“আমরা আশা করব, আমাদের পক্ষ থেকে যে মামলা নিয়ে থানায় যাওয়া হয়েছে, সে মামলা আপনারা গ্রহণ করবেন,” পুলিশের উদ্দেশে বলেন তিনি।
Published : 21 Jul 2023, 10:05 PM
‘মামলা দিয়ে’ বিএনপিকে আন্দোলন থেকে দূরে সরে রাখা যাবে না বলে মন্তব্য করেছেন চট্টগ্রাম নগর বিএনপির আহ্বায়ক ডা. শাহাদাত হোসেন।
তিনি বলেছেন, “বিএনপিকে ভয় দেখিয়ে কোনো লাভ হবে না। এক লক্ষ মামলা, ছয়শত নেতাকর্মীকে গুম ও হাজার হাজার নেতাকর্মীকে বিচার বহির্ভূত হত্যা করেছে। কিন্তু বিএনপিকে কি দমাতে পেরেছেন?
“বিএনপির নেতাকর্মীরা এখন রোদে পুড়ে খাঁটি সোনায় পরিণত হয়ে গেছে। মামলা দিয়ে ভয় দেখিয়ে নেতাকর্মীদের আন্দোলন থেকে দূরে সরে রাখা যাবে না।”
শুক্রবার বিকালে নগরীর দলীয় কার্যালয়ের মাঠে ‘বিএনপি অফিসে আওয়ামী সন্ত্রাসীদের হামলার প্রতিবাদে' চট্টগ্রাম নগর বিএনপি আয়োজিত প্রতিবাদ সভায় তিনি এ কথা বলেন।
ডা. শাহাদাত বলেন, “বুধবারের পদযাত্রা কর্মসূচিতে চট্টগ্রামবাসী দেখিয়ে দিয়েছে চট্টগ্রাম বিএনপির ঘাঁটি। সেদিন লক্ষ লক্ষ জনতার জোয়ার দেখে আওয়ামী লীগের মাথা খারাপ হয়ে গেছে। এটা আওয়ামী লীগের সহ্য হয়নি।
“তাই তারা চট্টগ্রামকে অশান্ত করার জন্য বিএনপি অফিসে হামলা চালিয়েছে। কিন্তু এই সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে আন্দোলন সংগ্রাম করার জন্য বিএনপি প্রস্তুত রয়েছে।”
সরকার পতনের এক দফা দাবিতে বুধবার বিকালে পদযাত্রা শেষে ফেরার পথে বিএনপিকর্মীরা নগরীর লালখান বাজার এলাকায় চট্টগ্রাম-১০ আসনের উপ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী মহিউদ্দিন বাচ্চুর নির্বাচনী কার্যালয়ে হামলা চালায়।
এ সময় দুই পক্ষের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ায় অন্তত ১০ জন আহত হন। ভাঙচুর করা হয় নির্বাচনী প্রচারে ব্যবহৃত গাড়ি ও মোটর সাইকেলসহ অন্তত ১০টি যানবাহন। এরপর আওয়ামী লীগ কর্মীরা জড়ো হয়ে নগরীর নাসিমন ভবনে বিএনপি কার্যালয়ে ভাংচুর করে।
বুধবার রাতে খুলশী থানায় পুলিশ ও এক আওয়ামী লীগ কর্মী বাদী হয়ে বিএনপি নেতাকর্মীদের নামে দুইটি মামলা দুটি করেন।
চট্টগ্রাম নগর বিএনপির আহ্বায়ক ডা. শাহাদাত বলেন, “বুধবার আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা যখন লালখান বাজার থেকে মিছিল নিয়ে বিএনপির অফিসের দিকে হামলা করতে আসছিল, তখন পুলিশও তাদেরকে প্রতিরোধ করার জন্য এসেছিল। কিন্তু এত বড় কোতোয়ালী থানার পুলিশ থাকতে এই সামান্য সন্ত্রাসীদের রুখতে পারলেন না।
“ভিডিও ফুটেজে দেখেছি, পুলিশকে তারা ধাক্কা দিয়ে ফেলে বিএনপি অফিসে ঢুকে সবকিছু তছনছ করে দিয়েছে। আগুন লাগিয়ে ল্যাপটপসহ বিভিন্ন জিনিসপত্র লুটপাট করে নিয়ে গেছে। সেদিন এই সন্ত্রাসীদের সামনে পুলিশের অসহায়ত্ব আমরা দেখেছি। অপরাধী যেই হোক না কেন তাদেরকে গ্রেপ্তার করা আপনাদের দায়িত্ব ছিল।”
