সিআরবিতে হাসপাতাল: গাছে শহীদদের নামফলক লাগিয়ে প্রতিবাদ

সিআরবির শহীদ মিনারে উল্লেখ থাকা ১০ জন শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধার নামে প্রস্তাবিত হাসপাতাল নির্মাণের প্রকল্প এলাকার কয়েকটি গাছে ফলক স্থাপন করা হয়েছে।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 18 July 2021, 05:07 PM
Updated : 18 July 2021, 05:07 PM

‘সিআরবি ধ্বংস করে হাসপাতাল চাই না, প্রাণ-প্রকৃতি রক্ষায় এগিয়ে আসুন’ স্লোগান নিয়ে শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের স্মৃতি স্মরণে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

চট্টগ্রামে পূর্ব রেলের সদর দপ্তর (সিআরবি) এলাকায় শতবর্ষী রেইন ট্রিতে শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুর রব এর নামফলক স্থাপনের মধ্য দিয়ে কর্মসূচির শুরু হয়।

পরিবেশবাদী সংগঠন পিপলস ভয়েস এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।

কর্মসূচি থেকে শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের স্মৃতি উপর হাসপাতাল করতে দেওয়া হবে না বলে বক্তব্য দেন অংশগ্রহণকারীরা।

প্রতিবাদ কর্মসূচি পালনকালে জানানো হয়, সিআরবিতে সরকারি-বেসরকারি (পিপিপি) প্রকল্পের আওতায় হাসপাতাল নির্মাণের জন্য যে ছয় একর জমি বরাদ্দ দেওয়ার জন্য নির্ধারণ করা হয়েছে, সেখানে কয়েকজন শহীদের কবর এবং একটি শহীদ মিনার আছে।

আলোচনায় যুদ্ধকালীন কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযুদ্ধের গবেষক ডা. মাহফুজুর রহমান বলেন, “শহীদ আবদুর রবকে প্রধানমন্ত্রীর চেনার কথা। তিনি যখন চাকসুর জিএস ছিলেন তখন প্রধানমন্ত্রী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী।

“একজন নেতা এখানে এসে বলেছেন কেউ নাকি ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের চেষ্টা করছেন। প্রকৃতপক্ষে পানি ঘোলা করছে রেল কর্তৃপক্ষ।

“শহীদ আবদুর রব কলোনি ভেঙে হাসপাতাল হচ্ছে। অর্বাচীন আমলারা ভুল বুঝিয়ে প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি অন্যদিকে নিতে চাচ্ছেন। এই শহীদ আবদুর রব কলোনিতে আরও শহীদদের কবরসহ নানা স্মৃতির উপর হাসপাতাল করতে দেওয়া যাবে না।”

তিনি বলেন, “আশাকরি মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সরকার যথাযথ ব্যবস্থা নিয়ে এটা এখান থেকে সরিয়ে নিবেন। বড়লোকের ইউনাইটেড হাসপাতাল চট্টগ্রামের সাধারণ মানুষের কোনো কাজে আসবে না। চট্টগ্রামের মেয়র আর সিডিএ চেয়ারম্যান বলছেন, তারা এখানে হাসপাতাল চান না। তারপরও কত বড় সিন্ডিকেট যে এখানে হাসপাতাল করতে চায়।

“দুদককে বলব রেলের কারা এ কাজ করছে তাদের খোঁজ নিন। রেল কারো বাবার সম্পত্তি না। এই সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে আন্দোলন আরো জোরদার করতে হবে। যতদিন প্রকল্প বাতিলের ঘোষণা না হবে ততদিন আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার জন্য গণমঞ্চ তৈরি করুন। বীর মুক্তিযোদ্ধারা এই আন্দোলনের সাথে আছে।”

বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ইদ্রিস আলী বলেন, “হাসপাতালের নামে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বানানোর চেষ্টা যারা করছেন, তারা ভুল করছেন। আজকের কোনো কোনো রাজনীতিবিদ এমপি মন্ত্রীদের দেশপ্রেমে ঘাটতি আছে বলেই আমলারা তাদের ঘিরে ফেলেছে। রাজনীতিবিদদের উচিত মানুষের কথা শোনা।

কবি সাংবাদিক কামরুল হাসান বাদল বলেন, “রেলের জমি সংরক্ষণ করার কথা রেল কর্তৃপক্ষের। উল্টো তারাই সে জমি দিয়ে দিচ্ছে আর আমাদের আন্দোলন করতে হচ্ছে। কেউ বলছে শিরীষ তলায় হবে না গোয়ালপাড়ায় হবে। তাদের চিহ্নিত করে রাখুন। এরাই প্রধানমন্ত্রীকে ভুল বুঝিয়ে এই প্রকল্প নিয়েছেন। তারা গণশত্রু।

“ইউনাইটেডের টাকা খেয়ে তারা এ কাজ করছে।শেষ কথা এখানে আমরা কোনো বেসরকারি হাসপাতাল হতে দেব না।”

আওয়ামী লীগ নেতা হাসান মনসুর বলেন, “এখানে শহীদের কবর। পূর্বসূরীদের স্মৃতির জায়গা। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বাংলাদেশকে পরিচালিত করছেন।

“উনার সুশাসনকে কলঙ্কিত করার জন্য প্রশাসনে ঘাপটি মেরে থাকা কতিপয় ষড়যন্ত্রকারী আমলা এই রেলের সরকারি জায়গায় বেসরকারি হাসপাতাল প্রকল্পের দু:সাহস দেখিয়েছে। রেলের জমিতে, শহীদের স্মৃতির জমিতে কোনো বেসরকারি হাসপাতাল হতে দিব না।”

আরও বক্তব্য দেন পিপল’স ভয়েসের সভাপতি শরীফ চৌহান, সাংবাদিক মাঈনুদ্দিন দুলাল ও খেলাঘর চট্টগ্রাম মহানগরীর সম্পাদকমন্ডলীর সদস্য মোরশেদুল আলম চৌধুরী।

এসময় উপস্থিত ছিলেন খেলাঘর চট্টগ্রাম মহানগরীর সাধারণ সম্পাদক প্রকৌশলী রূপক চৌধুরী, সাংবাদিক ও শিল্পী আলোকময় তলাপত্র, সাংবাদিক ঋত্তিক নয়ন, কারিতাস এর শ্যামল মজুমদার, শিক্ষিকা মাগ্রেট মনিকা জিন্স ও শেখ বিবি কাউসার, যুব সংগঠক রুবেল দাশ প্রিন্স, যুব মৈত্রীর খোকন মিয়া প্রমুখ।