চট্টগ্রাম আ. লীগকে সংগঠিত করতে কেন্দ্রের ‘পাঁচ নির্দেশনা’

চট্টগ্রাম নগর আওয়ামী লীগের সম্মেলনকে সামনে রেখে তৃণমূলকে সংগঠিত করতে পাঁচটি নির্দেশনা দিয়েছেন দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 21 June 2021, 11:06 AM
Updated : 21 June 2021, 11:06 AM

দুই দিন ধরে চলা সাংগঠনিক মতবিনিময় সভা শেষে সোমবার এসব সিদ্ধান্তের কথা গণমাধ্যমকে জানান দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ।

গত সিটি নির্বাচনে দল মনোনীত প্রার্থীর বিরুদ্ধে যারা বিদ্রোহী হিসেবে ভোটে লড়েছেন তাদের কমিটিতে ঠাঁই না দেওয়ার সিদ্ধান্তের কথাও জানান তিনি।

বেলা সোয়া দুইটার দিকে সভার প্রথম পর্ব শেষে হানিফ বলেন, “গত দুই দিন ধরে টানা মহানগরের সাথে বৈঠক করেছি। বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের কথা শুনেছি। লক্ষ্য সম্মেলনগুলো করা এবং ‍তৃণমূল পর্যায় থেকে সংগঠনকে সাজানো।

“এজন্য কয়েকটি বিষয়ে আলোচনা ও সিদ্ধান্ত হয়েছে। অনেক জায়গায় দলের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে দলীয় মনোনীত প্রার্থীর বিরুদ্ধে, বিশেষ করে দলের প্রতীক নৌকা যারা পেয়েছেন তাদের বিরুদ্ধে নির্বাচন করেছে। সিদ্ধান্তে এসেছি, যারা দলের মনোনীত প্রার্থীর বিরুদ্ধে সরাসরি নির্বাচন করেছে তাদের কোনো পদে রাখা যাবে না। কমিটিগুলো যখন হবে এটাকে মাথায় রাখবেন।”

এছাড়া সদস্য সংগ্রহ, ওয়ার্ড ও থানা সম্মেলন আয়োজন, দলে নতুন সদস্য করার ক্ষেত্রে বিবেচ্য এবং কমিটি গঠনে নবীন-প্রবীণের সমন্বয় ঘটানোর সিদ্ধান্ত জানান কেন্দ্রীয় নেতা হানিফ।

তিনি বলেন, “জুনের শেষ পর্যায়ে ও জুলাইয়ে করোনার প্রকোপ মাথাই রেখেই স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে সদস্য সংগ্রহ কর্মসূচি করবেন। অগাস্ট শোকের মাস। মাসব্যাপী শোক পালন করা হবে।  

“সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর এই দুই মাসের মধ্যে আমাদের প্রত্যেকটি ওয়ার্ডের ইউনিট পর্যায়ে সম্মেলন করে ওয়ার্ড সম্মেলন শেষ করতে চাই। নভেম্বর মাসে থানা পর্যায়ের সম্মেলন শেষ করতে চাই। ওয়ার্ড ও থানা সম্মেলন শেষ করার পরে সকল প্রস্তুতি শেষ হলে পরে দলের সভানেত্রী মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছ থেকে একটা শিডিউল নিয়ে আমরা চট্টগ্রাম মহানগরে সম্মেলন করব।”

দলে নতুন কারও যোগদানের প্রসঙ্গে হানিফ বলেন, “দলে যোগদানের বিষয়ে অনেকের কথা এসেছে। এদেশে লক্ষ লক্ষ নেতাকর্মী আওয়ামী লীগের আছে। সে হিসেবে দলে যোগদান করানোর খুব বেশি প্রয়োজন নেই।

“তারপরও যদি বঙ্গবন্ধুর আদর্শের প্রতি আস্থাশীল হয়ে, শেখ হাসিনার উন্নয়নের ধারায় সামিল হতে কোনো ব্যক্তি বা নেতা যদি আসতে চায় সেক্ষেত্রে যার বিরুদ্ধে কোনো অনৈতিকতার অভিযোগ নেই, যার সঙ্গে যুদ্ধাপরাধীদের কোনো অভিযোগ বা সম্পৃক্ততা নেই, শিক্ষিত, সজ্জন, সমাজে এরকম গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিদের কেন্দ্রের অনুমোদন নিয়ে যোগদান করানো যেতে পারে। একজনের ইচ্ছে হল কাউকে এনে যোগদান করালাম সেটার কোনো সুযোগ নেই।”

