পাহাড়তলী বধ্যভূমির বেদখল জায়গা উদ্ধারে আন্দোলনের ঘোষণা মেয়রের

“চট্টগ্রামের অন্য যেসব বধ্যভূমি বেদখল হয়ে আছে, সেগুলোও উদ্ধার করে স্থায়ীভাবে সংরক্ষণের উদ্যোগ নিতে হবে,” বলেন রেজাউল।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 25 March 2023, 11:44 AM
Updated : 25 March 2023, 11:44 AM

চট্টগ্রামের পাহাড়তলী বধ্যভূমির যে এলাকা বেদখল হয়ে গেছে, তা উদ্ধারের দাবিতে আন্দোলন গড়ে তোলার ঘোষণা দিয়েছেন সিটি মেয়র এম রেজাউল করিম চৌধুরী।

তিনি বলেছেন, “মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের স্মৃতি রক্ষার্থে চট্টগ্রামের বধ্যভূমির সম্প্রসারণ অত্যন্ত প্রয়োজন। হীনস্বার্থে ভূমিখেকোরা জায়গা দখল করতে করতে পাহাড়তলী বধ্যভূমিকে সংকুচিত করে ফেলেছে।

“একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে এই ষড়যন্ত্র মেনে নিব না এবং এহেন ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে কাউন্সিলরদের নেতৃত্বে গণ-আন্দোলন গড়ে তুলব।”

গণহত্যা দিবস উপলক্ষে শনিবার চট্টগ্রামের সবচেয়ে বড় বধ্যভূমি পাহাড়তলী বধ্যভূমিতে শহীদদের স্মৃতি স্মরণ করে দেওয়া বক্তব্যে তিনি এ ঘোষণা দেন।

রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, “আমি প্রশাসন, নেতৃবৃন্দসহ সংশ্লিষ্ট সবার সাথে যোগাযোগ করছি যাতে পাহাড়তলী বধ্যভূমিকে সম্প্রসারিত করে এমনভাবে ঢেলে সাজানো যায়, যেন জনগণ এখানে এসে মুক্তিযুদ্ধে চেতনার উপলব্ধি নিতে পারে।

“চট্টগ্রামের অন্য যেসব বধ্যভূমি বেদখল হয়ে আছে, সেগুলোও উদ্ধার করে স্থায়ীভাবে সংরক্ষণের উদ্যোগ নিতে হবে।”

বীর মুক্তিযোদ্ধা রেজাউল বলেন, “এই বধ্যভূমিতে অসংখ্য নিরীহ বাঙালিকে হত্যা করা স্বাধীনতাবিরোধীরা দেখ- পাকিস্তান আজ দেউলিয়াত্বের পথে৷ আর বাংলাদেশ বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে উন্নয়নের রোল মডেলে পরিণত হয়েছে।

“যারা একাত্তরে স্বাধীনতার বিরোধিতা করেছিল তারাই, এখন বধ্যভূমি দখল করছে, ধর্মীয় অপব্যাখ্যা দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিরোধিতা করছে৷ মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তিকে এই হায়েনাদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে, লড়তে হবে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সরকারকে টিকিয়ে রাখতে।”

এ সময় উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলাম, কাউন্সিলর নিছার উদ্দিন আহমেদ মঞ্জু, হাসান মুরাদ বিপ্লব, মো. জহুরুল আলম জসিম, মো. ওয়াসিম উদ্দিন চৌধুরী, মোহাম্মদ ইসমাইল, আবুল হাসনাত মো. বেলাল, মো. আবদুস সালাম, পুলক খাস্তগীর, সচিব খালেদ মাহমুদ, প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম, প্রধান শিক্ষা কর্মকর্তা লুৎফুন নাহার, প্রধান প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম, শিক্ষা কর্মকর্তা উজালা রানী চাকমা।

১৯৯৮ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঢাকার রায়েরবাজার ও চট্টগ্রামের পাহাড়তলী বধ্যভূমি রক্ষার নির্দেশ দেন। পরের বছর পাহাড়তলী বধ্যভূমির স্মৃতি রক্ষার্থে তৎকালীন সরকার জমি অধিগ্রহণের উদ্যোগ নেয়। এই প্রকল্পের জন্য ৯৮ লাখ টাকা বরাদ্দও দেওয়া হয়।

পরবর্তীতে চারদলীয় জোট সরকার প্রকল্পটি বাতিল করলে বরাদ্দ করা সেই অর্থ ফেরত যায়। সরকারের ওই সিদ্ধান্তের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে অধ্যাপক মুহম্মদ জাফর ইকবাল, মুনতাসীর মামুন ও গাজী সালেহ উদ্দিনসহ কয়েকজন হাই কোর্টে একটি রিট আবেদন করেন।

পাহাড়তলী বধ্যভূমির জমিতে ২০০৭ সালে একটি ভবন নির্মাণের কাজ শুরু করে বেসরকারি ইউনির্ভাসিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি, চট্টগ্রাম (ইউএসটিসি) কর্তৃপক্ষ। এর বিরুদ্ধে ২০১০ সালে আরেকটি রিট আবেদনে ওই ভবন নির্মাণে স্থগিতাদেশ দেয় আদালত। বধ্যভূমি হিসেবে চিহ্নিত জমির বেশিরভাগ এখনো ইউএসটিসি’র দখলে রয়েছে।

২০১১ সালের ৬ জুন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের আদেশে একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করা হয়, তদন্ত শেষে পাহাড়তলী বধ্যভূমির স্থান নির্ধারণ করে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য।

সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের নির্দেশে গঠিত বিশেষজ্ঞ কমিটির প্রতিবেদনের ভিত্তিতে ২০১৪ সালের ১১ মার্চে দেওয়া এক আদেশে এক দশমিক ৭৫ একর জমির সম্পূর্ণ অংশ পাহাড়তলী বধ্যভূমি বলে রায় দেওয়া হয়।

ওই কমিটির কাছে সাক্ষ্যদাতাদের বক্তব্য অনুসারে, ১৯৭১ সালের এপ্রিল মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ওই বধ্যভূমিতে গণহত্যা সংঘটিত হয়। প্রায় পৌনে ২ একর এলাকা জুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছিল মানুষের মাথার খুলি, কঙ্কাল ও হাড়গোড়। এর মধ্যে ১৯৭১ সালের ১০ নভেম্বর ‘পাহাড়তলি গণহত্যা’ সংঘটিত হয়। বাঙালিদের ধরে এনে হত্যা করা হয় বিহারিদের সহায়তায়।

প্রত্যক্ষদর্শী সাক্ষীরা জানান, সেখানে প্রায় ১০ হাজার মানুষকে হত্যা করা হয়েছিল। যেখানে ইউএসটিসি ভবন নির্মাণ করেছে, সেখানেই ১৯৭১ সালের ১০ নভেম্বর হত্যাকাণ্ডের পর লাশ ফেলে রেখেছিল পাকিস্তানি বাহিনী।

আদালত নির্দেশিত এক দশমিক ৭৫ একর জমির পুরোটা অধিগ্রহণ করে ‘গণহত্যা স্মৃতিসৌধ’ নির্মাণের দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করছে ‘পাহাড়তলী বধ্যভূমি রক্ষা পরিষদ’।

Also Read: পাহাড়তলীর বধ্যভূমি সংরক্ষণ আটকে ভূমি অধিগ্রহণে

Also Read: চট্টগ্রামে পাহাড়তলি বধ্যভূমির পুরো জমি অধিগ্রহণের দাবি

Also Read: নেত্রকোণায় মোম প্রজ্বালনে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের স্মরণ