চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শেষ করে সরকারি চাকরির আশায় পরীক্ষা দিতে দিতে শেষে রেলওয়েতে নিয়োগ পেয়েছিলেন আজিজুল হক রিন্টু।
এই বছরের শুরুতেই রেলওয়েতে পয়েন্টম্যান হিসেবে নিয়োগ পান রিন্টু। আর এর সঙ্গে চেষ্টা করছিলেন আরও ভালো কোনো চাকরির জন্য। তা আর হল না, এই চাকরিতেই নিভে গেল তার জীবন প্রদীপ।
সোমবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে ইপিজেড থানাধীন এয়ারপোর্ট রোডের মেঘনা অয়েলের অদূরে তেলবাহী ট্রেনের সঙ্গে হিউম্যান হলারের সংঘর্ষে রেলওয়ের এক কর্মীসহ যেই তিনজন নিহত হন, তাদের মধ্যে এই রিন্টুই রেলওয়ের সেই কর্মী।
চট্টগ্রামের রাউজান উপজেলার কদলপুর ইউনিয়নের আসাদ আলী বলির বাড়ির আবুল হোসেনের ছেলে রিন্টু। চার ভাইবোনের মধ্যে তিনি ছিলেন তৃতীয়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছে, ডিপোতে তেলবাহী ট্রেন প্রবেশের আগে গাড়ি থামানোর সিগনাল দিয়েছিলেন রিন্টু। এসময় বিমানবন্দরের দিক থেকে আসা যাত্রীবাহী একটি হিউম্যান হলার তাকে ধাক্কা দিয়ে উল্টে যায়।
রিন্টুর ছোট ভাই মাহফুজুল হক জিসান বলেন, গত ১৮ জানুয়ারি রেলওয়েতে যোগ দিয়েছিলেন রিন্টু। এটি ১৭তম গ্রেডের চাকরি। আরও ভালো চাকরির জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিলেন তার ভাই।
সমাজসেবা অধিদপ্তরে কর্মকর্তা পদে লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছিলেন জানিয়ে জিসান বলেন, “গত বৃহস্পতিবার (২ মার্চ) সেখানে মৌখিক পরীক্ষা দিয়েছিলেন। ওই পরীক্ষা ভালো হয়েছিল বলে জানিয়েছিল।”
জিসান আরও বলেন, “এ চাকরিতে রিন্টুর শিফটিং ডিউটি ছিল। শহরে একটা বাসা ভাড়া নিয়েছিলেন। আর ছুটিতেই চলে যেতেন গ্রামের বাড়ি। রোববার ছুটিতে বাড়ি গিয়ে একদিন ছিলেন। গতকাল (সোমবার) বেলা ২টা থেকে তার ডিউটি ছিল। সেজন্য সাড়ে ১১টার দিকে বাড়ি থেকে শহরে আসে।
“রিন্টুর এক সহকর্মীর বন্ধু আমাদের প্রতিবেশী। রাতে সেই সহকর্মী আমাদের প্রতিবেশী যুবককে ফোন দিয়ে রিন্টুর মৃত্যুর সংবাদ জানায়। পরে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গিয়ে ভাইয়ের লাশ পাই।”
তিন ভাই ও এক বোনের মধ্যে রিন্টু তৃতীয় ছিলেন জানিয়ে রিন্টুর বড় ভাই আমিনুল হক মিন্টু বলেন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ থেকে অনার্স-মাস্টার্স সম্পন্ন করে সরকারি চাকরির জন্য পরীক্ষা দিচ্ছিলেন। বেশিরভাগই লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন। মৌখিক পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার পরও চাকরি হয়নি কয়েকটি জায়গায়।
“তবে সর্বশেষ রেলওয়েতে নিয়োগ পেয়েছিলেন। গত জানুয়ারিতে নতুন চাকরিতে যোগ দিয়ে ৪৮ দিনের মাথায় তার মৃত্যু হয়।”
এদিকে জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের অনুমতি নিয়ে বিনা ময়নাতদন্তে মঙ্গলবার রিন্টুর লাশ নিয়ে যায় তার পরিবার। বিকালে জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।
চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি মোহাম্মদ আলী প্রতিবেশী হিসেবে রিন্টুকে চেনেন বলে জানালেন।
রিন্টু শান্ত ও নম্র স্বভাবের ছিলেন জানিয়ে মোহম্মদ আলী বলেন, তার ইচ্ছা ছিল সরকারি চাকরি করবে। বেশ কয়েকটি সরকারি চাকরির লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলেও ভাইভাতে আটকে যায়।
“তবে হাল ছাড়ার পাত্র ছিলেন না রিন্টু। বিগত কয়েক বছর ধরেই বিভিন্ন সরকারি চাকরিতে পরীক্ষা দিচ্ছিলেন ভালো কিছু করার জন্য। তবে এক চালকের ভুলের কারণে জীবন গেছে তার।“
আরও পড়ুন