চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর তলদেশে ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল’ এর দুটি টিউবই চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে পর্যায়ক্রমে খুলে দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম।
শুক্রবার সকালে চট্টগ্রাম বিভাগের সকল জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী প্রধানসহ সংশ্লিষ্টদের এক মতবিনিময় সভা শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।
আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, “আমরা আশাকরি অক্টোবরের শেষে বা নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে একটা খুলে দিব ইনশাল্লাহ। আর ডিসেম্বরে মধ্যে সেকেন্ডটাও আমরা খুলে দিব। টানেল ওপেন হয়ে যাবে। “
নির্ধারিত সময়ের মধ্যে এ ‘মেগা প্রজেক্টের’ বাস্তবায়নকে বাংলাদেশের জন্য বড় সাফল্য মনে করছেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব।
তিনি বলেন, “টানেল প্রজেক্টে স্থানীয়রা অনেক সহযোগিতা করেছেন। সবাইকে ধন্যবাদ। এটা খুব স্মুদলি ইমপ্লিমেন্টেড হয়েছে। এতবড় একটা প্রজেক্ট একেবারে রাইট অন টাইমে যে বাস্তবায়িত হচ্ছে, এটা একেবারে গ্রেট একটা সাকসেস আমাদের দেশের জন্য।”
টানেলের এই কাজকে আগামীতে মডেল হিসেবে ধরা হবে মন্তব্য করে তিনি বলেন, “দুই পারের যারা পলিটিক্যাল নেতৃবৃন্দ, উনারও খুব সহায়তা করেছেন। এটা বাংলাদেশের জন্য একটা মডেল হিসেবে ট্রিটেড হবে যে, এত বড় প্রজেক্ট স্মুদলি এবং টাইমলি উইদাউট অ্যানি কস্ট ভ্যারিয়েশন কীভাবে এটা ইমপ্লিমেন্ট করা সম্ভব।”
কর্ণফুলী নদীর তলদেশের এই সুড়ঙ্গ পথের নির্মাণ ব্যয় ১০ হাজার ৩৭৪ কোটি টাকা, যা হবে বাংলাদেশের প্রথম এবং দক্ষিণ এশিয়ায় নদীর তলদেশে নির্মিত প্রথম রোড টানেল।
৩ দশমিক ৩২ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের এই টানেলে প্রতিটি সুড়ঙ্গের দৈর্ঘ্য ২ দশমিক ৪৫ কিলোমিটার। টানেলের পূর্ব ও পশ্চিম ও প্রান্তে থাকছে ৫ দশমিক ৩৫ কিলোমিটার সংযোগ সড়ক। এ ছাড়া ৭২৭ মিটার দৈর্ঘ্যের একটি ওভারব্রিজ রয়েছে আনোয়ারা প্রান্তে।
বন্দরনগরীর পতেঙ্গা নেভাল অ্যাকাডেমির পাশ দিয়ে ১৮ থেকে ৩১ মিটার গভীরতায় নেমে যাওয়া এই পাতাল পথ কর্ণফুলীর ওপারে আনোয়ারায় সিইউএফএল ও কাফকোর মাঝামাঝি এলাকা দিয়ে আবার ভূপৃষ্ঠে উঠবে। ৩৫ ফুট প্রশস্ত ও ১৬ ফুট উচ্চতার টানেলে দুটি টিউব দিয়ে যাওয়া আসা করবে যানবাহন।
একটির সঙ্গে অপর টিউবের দূরত্ব ১২ মিটারের মত। প্রতিটি টিউবে দুটি করে মোট চারটি লেইন থাকবে।
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সঙ্গে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ককে যুক্ত করবে এই সুড়ঙ্গপথ। দেশের বাণিজ্যিক রাজধানী চট্টগ্রামর সঙ্গে দক্ষিণ চট্টগ্রামের যোগাযোগ আরও সহজ হবে।
নদীর দক্ষিণে আনোয়ারায় রয়েছে কোরিয়ান ইপিজেড, চায়না ইপিজেড, সিইউএফএল ও পারকি সমুদ্র সৈকত। কর্ণফুলী পেরিয়ে আনোয়ারা দিয়েই কক্সবাজার, বাঁশখালী ও মাতারবাড়ি বিদ্যুৎকেন্দ্র ও মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্র বন্দরের সঙ্গে যুক্ত হওয়া যাবে।
কর্ণফুলী নদীর দুইপাড়ে চীনের সাংহাইয়ের আদলে ‘ওয়ান সিটি টু টাউন’ গড়ে তুলতে এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে বাংলাদেশ সরকার। ২০১৫ সালে অনুমোদন পাওয়ার দুই বছর পর ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে কাজ শুরু হয়। মাঝে কোভিড মহামারীর সময় কাজ কিছুটা গতি হারায়।
এশিয়ান হাইওয়ের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন এবং ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজারের মধ্যে একটি নতুন সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তোলার লক্ষ্যে বানানো হচ্ছে এ টানেল। নির্মাণ কাজ করছে চীনা কোম্পানি ‘চায়না কমিউনিকেশন কনস্ট্রাকশন লিমিটেড’।
চট্টগ্রাম বন্দরের বিদ্যমান সুযোগ সুবিধা বাড়াতে এবং প্রস্তাবিত গভীর সমুদ্র বন্দরের নির্মাণ কাজ ত্বরান্বিত করতেও এই টানেল ভূমিকা রাখবে বলেও সরকার আশা করছে।
টানেলের উত্তরে নগরীর দিকে আউটার রিং রোড, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, কাঠগড় সড়ক, বিমানবন্দর সড়ক এবং পতেঙ্গা বিচ সড়ক দিয়ে টানেলে প্রবেশ করা যাবে।