রিয়াজউদ্দিন বাজারের আব্দুল্লাহ সিদ্দিকী রোডের আরএস টাওয়ারে দ্বিতীয় তলার যে কক্ষে এ হত্যাকাণ্ড ঘটে সেটি মফিজুর রহমান দুলুর ভাড়া করা। সেখানে দুলু সহযোগীদের নিয়ে মাদক সেবন করতেন। সুমনেরও নিয়মিত যাতায়াত ছিল সেখানে।
Published : 28 Nov 2023, 05:39 PM
নগরীর রিয়াজউদ্দিন বাজারে সোমবার রাতে সুমন সাহা নামের যে যুবককে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে, তার পেছনে রয়েছে সোনা ও মাদক চোরাচালানের টাকা নিয়ে বিরোধ।
পুলিশ বলছে, এ হত্যাকাণ্ডের হোতা মফিজুর রহমান দুলু নামের ৫৬ বছর বয়সী এক ব্যক্তি, যিনি নব্বইয়ের দশকে চট্টগ্রাম পুলিশের তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী ছিলেন। জড়িত ছিলেন ওমরগণি এমইএস কলেজ কেন্দ্রীক ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে।
হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় দুলু ছাড়াও মো. মামুন (৩৮) ও নুর হাসান রিটু (২৮) নামে তার দুই সহযোগীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
গ্রেপ্তার মামুন মঙ্গলবার বিকালে চট্টগ্রাম মহানগর হাকিম কাজী শরীফুল ইসলামের আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দিও দিয়েছেন।
পুলিশের ভাষ্য, গত রোববার রাত থেকে সোমবার পর্যন্ত দুলু নিজে এবং তার দুই সহযোগীকে দিয়ে টানা মারধর করেন সুমনকে। এক পর্যায়ে সুমন সংজ্ঞাহীন হয়ে পড়লে তার মামাকে ডেকে তার হাতে তুলে দেয়া হয়।
মঙ্গলবার বিকালে সংবাদ সম্মেলন করে নগর পুলিশের দক্ষিণ জোনের উপ-কমিশনার (অতিরিক্ত ডিআইজি) মোস্তাফিজুর রহমান জানান, রিয়াজউদ্দিন বাজারের আব্দুল্লাহ সিদ্দিকী রোডের আরএস টাওয়ারে দ্বিতীয় তলার যে কক্ষে এ হত্যাকাণ্ড ঘটে সেটি মফিজুর রহমান দুলুর ভাড়া করা। সেখানে দুলু সহযোগীদের নিয়ে মাদক সেবন করতেন। সুমনেরও নিয়মিত যাতায়াত ছিল সেখানে।
ওই কক্ষ থেকেই সোমবার রাতে সংজ্ঞাহীন সুমনকে প্রথমে একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যান তার মামা। পরে নেওয়া হয় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। পুলিশ খবর পেয়ে লাশ উদ্ধার করে সুমনের।
এরপর বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে ভোরে নগরীর আসকারদিঘীর পাড় এলাকা থেকে দুলুসহ তিন জনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
নিহত সুমনের বাবা শ্যামল সাহা স্বর্ণ ব্যবসায়ী। মানিকগঞ্জ সদর উপজেলায় বাড়ি হলেও তারা পারিবারিকভাবে থাকেন চট্টগ্রামে। নগরীর কোতোয়ালী থানার নন্দন কানন এলাকায় তাদের বাসা।
নগর পুলিশের সহকারী কমিশনার (কোতোয়ালী জোন) অতনু চক্রবর্ত্তী পরিবারের বরাত দিয়ে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, রোববার বিকালে বাসা থেকে বের হয়ে রাতে ফেরেননি সুমন। সোমবার রাতে তার মামাকে ফোন করে দুলু জানান, সুমন অসুস্থ হয়ে পড়েছে। পরে তিনি সুমনকে হাসপাতালে নিয়ে যান।
উপ-কমিশনার মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, সুমনকে মারধরের ঘটনাটি প্রথমে তার পরিবার পুলিশকে জানায়নি; মৃত্যুর পর জানিয়েছে।
সন্দেহ থেকে খুন
হত্যাকাণ্ডের কারণ জানিয়ে সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর বলেন, দুলু ও সুমন মাদক ও স্বর্ণ চোরাচালানে জড়িত। এ নিয়ে তাদের মধ্যে আর্থিক লেনদেনও আছে। দুলুর কাছ থেকে নেয়া টাকা সুমন পরিশোধ না করায় তাদের মধ্যে মনোমালিন্য শুরু হয়।
চট্টগ্রামে যুবককে পিটিয়ে হত্যা, আটক ৩
তিনি বলেন, “সুমন টাকা পরিশোধের জন্য মাদক সেবনরত অবস্থায় দুলুকে তার সঙ্গে স্বর্ণ ক্রয়ের জন্য টেকনাফ যেতে বলেন। তখন দুলুর মনে সন্দেহ হয়, সুমন তাকে টাকা ফেরত না দিয়ে টেকনাফ নিয়ে খুন করবে, এজন্য সুমন লোকও ঠিক করেছে।”
গ্রেপ্তার মামুন এ সন্দেহটি দুলুর মাথায় ঢুকিয়ে দেয় জানিয়ে মোস্তাফিজুর জানান, সুমনের ভাড়া করা দুই জন লোক রিয়াজউদ্দিন বাজারের অফিস রেকি করেছে বলেও সন্দেহ ছিল দুলু।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, রোববার রাতে সুমন মাদক সেবনের জন্য রেয়াজউদ্দিন বাজারে দুলুর ভাড়া করা কক্ষে যাওয়ার পর তাকে আটকে রাখা হয়। সেখানে দুলু সুমনের কাছে থেকে জানতে চান, তাকে খুন করার জন্য কাদেরকে ঠিক করেছে এবং কারা অফিস রেকি করেছে। সুমন উত্তর না দেয়ায় তাকে লোহার রড, প্লাস্টিকের পাইপ ও প্লাস দিয়ে মারধর করে তথ্য বের করার চেষ্টা করা হয়।
দুলু পরবর্তীতে মামুন ও রিটুকে দিয়েও সুমনকে মারধর করান। এক পর্যায়ে তারা সুমনকে উলঙ্গ করেও মারধর করেন, এতে তার মৃত্যু হয়।
চট্টগ্রাম নগর পুলিশের সাবেক এক কর্মকর্তা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, স্বচ্ছল পরিবারের সন্তান দুলু ছিলেন নব্বইয়ের দশকে চট্টগ্রাম পুলিশের তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী। ডাকাতি, চাঁদাবাজি, অস্ত্রবাজিসহ বিভিন্ন অভিযোগ ছিল তার বিরুদ্ধে। ওই সময় একাধিকবার গ্রেপ্তারও হয়েছিলেন।
দুলুর বাবা ছিলেন চট্টগ্রাম আদালতের আইনজীবী। নগরীর ওমরগনি এমইএস কলেজ কেন্দ্রীক ছাত্রলীগের রাজনীতিতে জড়িত থাকলেও কোনো পদপদবীতে ছিলেন না দুলু। তবে ওই সময় থেকেই দুলু মাদকাসক্ত ছিলেন বলে জানিয়েছেন ওই কর্মকর্তা।
সর্বশেষ ২০০১ সালের দিকে গ্রেপ্তার হওয়ার পর কারাগার থেকে বের হয়ে অনেকটা আড়ালে চলে যান দুলু।