সংগঠনে নবীন-প্রবীণের সমন্বয় ঘটানোর নির্দেশনা দিয়ে হানিফ বলেন, “সম্মেলন করার সময় আরেকটা বিষয় মাথায় রাখতে হবে। আমাদের যারা বয়জ্যেষ্ঠ হয়ে গেছেন, শারীরিক সক্ষমতা কম, চলাচলের অসুবিধা হয়, এরকম শ্রদ্ধেয় নেতানেত্রী, তাদেরকে হয়ত আমরা আরেকটু উপরের দিকে নিয়ে যেতে পারি।

“এবং আমাদের যারা ছাত্রলীগ, যুবলীগ, শ্রমিক লীগ সহযোগী সংগঠন করে, যাদের বয়স ইতিমধ্যে ৪০-৫০ পার হয়ে গেছে, তাদেরকে দলের মধ্যে নতুন নেতৃত্বে আনতে পারি। দরকার নবীন ও প্রবীণের সমন্বয়ে সংগঠনকে আরও শক্তিশালী করা।”

‘চট্টগ্রামে সংগঠন অত্যন্ত শক্তিশালী’

দু’দিনের সাংগঠনিক কর্মসূচির প্রথম দিনে চট্টগ্রামের সাংগঠনিক দুর্বলতা নিয়ে দুঃখ প্রকাশ করলেও এদিন নিজের অবস্থান বদলান হানিফ।

তিনি বলেন, “চট্টগ্রামে আওয়ামী লীগ সবসময় শক্তিশালী। চট্টগ্রামই সারাদেশের আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের আন্দোলনের প্রাণ হিসেবে বিবেচিত হয়। চট্টগ্রাম আওয়ামী লীগের একটি শক্তিশালী দূর্গ হিসেবে মনে করি। এখানে সংগঠন অত্যন্ত শক্তিশালী এবং নেতাকর্মীরা অত্যন্ত নিবেদিত প্রাণ।

“এই শক্তিশালী সংগঠনকে আরও শক্তিশালী করতে আরও আস্থার জায়গায় নিয়ে যেতে হবে। ভবিষ্যতেও যেকোনো ষড়যন্ত্র মোকাবেলার যদি প্রয়োজন হয় অতীতের মতই চট্টগ্রাম থেকেই সবচেয়ে বেশি নেতাকর্মীরা আস্থার প্রতিফলন ঘটাবেন। চট্টগ্রাম থেকেই সেটার নেতৃত্ব দেবে।”

আগে উদ্যোগ নিয়ে নগর আওয়ামী লীগের অধীন থানা ও ওয়ার্ড কমিটি গঠন করতে না পারার বিষয়টি উল্লেখ করে এবারের উদ্যোগ সফল হবে কিনা প্রশ্ন করেন এক সংবাদকর্মী।

জবাবে হানিফ বলেন, “সম্মেলন করা একটা ধারাবাহিক সাংগঠনিক প্রক্রিয়া। এর আগে যখন সম্মেলনের একবার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল তখন নির্বাচন সামনে থাকার কারণে সেটাকে বন্ধ করা হয়েছিল। এখন যে সিদ্ধান্ত শুধু চট্টগ্রাম মহানগর নয় সারাদেশের সাংগঠনিক তৎপরতা শুরু হয়েছে তৃণমূল পর্যায় থেকে সংগঠনকে সাজাতে।

“যদি কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগে বাধাগ্রস্ত না হয় তাহলে সম্মেলনের ধারাটা অব্যাহত থাকবে। একটা বিষয় মাথায় রাখতে হবে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ করোনা মহামারী। আশা করছি ভ্যাকসিন প্রক্রিয়ার কারণে প্রকোপ কমে আসবে। যদি করোনা মহামারী বৃদ্ধি পায় বাধ্য হব সাংগঠনিক কর্মকান্ড সীমিত আকারে নিয়ে আসার জন্য “

সভায় সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন, অর্থ সম্পাদক ওয়াসিকা আয়েশা খান, শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, নগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীন, যুগ্ম সম্পাদক ও সিটি মেয়র এম রেজাউল করিম চৌধুরীসহ কার্য নির্বাহী কমিটির সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

বিকালে নগর কমিটির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্যদের সঙ্গে কেন্দ্রীয় নেতাদের বৈঠকের কথা রয়েছে।