চট্টগ্রামে শিশু আয়াত খুনের ঘটনায় আরও এক কিশোরকে গ্রেপ্তারের পর পিবিআই জানিয়েছে, অপহরণের এক মাস আগেই আবীর তাকে হত্যার পরিকল্পনা করেছিলেন।
বুধবার চট্টগ্রাম মহানগর হাকিম মেহনাজ রহমান ওই কিশোরের জবানবন্দি নেন; মঙ্গলবার বিকালে বন্দরটিলা নয়ারহাট থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
অপহরণ ও হত্যার পরিকল্পনার বিষয়ে জানার পরও তা ‘গোপন’ রাখার অভিযোগে ওই কিশোরকে গ্রেপ্তারের কথা জানিয়েছেন পিবিআই চট্টগ্রাম মেট্রোর পরিদর্শক ইলিয়াস খান।
গ্রেপ্তার ১৭ বছর বয়সী কিশোর আয়াতের বাসার কাছে একটি হোটেলে কাজ করেন।
পরিদর্শক ইলিয়াস বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, আয়াত খুনের ঘটনায় গ্রেপ্তার আবীর আলী ও তার মধ্যে ভালো সখ্য ছিল। অপহরণের আরও এক মাস আগে আবীর বিষয়টি এ কিশোরের সঙ্গে আলোচনা করে।
“যেদিন আয়াতকে খুন করে আকমল আলী রোড পকেট গেইটে আবীর তার মায়ের বাসায় লাশ নিয়ে গিয়েছিল সেটিও জানত। ওই দিন সে আয়াতকে খুঁজতে আবীরের সাথেও গিয়েছিল। কিন্তু সে বিষয়টি গোপন করে গেছে।”
কিশোরের দেওয়া জবানবন্দির বরাতে ইলিয়াস বলেন, গত অক্টোবরের শুরুতে আবীর আয়াতকে অপহরণ করে খুন এবং পরে তার (আয়াত) দাদার কাছ থেকে ২০ লাখ টাকা মুক্তিপণ আদায়ের পরিকল্পনার কথা জানিয়েছিলো তাকে।
পরিকল্পনা বাস্তবায়নে আবীর তাকে অংশ নিতে বললেও সে বিষয়টি এড়িয়ে যায় এবং আবীরের স্বভাব দেখে সেটি (খুন) তার বিশ্বাস হয়নি বলে দাবি তার (কিশোর)।
জবানবন্দিতে ওই কিশোর আরও জানায়, পরিকল্পনাটি কাউকে বলতে নিষেধ করেছিলেন আবীর। আয়াতকে খুন করে আবীর তার হোটেলে গিয়ে ভাত খান। বিকাল ৫টার দিকে আয়াতকে খোঁজাখুঁজি শুরু হলে সন্ধ্যার দিকে সে আবীরকে দেখে এবং তার সঙ্গে লেবার কলোনিতে আয়াতকে খুঁজতে যান।
“এসময় আবীরের কাছে এ বিষয়ে জিজ্ঞাস করলে সে (আবীর) আয়াতকে খুন করে লাশ আকমল আলী পকেট গেইটে তার মায়ের বাসায় নিয়ে রেখেছে বলে জানায়। কিন্তু ভয়ে বিষয়টি কারো কাছে প্রকাশ করেনি।”
জবানবন্দিতে ‘খুনের বিষয়টি প্রকাশ করলে মৃতদেহটি পাওয়া যেত বলে’ ওই কিশোর অনুশোচনা প্রকাশ করেছে বলেও পিবিআইয়ের ভাষ্য।
গত ১৪ নভেম্বর পাঁচ বছরের শিশু আলিনা ইসলাম আয়াত নিখোঁজ হওয়ার পর ইপিজেড থানায় জিডি করে তার পরিবার। সন্ধান চেয়ে পোস্টার ও প্রচারপত্রও বিলি করা হয়। তার দাদা নাতনির সন্ধান চেয়ে পিবিআইয়ের কাছে আবেদন করেন। পরে পিবিআই তদন্তে নেমে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য প্রতিবেশী ১৯ বছর বয়েসী আবীর আলীকে আটক করে।
আয়াত ইপিজেড থানার নয়ারহাট ওয়াছমুন্সী বাড়ির সোহেল রানার মেয়ে। তাদের বাড়িতে দীর্ঘদিন ভাড়া থাকে আবীরের পরিবার।
২৫ নভেম্বর পিবিআই জানিয়েছিল, ‘মুক্তিপণের’ জন্য শিশু আলিনা ইসলাম আয়াতকে অপহরণ করে খুন করেছে তাদের এক ভাড়াটিয়ার ১৯ বছরের ছেলে আবীর আলী। শিশুটিকে ছয় টুকরা করে সাগরে ভাসিয়ে দেয় সে।
যার কিছু অংশ আকমল আলী রোডের স্লুইচ গেইটের একটি নালায়, আর কিছু অংশ সাগরে ফেলার কথা পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছিল আবীর। আবীরকে দুই দফায় রিমান্ডে নেয় পিবিআই। ২৯ নভেম্বর আবীরের মা-বাবাকেও তিন দিনের রিমান্ডে নিয়েছে সংস্থাটি।
ওই দিন তাকে নিয়ে পিবিআই সদস্যরা বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত বটি এবং আয়াতের জুতা উদ্ধার করে। আর পরের রাতে আয়াতের বাবা নগরীর ইপিজেড থানায় একটি হত্যা মামলা করেন।
আর গত ৩০ নভেম্বর আউটার রিং রোডের আকমল আলী ঘাট সংলগ্ন স্লুইচ গেইটের এক গর্ত থেকে আয়াতের দুই পা এবং পরদিন খণ্ডিত মাথা উদ্ধার করে পিবিআই।
আরও পড়ুন