হালদায় ফের ‘পরিযায়ী’ ইলিশ

গবেষকরা বলছেন, কর্ণফুলী নদীতে চলে আসা ইলিশ সাধারণ উজানের দিকে বেশ কিছু দূর যায়। আর যাতায়াতের মধ্যেই এ মাছ হালদায় মদুনাঘাট অংশে আসে।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 2 Oct 2022, 07:29 AM
Updated : 2 Oct 2022, 07:29 AM

প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজননকেন্দ্র চট্টগ্রামের হালদা নদীতে একটি ইলিশ মাছ মিলেছে; এ নিয়ে পরপর দুবছর দেশের জাতীয় মাছ পাওয়া গেল হালদায়।

হালদায় অবৈধ জাল জব্দে অভিযান পরিচালনাকারী হাটাহাজারী উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা নাজমুল হুদা ইলিশ ধরা পড়ার এই তথ্য জানান।

হালদা যেখানে কর্ণফুলী নদীর সঙ্গে মিশেছে, সেই মোহনার কাছাকাছি চান্দগাঁও অংশে অবৈধভাবে পাতা একটি জালে ২৬৫ গ্রাম ওজনের ছোট ইলিশটি পাওয়া যায় শনিবার বিকেলে। পরে জীবন্ত মাছটি নদীর ওই অংশেই ছেড়ে দেওয়া হয়।

কর্মকর্তা নাজমুল হুদা রনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “নদীর গড়দুয়ারা নয়াহাট থেকে মোহনা পর্যন্ত অংশে অভিযান চালানো হয়। চান্দগাঁও সংলগ্ন অংশে অবৈধভাবে পাতা জালে ১১ দশমিক ৫ ইঞ্চি দৈর্ঘ্যের ইলিশ মাছটি পাওয়া যায়।“

এর আগেও গত বছর অক্টোবরে এক অভিযানে একটি ছোট আকারের ইলিশ পেয়েছিল নৌপুলিশ। তবে প্রাকৃতিক মৎস্যের এই প্রজননকেন্দ্র ইলিশ পাওয়ার আরও পুরনো ঘটনাও আছে।

গবেষকরা বলছেন, কর্ণফুলী নদীতে চলে আসা ইলিশ সাধারণ উজানের দিকে বেশ কিছু দূর যায়। আর যাতায়াতের মধ্যেই এ মাছ হালদায় মদুনাঘাট অংশে চলে আসে।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ও হালদা রিসার্চ কেন্দ্রের সমন্বয়ক ড. মনজুরুল কিবরিয়া বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, “কেবল গতকাল বা গতবছর নয়, এর আগেও হালদা নদীতে ইলিশ মাছ পাওয়া গেছে। জেলেরা মাঝেমধ্যেই দুয়েকটা পান এখনও।

“৮ থেকে ১০ বছর আগে হালদায় ৭০০-৮০০ গ্রাম ওজনের একটি ইলিশ জেলেদের জালে ধরা পড়েছিল। সেটি আমি নিজে দেখেছি। নদীর মদুনাঘাট অংশে প্রজনন মৌসুমে কিছু কিছু ইলিশ পাওয়া যায়।“

তিনি বলেন, হালদার ইলিশ মূলত পরিযায়ী (মাইগ্রেটেড)। যেহেতু এটি জোয়ার-ভাটার নদী (টাইডাল রিভার) এবং কর্ণফুলীর সাথে যুক্ত, তাই কর্ণফুলী থেকে এ ইলিশ হালদায় আসে। এক সময় কর্ণফুলীতে প্রচুর ইলিশ পাওয়া যেত।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভোগের অধ্যাপক কিবরিয়া জানান কর্ণফুলী একসময় ইলিশের ‘মাইগ্রেশন রুট’ ছিল। দূষণ প্রকট আকার ধারণ করায় এখন আর কর্ণফুলীতে ইলিশ সেভাবে মেলে না।

“ইলিশের শরীরে অসমো রেগুলেশন (পানি সাম্যতা) নামে একটি ফিজিওলজিক্যাল (শরীর বৃত্তীয়) সিস্টেম থাকে। সেটা সমুদ্রের লবণাক্ত পানিতে যখন থাকে– তখন এক রকম, আবার নদীতে গেলে অন্য রকম হয়।

“এ কারণেই ইলিশ লোনা পানি ও মিঠা পানি দুই অবস্থাতেই থাকতে পারে। জাটকা অবস্থায় ইলিশ সাধারণত নদীতে থাকে। একটু বড় হলে সাগরে যায়। আবার ডিম ছাড়ার সময়ে নদীতে ফেরে।”

কর্ণফুলীর পানির মান ও বাস্তুতন্ত্র ভালো হলে সেখানে আবারও আগের মত ইলিশ ফেরানো সম্ভব বলে মনে করেন এই গবেষক।