গত ২৪ অগাস্ট কিশোর নুর নবীকে হত্যা করা হয়।
Published : 09 Feb 2024, 10:44 AM
ঢাকা থেকে ‘ফুসলিয়ে’ চট্টগ্রামে এনে এক কিশোরকে খুনের ঘটনায় ‘মূল পরিকল্পনাকারীকে’ গ্রেপ্তার করার কথা জানিয়েছে পুলিশ।
মীরসরাই উপজেলার মিঠাছড়া ইউনিয়নের একটি মাজার থেকে শনিবার রাতে কামরুল হাসান নামের ২৫ বছর বয়সী ওই যুবককে গ্রেপ্তার করা হয়।
এ ঘটনায় আরেক কিশোরকে এর আগে গ্রেপ্তার করেছিল পুলিশ। পেশায় রঙ মিস্ত্রি কামরুল ওই কিশোরের বাসায় সাবলেট থাকতেন এবং তার মায়ের বাসায় ভাত খেতেন।
পুলিশের ভাষ্য, কামরুলের ‘পরামর্শে’ নুর নবীকে ফুসলিয়ে ঢাকা থেকে ফেনীতে এবং পরে চট্টগ্রামে নিয়ে আসে তার সাথে ঘর ছাড়া ওই কিশোর। পরে ২৪ অগাস্ট নুর নবীকে হত্যা করা হয়।
চট্টগ্রামের ষোলশহর রেল স্টেশনে ঘোরাঘুরির সময় নুর নবীর সাথে মাস্ক পড়া যে যুবককে দেখা গিয়েছিল তিনিই কামরুল। নুর নবীর ভিডিও করে পরিবারের কাছে পাঠিয়ে ৫০ হাজার টাকা মুক্তিপণ দাবি করেছিলেন তিনি।
পাঁচলাইশ থানার ওসি সন্তোষ কুমার চাকমা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, কিছুদিন আত্মগোপনে থাকার পর কামরুল মিঠাছড়া এলাকায় একটি মাজারে আশ্রয় নিয়েছিলেন। সেখান থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
রোববার চট্টগ্রাম মহানগর হাকিম মো. সাদ্দাম হোসেনের আদালতে হাজির করা হলে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন কামরুল। তার পরামর্শেই যে নুর নবীকে ফুসলিয়ে ঢাকা থেকে নিয়ে আসা হয়েছিল, সে কথা তিনি জবানবন্দিতে স্বীকার করেছেন বলে পুলিশের ভাষ্য।
পুলিশের হাতে ধরা পড়ার আগেও কামরুল টাকা চেয়ে নুর নবীর ভাইয়ের ইমো নম্বরে মেসেজ দিয়েছিল জানিয়ে ওসি বলেন, “নিজের পরিচয় গোপন রেখে সে নিহত নুরনবীর ভাইয়ের কাছে কামরুলকে ধরিয়ে দেওয়ার কথা বলে ২০ হাজার টাকা দাবি করেছিল। যার মধ্যে ১০ হাজার টাকা অগ্রিম চেয়েছিল। তবে তারা কোনো টাকা দেয়নি।”
জবানবন্দিতে কামরুল বলেছেন, নুর নবীকে ঢাকা থেকে নিয়ে আসা কিশোর তার মায়ের কাছ থেকে চুরি করা টাকা ফেরত দেওয়ার জন্য টাকা ধার চায়। কিন্তু টাকা না থাকায় সে নুর নবীকে অপহরণ করে তার পরিবারের কাছ থেকে টাকা আদায়ের পরামর্শ দেয় ওই কিশোরকে।
সে কারণে কামরুল গত ১৭ অগাস্ট ঢাকা থেকে ফেনীতে চলে আসেন এবং তার তিন দিন পর ওই কিশোর নুর নবীকে ফুসলিয়ে ফেনীতে নিয়ে যান।
কামরুল বলেন, ফেনী থেকে চট্টগ্রামে নেওয়ার পর কামরুল ষোলশহর রেল স্টেশনে নুর নবীর ভিডিও করে তার পরিবারের কাছে পাঠিয়ে টাকা দাবি করে। নুর নবীর পরিবার থেকে পাঁচ হাজার টাকা পাঠানো হলেও ধরা পড়ে যাওয়ার ভয়ে সে টাকা তুলতে যায়নি।
অপহরণের বিষয়টি জানাজানি হলে ধরা পড়ার ভয়ে নুর নবীকে খুন করা হয় বলেও জবানবন্দিতে জানিয়েছেন কামরুল।
জবানবন্দিতে তিনি বলেন, ২৪ অগাস্ট তারা একটি ছুরি কিনেছিলেন। যে স্থানে নুর নবীর লাশ পাওয়া গেছে, সেখানে নুর নবী ঘুমিয়ে পড়েছিল। ঘুমন্ত অবস্থায় তার মাথায় ইট দিয়ে আঘাত করেন তিনি। পরে গ্রেপ্তার হওয়া অপর কিশোর নুর নবীর পেটে ছুরি মেরে মৃত্যু নিশ্চিত করে পালিয়ে যায়।
গত ২৫ অগাস্ট নগরীর হিলভিউ আবাসিক এলাকা থেকে ১৪ বছর বয়সী নুর নবীর রক্তাক্ত মরদেহ উদ্ধার করা হয়। ঢাকার যাত্রাবাড়ীর ধলপুরে বাসা ওই কিশোরের। তার বাবার নাম গোলাম রসুল।
নিহতের বড় ভাই রমজান হোসেন ওই কিশোরের লাশ শনাক্ত করেন। শুক্রবার রাতে বন্দর নগরীর পাঁচলাইশ থানায় একটি হত্যা মামলা করেন তিনি।
মামলার পরপর পুলিশ নুর নবীর সাথে ঘর ছাড়া অপর কিশোর এবং তার সাথে সিসি ক্যামেরায় দেখা যাওয়া মাস্ক পড়া এক যুবকের খোঁজার কথা জানিয়েছিল। ২৭ অগাস্ট জামালপুরের বকশিগঞ্জ থেকে ওই কিশোরকে গ্রেপ্তার করা হয়।
(প্রতিবেদনটি প্রথম ফেইসবুকে প্রকাশিত হয়েছিল ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৩ তারিখে: ফেইসবুক লিংক)