চট্টগ্রাম নগরীতে জলাবদ্ধতার সঙ্গে ৪ স্থানে পাহাড় ধস

নিম্নচাপ ও মৌসুমী বায়ুর প্রভাবে ভারি বৃষ্টি অব্যাহত থাকায় বন্দর নগরীতে পাহাড় ধস ঘটতে শুরু করেছে।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 29 July 2021, 04:23 PM
Updated : 29 July 2021, 04:23 PM

নগরীতে কমপক্ষে চারটি স্থানে পাহাড় ধসের খবর পাওয়া গেছে। এসব ঘটনায় কেউ হতাহত হয়নি। ঝুঁকিপূর্ণ বিভিন্ন পাহাড় থেকে ৫০০ মানুষকে সরিয়ে নিয়েছে প্রশাসন। 

টানা চার দিনের বৃষ্টিতে নগরীর বিভিন্ন স্থানে জলাবদ্ধতারও সৃষ্টি হয়েছে।

বৃহস্পতিবার রাত ৯টা পর্যন্ত আগের ২৪ ঘণ্টায় চট্টগ্রামে ১৪০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে। এর আগে বুধবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত এই পরিমাণ ছিল প্রায় ৯৫ মিলিমিটার। সে হিসেবে শেষ ৪৮ ঘণ্টায় প্রায় ২৩৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে।

এর মধ্যেই গরিবুল্লাহ শাহ মাজার সংলগ্ন আমান উল্লাহ হাউজিং, আমিন জুট মিল সংলগ্ন আমিন কলোনি পাহাড়, আমবাগান এতিমখানা পাহাড় ও বায়েজিদ লিংক রোড এলাকায় পাহাড় ধসের ঘটনা ঘটে।

চট্টগ্রামের বালি মাটির আধিক্যের পাহাড়গুলো দিনে ১০০ মিলিমিটারের বেশি বৃষ্টি হলে ধসের আশঙ্কা দেখা দেয়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে আগে থেকে কেটে ফেলায় ক্ষতিগ্রস্ত পাহাড় টানা বৃষ্টিতে ধসে পড়ে।

চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মমিনুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, দুয়েকটি স্থানে পাহাড় ধসলেও কেউ আহত হয়নি। পাহাড় থেকে ঝুঁকিপূর্ণভাবে থাকাদের সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে। বৃষ্টি থামলে অবৈধ বসতি সরাতে উচ্ছেদ অভিযান চালানো হবে।

চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের নির্বাহী হাকিম মো. উমর ফারুক জানান, বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ১৩০টি পরিবারের প্রায় ৫০০ জনকে সরিয়ে চারটি আশ্রয় কেন্দ্রে নেওয়া হয়েছে। ৩০টি ঘর উচ্ছেদ করা হয়েছে। আশ্রয় কেন্দ্রে থাকা সবাইকে দুই বেলা খাবার দেওয়া হয়েছে।

আমান উল্লাহ হাউজিংয়ে পাহাড় ধসের খবর পেয়ে সেখানে গিয়েছিল ফায়ার সার্ভিস।

ফায়ার সার্ভিসের উপ-সহকারী পরিচালক নিউটন দাশ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “পাহাড় ধসলেও কোনো ঘরের উপর পড়েনি। কেউ ক্ষতিগ্রস্ত হননি।”

এদিকে টানা বৃষ্টিতে বুধবার দুপুর থেকেই নগরীর কয়েকটি স্থানে পানি ওঠে। রাতেও বেশ কিছু এলাকার মূল সড়কে পানি ছিল।

বৃহস্পতিবার দিনভর টানা বৃষ্টিতে নগরীর মুরাদপুর, দুই নম্বর গেট, কালামিয়া বাজার, চকবাজার, বহদ্দারহাট, আগ্রাবাদ ব্যাংক কলোনি, আগ্রাবাদ মা ও শিশু হাসপাতাল, খাতুনগঞ্জ, হালিশহর, বাকলিয়া, কাপাসগোলা, ডিসি রোডের বিভিন্ন স্থানে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়।  

নগরীতে বহদ্দারহাট, খাতুনগঞ্জ, আগ্রাবাদ মা ও শিশু হাসপাতাল এলাকায় দিনভর হাঁটু পানি ছিল।

জলাবদ্ধতার বিষয়ে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (সিসিসি) পরিচ্ছন্নতা বিষয়ক স্ট্যান্ডিং কমিটির সভাপতি কাউন্সিলর মোবারক আলী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, মেগাপ্রকল্পের কাজের জন্য সিডিএ যে বাঁধগুলো দিয়েছে সেগুলো খুব খারাপ অবস্থায় আছে।  

“চাক্তাই খালের ফুলতলা অংশে খুব সরু একটা জায়গা রাখা হয়েছে পানি চলাচলের জন্য। পুরো বাঁধ না দেওয়ায় চাক্তাই খালের পানি খুব ধীরে নামছে, তাই স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি জলাবদ্ধতা হচ্ছে। আজ আমরা একযোগে প্রকল্প বাস্তবায়নকারীদের সাথে কাজ করে সেখানে জমে থাকা পলিথিন সরিয়েছি।”

নগরীর হালিশহর ও আগ্রাবাদ এলাকার জলাবদ্ধতার বিষয়ে মোবারক আলী বলেন, ফইল্যাতলি এলাকায় খালের একটি সেতুর কাজ শেষ হওয়ার পরও মাটি রয়ে গেছে। মহেশখালেও সব মাটি সরানো হয়নি। ফলে স্বাভাবিক গতি প্রবাহ না থাকায় পানি নামতে সমস্যা হচ্ছে।

“যেহেতু মেগা প্রকল্প চলছে তাই আমরা চাইলেও সব খালে কাজ করতে পারছি না।”

জলাবদ্ধতা নিরসনে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) মাধ্যমে বাস্তবায়নাধীন সাড়ে ছয় হাজার কোটি টাকার মেগা প্রকল্পে খালের রক্ষণাবেক্ষণের জন্য সিসিসিকে ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়ার কথা থাকলেও তা এখনও পর্যন্ত দেওয়া হয়নি বলে জানান কাউন্সিলর মোবারক আলী।

পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিসের পূর্বাভাস কর্মকর্তা বিশ্বজিৎ চৌধুরী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, আরও অন্তত দু-তিন দিন বৃষ্টি হবে। শুক্রবারও ভারি বৃষ্টির সম্ভাবনা আছে। পাহাড় ধ্বসের সতর্কতাও আছে।

সমুদ্রবন্দরকে ৩ নম্বর স্থানীয় সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।