চুরি করা শিশু ১৫ দিন পর উদ্ধার, ‘সংঘবদ্ধ চক্রের’ খোঁজ পেল পুলিশ

উদ্ধারের আগে শিশুটিকে তিন দফায় বিক্রি করা হয়েছিল বলে পুলিশ জানিয়েছে।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 9 Feb 2023, 02:05 PM
Updated : 9 Feb 2023, 02:05 PM

চট্টগ্রাম থেকে ‘চুরি যাওয়া’ তিন বছর বয়সের এক শিশুকে ১৫ দিন পর ফেনী থেকে উদ্ধার করা হয়েছে, গ্রেপ্তার করা হয়েছে তিন নারীসহ ছয়জনকে।

পুলিশ বলছে, ওই ‘সংঘবদ্ধ চক্র’ দীর্ঘদিন ধরে শিশুদের চুরি করে ‘নিজেদের অথবা তাদের স্বজনদের’ সন্তান বলে বেচাকেনা করে আসছিল।

চট্টগ্রাম নগরীর পতেঙ্গা ও ফেনী থেকে বুধবার ছয়জনকে গ্রেপ্তার করা হয় বলে নগর পুলিশের উপকমিশনার (বন্দর) শাকিলা সোলতানা জানান।

তিনি বলেন, ফেনীর দাগনভূয়া এলাকা থেকে উদ্ধারের আগে শিশুটিকে তিন দফায় বিক্রি করা হয়েছিল বলে তারা জানতে পেরেছেন।

গ্রেপ্তাররা হলেন- সুমি শীল ওরফে সুমি সরকার (৪৫), মোছাম্মৎ লাকী আক্তার ওরফে লাকী বেগম (৩৭), মো. আকিব (১৯), বেলাল হোসেন (৪০), হাবিবুর রহমান মজুমদার (৩৩) ও রোজিনা আক্তার (৩২)।

পুলিশ বলছে, গ্রেপ্তারদের মধ্যে তিনজন সরাসরি চুরি ও বাকিরা কেনবেচার সঙ্গে জড়িত।

উপকমিশনার শাকিলা বলেন, “চক্রটি মূলত নিম্ন আয়ের পরিবারের সন্তানদের টার্গেট করে এবং চুরি করা বাচ্চা নিঃসন্তান দম্পতিদের কাছে ‘নিজের ও কোনো স্বজনের’ সন্তান বলে বিক্রি করে দিত।

“এ চক্রটি যেসব শিশু ছোট ও কথা বলতে পারে না, তাদের টার্গেট করত, যাতে সহজেই বিক্রি করে দেওয়া যায়।”

নগর পুলিশের সহকারী কমিশনার (বন্দর) মাহমুদুল হাসান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, গ্রেপ্তার সুমি, লাকী ও আকিব চুরির সঙ্গে জড়িত; অন্য তিনজন বেচাকেনা করেন।

২৫ জানুয়ারি দুপুরে শিশুটিকে চুরি করে নিয়ে যাওয়ার পর তার বাবার করা মামলার তদন্তে নেমে চক্রটির সন্ধান পাওয়ার কথা জানিয়েছে পুলিশ।

তদন্ত কর্মকর্তা ও ইপিজেড থানার এসআই রানা প্রতাপ বণিক বলেন, চুরি করা শিশুটির মা পোশাক কারখানায় এবং বাবা দৈনিক মজুরিতে শ্রমিকের কাজ করেন। ইপজেড জোড়া খাম্বা এলাকায় তাদের বাসা। তিন বছর বয়সী শিশুটিকে তার সাত বছর বয়সী বড় বোনের কাছে রেখে বাবা-মা দুজনই প্রতিদিন কাজে যেতেন।

“গত ২৫ জানুয়ারি দুপুরে শিশুটিকে নিয়ে তার বড় বোন রেললাইন সংলগ্ন সাইক্লোন শেল্টারের কাছে খেলতে যায়। এসময় দুই নারী গিয়ে শিশুটির বড় বোনকে ২০ টাকা দিয়ে চকোলেট কিনতে দোকানে পাঠায়। এ সুযোগে শিশুটিকে কোলে নিয়ে রিকশা করে চলে যায়।”

এসআই রানা জানান, তদন্তে নেমে গোপন সংবাদ পেয়ে সুমি, লাকী ও আকিবকে পতেঙ্গা থেকে বুধবার আটক করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে শিশু চুরির কথা তারা স্বীকার করে এবং ৩০ হাজার টাকায় শিশুটিকে বেলালের কাছে বিক্রির কথা জানায়।

“তাদের দেওয়া তথ্যে অপহৃত শিশুটির বাবা-মাকে সঙ্গে নিয়ে ফেনীর দাগনভূয়া এলাকায় অভিযানে গিয়ে বেলালকে আটক করা হয়। তখন তিনি শিশুটিকে হাবিবের কাছে দিয়েছেন বলে জানান।”

হাবিবকে আটকের পর তিনি জানান, শিশুটিকে তিনি দিয়েছেন রোজিনার কাছে। পরে দাগনভূয়ার মাছুমপুর থেকে রোজিনাকে আটক করে শিশুটিকে উদ্ধার করা হয় বলে জানান তদন্ত কর্মকর্তা।

গ্রেপ্তার সুমির বিরুদ্ধে পাঁচলাইশ থানায় মানবপাচার আইনে ২০১৭ সালের একটি মামলা রয়েছে বলে জানান এসআই রানা।

গ্রেপ্তার হওয়ার পর সুমি, লাকী ও আকিব বৃহস্পতিবার হাকিম আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন। উদ্ধার করা শিশুটিকে কত টাকায় লেনদেন হয়েছে, তা তদন্ত করা হচ্ছে বলে জানান এই পুলিশ সদস্য।

এর আগে গত ২৭ অক্টোবর নিউমুরিং এলাকা থেকে সাত মাস বয়সী এক শিশু চুরির ঘটনা ঘটে। প্রায় এক মাস পর শিশুটিকে লক্ষীপুরের চন্দ্রগঞ্জ থেকে উদ্ধার করা হয়।

আরও পড়ুন

Also Read: চট্টগ্রামে চুরি করা দুই শিশু ফেনী ও লক্ষ্মীপুর থেকে উদ্ধার