ওই হামলার ঘটনার পর ক্যাম্পাসে তিন ঘণ্টা গ্যাস-বিদ্যুৎ-পানি সরবরাহ বন্ধ রেখে প্রতিবাদ জানান বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
Published : 28 Aug 2023, 07:25 PM
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান প্রকৌশলীকে মারধর এবং প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তাকে লাঞ্ছিত করার অভিযোগে এক ছাত্রলীগ নেতার বিরুদ্ধে মামলা করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
সোমবার সকালে ওই হামলার ঘটনার পর ক্যাম্পাসে তিন ঘণ্টা গ্যাস-বিদ্যুৎ-পানি সরবরাহসহ সব কার্যক্রম বন্ধ রেখে প্রতিবাদ জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
উপাচার্যের সাথে বৈঠক করে হামলাকারী ছাত্রলীগ নেতাকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় অফিসার্স সমিতি।
মামলার আসামি রাজু মুন্সি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের যুব সম্পাদক। তার বিরুদ্ধে হাটহাজারী থানায় দায়ের করা মামলায় মারধর ও চাঁদা দাবির অভিযোগ এনেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
রাজু শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন টিপুর অনুসারী হিসেবে ক্যাম্পাসে পরিচিত। বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতিতে এই পক্ষটি নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীনের অনুসারী হিসেবে পরিচিত।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান প্রকৌশলী ছৈয়দ জাহাঙ্গীর ফজল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “রাজু মুন্সি বিশ্ববিদ্যালয় চলমান উন্নয়ন প্রকল্পের প্রত্যেক কন্ট্রাকটারের কাছ থেকে চাঁদাবাজি করছে। রড-সিমেন্টসহ নির্মাণ সামগ্রী চুরি করে।
“এসব বিষয়ে আমি উপাচার্য, প্রক্টর ও রেজিস্ট্রারের কাছে অভিযোগ জানানোয় সে ক্ষিপ্ত হয়ে এ কাজ করেছে। আমি আজ সকাল ১১টার দিকে কাটা পাহাড় এলাকায় নির্মাণ কাজ পরিদর্শনে গেলে সে আমার দিকে ধেয়ে এসে হামলা করে।”
প্রধান প্রকৌশলী বলেন, “সেখান থেকে আমি প্রশাসনিক ভবনের সামনে চলে গেলে সেখানে গিয়েও সে হামলা করে। সেখানে আগে থেকে উপস্থিত লোকজন আমাকে রক্ষা করে।”
হামলা ও মারধরের ঘটনায় উপাচার্য বরাবরে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ছৈয়দ জাহাঙ্গীর ফজল।
কাছাকাছি সময়ে রাজু মুন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তার কার্যালয়ে গিয়ে ১০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করেন বলেও অভিযোগ ওঠে।
প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) শেখ মোহাম্মদ আবদুর রাজ্জাক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমি তখন উপরে নিজের অফিসে ছিলাম। নিচে আমাদের এক গার্ডের কাছে এসে রাজু মুন্সি বলে, তোর স্যারকে গিয়ে বলবি ১০ হাজার টাকা রেডি রাখতে।
“নিচ থেকে ওই গার্ড উঠে এসে আমাকে বিষয়টি জানায়। এর ২০-২৫ মিনিট পর আমি নিচে নেমে কর্মচারীদের হাজিরা খাতা দেখছিলাম। তখন রাজু মুন্সি এসে উচ্ছৃঙ্খল আচরণ করতে থাকে। তুই-তুকারি করে এবং আমাকে ধাক্কা মারে। তখন লোকজন এসে তাকে ধরে সরিয়ে নেয়।”
প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা শেখ মোহাম্মদ আবদুর রাজ্জাক বলেন, “এরপর আমি প্রশাসনকি ভবনে জানাই। বিষয়টি প্রক্টরকে জানালে তিনি আমাকে আশ্বস্ত করে আমার অফিসে যেতে বলেন। তখন আমি নিজের অফিসে যাই। এর কিছুক্ষণ পর পুলিশ এসে ঘটনার বিষয়ে জানতে চায়। তাদের সাথে কথা বলার পর তারা চলে যান।
“এরপর আমি আবার প্রশাসনিক ভবনে যাই। সেখানে নিচে অনেক লোকজন জড়ো দেখে দাঁড়াই। তখনই প্রক্টর অফিসের দিক থেকে রাজু মুন্সি এসে আমাকে ধাক্কা দেয়। এসময় উপস্থিত ডেপুটি রেজিস্ট্রার আমাকে রক্ষা করেন। এরপর রাজু মুন্সি দৌড়ে গিয়ে প্রধান প্রকৌশলীকে মারতে যায়।”
পুরো ঘটনার বিষয়ে উপাচার্য বরাবরে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা শেখ মোহাম্মদ আবদুর রাজ্জাক।
এসব ঘটনার কথা জানজানি হলে শুরুতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশল দপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এবং পরে সকল বিভাগের কর্মকর্তা কর্মচারীরা কাজ বন্ধ করে দেন।
এ সময় পুরো ক্যাম্পাসে গ্যাস, বিদ্যুৎ ও পানি সরবরাহ বন্ধ রাখা হয়। প্রায় তিন ঘণ্টা পর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের আশ্বাসে তারা কাজে ফেরেন।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় অফিসার্স সমিতির সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ হামিদ হাসান নোমানী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “উপাচার্য মহোদয়ের সাথে আমরা দেখা করেছি। তিনি আশ্বাস দিয়েছেন ব্যবস্থা নেবেন।”
প্রধান প্রকৌশলী ছৈয়দ জাহাঙ্গীর ফজল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমাদের দপ্তরের ১৬০ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী ২৪ ঘণ্টার সময় দিয়েছে। এর মধ্যে ব্যবস্থা না নিলে তারা আবার কাজ বন্ধ করে দেবে বলেছে।”
অভিযোগের বিষয়ে বক্তব্য জানতে ছাত্রলীগ নেতা রাজু মুন্সির মোবাইলে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি ধরেননি।
তবে দুপুরে তিনি কয়েকটি সংবাদমাধ্যমকে বলেন, “প্রধান প্রকৌশলী ও প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা বিভিন্ন অনিয়মে জড়িত। আমি প্রতিবাদ জানিয়েছি। আমি প্রতিবাদ জানানোয় তারা আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ দিয়েছে।”
জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার কে এম নুর আহমদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এই ঘটনায় মামলা হয়েছে। রাজু মুন্সিকে আসামি করে মারধর ও চাঁদাবাজির অভিযোগে মামলাটি করা হয়েছে।”
রাজু মুন্সির বিষয়ে আর কোনো প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন।