“সবাইকে সজাগ থাকতে হবে। যেসব জায়গা ঝুঁকির, সেখানে আর্মড গার্ড থাকতে হবে।”
Published : 14 May 2024, 09:38 PM
ভবিষ্যতে যাতে বাংলাদেশের কোনো জাহাজ আর জলদস্যুর কবলে না পড়ে, সে বিষয়ে সজাগ থাকতে জাহাজ মালিকদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ।
জলদস্যুর কবল থেকে মুক্ত এমভি আবদুল্লাহর ২৩ নাবিক মঙ্গলবার বিকেলে ফেরার পর চট্টগ্রাম বন্দরের নিউমুরিং কন্টেইনার টার্মিনালে তাদের অভ্যর্থনা জানানো হয়। ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সেই অনুষ্ঠানে যুক্ত হয়ে বক্তব্য দেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
তিনি বলেন, “প্রতি মুহূর্তে আমরা খবর রাখছিলাম। কয়েক দফা বিভিন্ন আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান যারা সেখানে নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত, তারা বল প্রয়োগের কথা বলছিল। হয়ত সেটা আমরা করতে পারতাম। কিন্তু সবাই অক্ষত থাকত কিনা…।
“আল্লাহর কাছে অশেষ শুকরিয়া, নাবিকরা সবাই সুস্থভাবে ফিরেছেন। তবে ভবিষ্যতে যেন না ঘটে সবাইকে সজাগ থাকতে হবে। যেসব জায়গা ঝুঁকির, সেখানে আর্মড গার্ড থাকতে হবে।”
মোজাম্বিক থেকে কয়লা নিয়ে সংযুক্ত আরব আমিরাতের দিকে যাওয়ার সময় গত ১২ মার্চ সোমালি উপকূল থেকে ৬০০ নটিক্যাল মাইল দূরে জলদস্যুদের কবলে পড়ে এমভি আবদুল্লাহ।
জাহাজ ছিনিয়ে নেয়ার পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়ানো প্রথম ভিডিও চিত্রে দেখা যায়, একটি ছোট দ্রুতগতির নৌযান থেকে একজন জলদস্যু অস্ত্র নিয়ে এমভি আবদুল্লাহতে উঠে পড়ছে।
সেসময়, ভারত মহাসাগরের সোমালি উপকূল ও আশেপাশের অঞ্চলে নিরাপত্তায় নিয়োজিত ইউরোপীয় নেভাল ফোর্সের অপারেশন আটলান্টা জানায়, একটি মাঝারি আকারের নৌযান ও কয়েকটি স্পিডবোট নিয়ে এমভি আবদুল্লাহকে ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছিল।
কয়লাবাহী এমভি আবদুল্লাহ সোমালি উপকূলের উচ্চ ঝুঁকির এলাকার বাইরে দিয়ে চলছিল বলে দাবি করেছিল জাহাজের মালিক এসআর শিপিং (কবির গ্রুপের জাহাজ কোম্পানি) । তবে জাহাজটিতে কোনো আর্মড গার্ড (সশস্ত্র নিরাপত্তারক্ষী) ছিল না। জাহাজের দুপাশে কাঁটাতারের বেষ্টনীও ছিল না।
মঙ্গলবারের অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেন, “মালিক কর্তৃপক্ষের অসীম ধৈর্য ছিল। তারা লক্ষ্য রেখেছিল, লোক ক্ষয় যাতে না হয়। সবাইকে অভিনন্দন। সাহসের জন্য নাবিকদের ধন্যবাদ।
“আপনাদের সেখানে ঈদের নামাজ আদায় করতে দেখতে আমাদের খুব শান্তি লেগেছে। সবাই উদ্বেগে ছিল। সব কিছু সুন্দরভাবে হয়েছে, সেজন্য ধন্যবাদ। নাবিকদের সুস্থতা, কর্মজীবনে সফলতা ও দীর্ঘায়ু কামনা করছি। কেএসআরএম (কবির গ্রুপের কোম্পানি কবির স্টিল অ্যান্ড রিরোলিং মিলস) এর যেন আরো বিস্তৃতি হয়। সবাইকে ধন্যবাদ।”
কবির গ্রুপের ডিএমডি শাহরিয়ার জাহান রাহাত বলেন, “পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও নৌপরিবহন মন্ত্রীকে বিশেষ ধন্যবাদ জানাই। যখন আন্তর্জাতিক যুদ্ধজাহাজ হুমকি দিচ্ছিল, তারা জাহাজ ডুবিয়ে দেবে। জলদস্যুদের সারেন্ডার করতে বলছিল৷ সাথে সাথে আমি উনাদের জানাই।
“২০ মিনিটের মধ্যে উনাদের কাছ থেকে সাড়া পাই। নাবিকরা যে ফিরেছেন, এটা বাংলাদেশের জয়। নাবিকদের মধ্যে দুই জনের এই সময়ে সন্তান হয়েছে। কিন্তু তারা দুবাই থেকে আগেভাগে ফেরেননি। জাহাজের সাথেই তারা আজ দেশে এসেছেন।”
সিটি মেয়র এম রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, “শুকরিয়া জানাই, কারণ ফিরে এসেছে আমাদের দেশের সন্তানরা। দুই মাস সবাই উৎকণ্ঠায় ছিল। সরকারের সাহসিকতা, দূরদর্শী সিদ্ধান্ত ও দক্ষতার কারণে নাবিকরা সুস্থভাবে ফিরে এসেছেন। একঝাঁক পায়রা যেন জীবনে ফিরেছে। আমি উচ্ছ্বসিত, আনন্দিত ও খুশি। সবার সুস্থতা কামনা করি।”
চট্টগ্রাম বন্দরের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এম সোহায়েল বলেন, “জলদস্যুরা অত্যন্ত দুর্ধষ হয়। সোমালিয়ার জলদস্যুরা খুব ভয়ানক। আমাদের নাবিকরা অকুতোভয়। সরকারের পক্ষ থেকে দৃঢ় পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় পররাষ্ট্র ও নৌ মন্ত্রণালয়, নৌ বাহিনী ও অন্য সংস্থাগুলো একসাথে কাজ করেছে। এর ফলে এই সফলতা।”