জিম্মিদশার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত জাহাজটির ওপর নজর রাখে অপারেশন আটলান্টা।
Published : 15 Apr 2024, 06:37 PM
এমভি আবদুল্লাহ জলদস্যুদের কাছ থেকে মুক্ত হওয়ার একদিন বাদে বাংলাদেশি জাহাজটির তিনটি ছবি প্রকাশ করেছে হর্ন অব আফ্রিকা অঞ্চলে জলদস্যুতা মোকাবিলায় নিয়োজিত ইউরোপীয় ইউনিয়ন নেভাল ফোর্সের অপারেশন আটলান্টা।
সোমবার দুপুরে সংস্থাটির এক্স পোস্টে প্রকাশিত ছবিগুলোতে আবদুল্লাহর পাশে অপারেশন আটলান্টার দুটি যুদ্ধ জাহাজকে দেখা যাচ্ছে। যুদ্ধ জাহাজ দুটি মুক্ত এমভি আবদুল্লাহকে পাহারা দিয়ে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে বলে ক্যাপশনে বলা হয়।
জিম্মিদশার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত জাহাজটির ওপর অপারেশন আটলান্টা নজর রাখছিল বলে সংস্থাটি এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে।
গত ১২ মার্চ দুপুরে ভারত মহাসাগরে সোমালি জলদস্যুদের কবলে পড়ে বাংলাদেশের কবির গ্রুপের এসআর শিপিংয়ের মালিকানাধীন জাহাজ এমভি আবদুল্লাহ। জিম্মি হয় জাহাজে থাকা বাংলাদেশি ২৩ নাবিক।
অস্ত্রের মুখে জাহাজের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পর সোমালি উপকূলে নিয়ে যায় জলদস্যুরা। সেখানে পৌঁছানোর পর বারবার জাহাজের অবস্থান পরিবর্তন করা হয়। ছিনতাইয়ের ৯ দিনের মাথায় জলদস্যুদের সাথে তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে যোগাযোগ হয় জাহাজের মালিকপক্ষের।
মুক্তিপণ নিয়ে দেন দরবারের পর বাংলাদেশ সময় শনিবার রাত ৩টার দিকে জাহাজটি ও নাবিকরা মুক্ত হয়।
অপারেশন আটলান্টার বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ১২ মার্চ এমভি আবদুল্লাহ জলদস্যুদের কবলে পড়ার পর অপারেশন আটলান্টাই প্রথম সাড়া দিয়েছিল। সেদিনই সংস্থাটির একটি জাহাজ আবদুল্লাহকে অনুসরণ শুরু করে।
নাবিকদের জিম্মিদশার পুরো সময়ই অপারেশন আটলান্টা নিবিড়ভাবে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে বলেও বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।
গত ১৫ বছর ধরে ভারত মহাসাগরের পশ্চিম অংশে জলদস্যুতা ঠেকাতে নিজেদের ভূমিকার কথা তুলে ধরে অপারেশন আটলান্টা সমুদ্রে নিরাপত্তার প্রশ্নে সময়োপযোগী ও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের কথা পুনর্ব্যক্ত করে।
❗Operation ATALANTA confirms the release of the 23 crew members of the Merchant Vessel ABDULLAH and the ship.
???? Warships of EUNAVFOR ATALANTA escort the MV ABDULLAH after the release.
More information: https://t.co/ugjjZBHUoA pic.twitter.com/nqhOTbSPKs
— EUNAVFOR ATALANTA (@EUNAVFOR) April 15, 2024
এমভি আবদুল্লাহ মোজাম্বিক থেকে ৫৫ হাজার টন কয়লা নিয়ে দুবাই যাওয়ার পথে সোমালি উপকূল থেকে ৬০০ নটিক্যাল মাইল দূরে জলদস্যুদের কবলে পড়েছিল ১২ মার্চ।
সেদিনই জলদস্যুতার বার্তা পেয়ে এমভি আবদুল্লাহকে অনুসরণ শুরু করে অপারেশন আটলান্টার যুদ্ধ জাহাজ। কিন্তু জলদস্যুরা অস্ত্রের মুখে নাবিকদের আটকে রাখায় কোনো অভিযান চালাতে পারেনি সংস্থাটি।
এরপর এমভি আবদুল্লাহর অবস্থান কয়েকবার বদলে সোমালিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় পান্টল্যান্ড রাজ্যের জিফল উপকূল থেকে দেড় নটিক্যাল মাইল দূরে নিয়ে রাখে জলদস্যুরা।
পুরো সময়ই অপারেশন আটলান্টার যুদ্ধ জাহাজ এমভি আবদুল্লাহকে অনুসরণ করছিল। এর মধ্যে জিফল উপকূলে অপারেশন আটলান্টার যুদ্ধ জাহাজে থাকা উড়োযানও এমভি আবদুল্লাহকে ঘিরে টহল দিচ্ছে, এমন ছবিও প্রকাশ পায়।
এমভি আবদুল্লাহর নাবিকদের উদ্ধারে আন্তর্জাতিক এই সংস্থা আগ্রহী হলেও জাহাজের মালিকপক্ষ, নাবিকদের পরিবার এবং বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে অভিযানে অসম্মতির কথা জানিয়ে দেয়া হয়।
পান্টল্যান্ড পুলিশের বরাতে ২২ মার্চ বিবিসি সোমালি জানায়, সাগরের দিক থেকে এমভি আবদুল্লাহর জলদস্যুদের আন্তর্জাতিক বাহিনী ঘিরে রেখেছে এবং ভূমির অংশে পান্টল্যান্ড পুলিশ একটি অভিযান শুরু করেছে, যাতে ভূমি থেকে জলদস্যুরা কোনো সহায়তা না পায়।
আন্তর্জাতিক সমুদ্র নিরাপত্তা সংস্থা কোনো অভিযান শুরু করলে তাতে সহযোগিতার জন্য প্রস্তুত থাকার কথাও জানায় পান্টল্যান্ড পুলিশ।
৩৩ দিনের উৎকণ্ঠা পেরিয়ে মুক্ত এমভি আবদুল্লাহ
এর মধ্যে জলদস্যুদের প্রতিনিধির সঙ্গে জাহাজের মালিকপক্ষের যোগাযোগ হয়। তারা জাহাজ ও নাবিকদের মুক্ত করতে আলোচনা চালিয়ে যেতে থাকেন।
এ পুরো সময় অপারেশন আটলান্টা এমভি আবদুল্লাহ ঘিরে তাদের অবস্থান বজায় রাখে, তাতে চাপে পড়ে জলদস্যুরা।
এমভি আবদুল্লাহর মালিক পক্ষের সঙ্গে সমঝোতা শেষে একটি উড়োযানে করে তিনটি ব্যাগ পানিতে ফেলা হয়। সোমালি জলদস্যুরা স্পিডবোটে চড়ে ব্যাগগুলো পানি থেকে তুলে নেয়।
সবশেষ শনিবার রাত তিনটার দিকে জলদস্যুরা এমভি আবদুল্লাহ থেকে নেমে যায়। এরপর গন্তব্য দুবাইয়ের উদ্দেশ্যে রওনা হয় জাহাজটি।
রোববার দুপুরে এমভি আবদুল্লাহর চিফ অফিসার আতিকুল্লাহ খানের দেওয়া ফেইসবুক পোস্টের একটি ছবিতে মুক্ত নাবিকদের পাশে অপারেশন আটলান্টার কমান্ডোদের দেখা যায়।