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ ছাত্রদলের এক সময়ের সভাপতি শাহাদাত পুলিশের উদ্দেশে বলেন, “আমরা বলতে চাই, আপনারা নির্ভয়ে কাজ করেন। উপরের নির্দেশ শুনবেন না। সরকারের সময় শেষ হয়ে গেছে। কিন্তু আপনাদের তো সময় আছে। আপনাদেরকে তো চাকরি করতে হবে।
“আমরা বিশ্বাস করি, আগামীতে বিএনপি সরকার গঠন করলে আপনারা ভালোভাবে চাকরি করতে পারবেন। আমরা আশা করব, আমাদের পক্ষ থেকে যে মামলা নিয়ে থানায় যাওয়া হয়েছে, সে মামলা আপনারা গ্রহণ করবেন। সবাইকে গণতন্ত্রের পথে ফিরে আসতে হবে।”
কেন্দ্রীয় বিএনপির শ্রম সম্পাদক এ এম নাজিম উদ্দিন বলেন, “সরকার পরিকল্পিতভাবে বিএনপিকে নিশ্চিহ্ন করার গভীর চক্রান্তে লিপ্ত। সেই পরিকল্পনার অংশ হিসাবে মামলা দায়েরের ঘটনা নিত্য ঘটছে। কিন্তু হামলা মামলার মাধ্যমে বিএনপিকে দমিয়ে রাখতে পারেনি, পারবেও না।
“বিএনপি কোন সময় আপস করেনি। এসব বানোয়াট মামলা দিয়ে বিএনপি নেতাকর্মীদেরকে ঘরে আবদ্ধ করে রাখতে পারবে না।”
বুধবারের পদযাত্রা কর্মসূচি ‘অত্যন্ত শান্তিপূর্ণভাবে’ শেষ হয়েছে মন্তব্য করে চট্টগ্রাম নগর বিএনপির সদস্য সচিব আবুল হাসেম বক্কর বলেন, “লক্ষ লক্ষ মানুষ নিয়ে আমরা দারুল ফজল মার্কেট ও নিউ মার্কেট সংলগ্ন আওয়ামী লীগের অফিসের পাশ দিয়ে গেছি, কিন্তু আমাদের নেতাকর্মীরা ওইদিকে মুখ ফিরেও তাকায়নি।
“কিন্তু ওই দিন সন্ধ্যায় আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা আমরা যখন অফিসে ছিলাম না, তখন এসে চোরের মত হামলা করে চলে গেছে। এই ঘটনায় আমাদের পক্ষ থেকে করা মামলা না নিয়ে উল্টো আওয়ামী লীগ এবং পুলিশ বাদী হয়ে আমাদের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা করেছে। বিএনপির নেতা কর্মীরা এখন মামলাকে ভয় করে না।”
দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু সুফিয়ান বলেন, “আওয়ামী লীগ মানুষের অধিকার হরণ করেছে। তাদের কাছ থেকে ভালো কিছু আশা করি না। আওয়ামী লীগ এখন জনগণ ও বিদেশিদের চাপে দিশেহারা। তারা আবোল-তাবোল বকছে। এসব করে শেষ রক্ষা হবে না। চলে যেতেই হবে।”
চট্টগ্রাম নগর বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য কামরুল ইসলামের পরিচালনায় সভায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন নগর বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক এম এ আজিজ, যুগ্ম আহ্বায়ক মোহাম্মদ মিয়া ভোলা, অ্যাডভোকেট আবদুস সাত্তার, নাজিমুর রহমান, শফিকুর রহমান স্বপন, কাজী বেলাল উদ্দিন, ইয়াছিন চৌধুরী লিটন, ইসকান্দর মির্জা, আবদুল মান্নান, নুর মোহাম্মদ।