেছে। তিনটা অক্ষত আছে। আরেকটা গুদাম ফিনিশড সুগারের, সেটাও অক্ষত আছে।”

সোমবার বিকাল ৪টার দিকে কর্ণফুলী নদীর তীরে এস আলম সুগার রিফাইন্ড ইন্ডাস্ট্রিজের ১ নম্বর গুদামে আগুন লাগে। মঙ্গলবার সন্ধ্যায়ও সেই আগুন নির্বাপণ করা সম্ভব হয়নি। আগুন নেভাতে সেখানে কাজ করছে ফায়ার সার্ভিসের ১৩টি ইউনিট।

এনবিআরের এক তথ্যে দেখা গেছে, চলতি বছরের জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসে অপরিশোধিত চিনি আমদানি হয়েছে ৪ লাখ ৭৩ হাজার ৭৪৬ টন। পরিশোধিত চিনি আনা হয় ১৩ হাজার ৬৭০টন। গত বছরের এই সময়ে পরিশোধিত চিনি আমদানি করা হয়েছিল ৩ লাখ ২৭ হাজার ৪৯৪ মেট্রিক টন।

২০২৩ সালে মোট অপরিশোধিত ও পরিশোধিত মিলিয়ে চিনি আনা হয় ১৭ লাখ ১২ হাজার ১০৩ মেট্রিক টন।