চট্টগ্রামের ভোট: ইসির বিরুদ্ধে মামলার হুমকি শাহাদাতের

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ইভিএমের ‘প্রিন্টেড’ ফলাফল দিতে না পারলে নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে মামলা করার ঘোষণা দিয়েছেন মেয়র পদের পরাজিত প্রার্থী বিএনপি নেতা ডা. শাহাদাত হোসেন।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 31 Jan 2021, 08:07 AM
Updated : 31 Jan 2021, 12:02 PM

রোববার নগরীর নাসিমন ভবনে বিএনপি কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে তিনি এ ঘোষণা দেন। ডা. শাহাদাতের অভিযোগ, নির্বাচনে ‘সাড়ে ৭ শতাংশ’ ভোট পড়লেও নির্বাচন কমিশন ‘কারচুপি’ করে সাড়ে ২২ শতাংশ দেখিয়েছে।

“ইভিএমে ভোটের ফলাফল দেওয়ার কথা প্রিন্টেড কাগজে। কিন্তু তা না দিয়ে হাতে লেখা কাগজে দিয়েছে। নির্বাচন কমিশন ২৭ তারিখের সেই প্রিন্টেড কাগজ দিতে না পারলে তাদের বিরুদ্ধে মামলা করব।"

ইভিএমের প্রিন্টেড ফলাফল এবং নির্বাচন কমিশনের হাতে লেখা ফলাফলের কপি সংবাদ সম্মেলনে দেখিয়ে শাহাদাত বলেন, “পাঁচলাইশ ৩ নম্বর ওয়ার্ডের চারটি কেন্দ্রে শুধু এ ধরনের প্রিন্টেড কাগজ দেওয়া হয়েছে। অন্যগুলোতে দেওয়া হয়েছে নির্বাচন কমিশনের হাতে লেখা ফলাফল।”

বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষ আর গুলিতে একজনের প্রাণহানির মধ্য দিয়ে গত ২৭ জানুয়ারি চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ভোটগ্রহণ হয়। তাতে বিএনপির প্রার্থী শাহাদাত হোসেনকে প্রায় তিন লাখ ভোটের ব্যবধানে হারিয়ে মেয়র নির্বাচিত হন আওয়ামী লীগের এম রেজাউল করিম চৌধুরী।

নির্বাচন কমিশনের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, এবারের নির্বাচনে ভোটার সংখ্যা ছিল ১৯ লাখ ৩৮ হাজার ৭০৬ জন। ভোট দিয়েছেন মোট ৪ লাখ ৩৬ হাজার ৫৪৩। ভোটের হার ২২ দশমিক ৫২ শতাংশ। ১ হাজার ৫৩টি ভোট বাতিল হয়েছে।

শাহাদাতের দাবি, তিনি সকাল ৯টা থেকে বেলা ২টা পর্যন্ত ১৫টি কেন্দ্রের ২৬০টি বুথে গিয়ে তিনি যা দেখেছেন, তাতে ৫ থেকে ৬ শতাংশের বেশি ভোট পড়েনি বলে তার বিশ্বাস।

“দুই ঘণ্টার মধ্যে এত ভোট কোথা থেকে এলো? এতে বোঝা যাচ্ছে প্রিজাইডং অফিসারের ক্ষমতা নৌকার পক্ষে (কারো আঙুলের ছাপ না মিললে ভোটারের জন্য ইভিএমে ব্যালট ইস্যু করার সীমিত ক্ষমতা রয়েছে প্রিজাইডং অফিসারের) কাজে লাগিয়েছে। এ কথা আমরা বারবার বলেছি, প্রিজাইডিং অফিসারের কাছে যেন ভোট রাখা না হয়।”

পরাজিত এই প্রার্থী বলেন, প্রতি ঘণ্টায় কত ভোট পড়েছে, সেই হার তিনি জানতে চেয়েছিলেন। কিন্তু রিটার্নিং কর্মকর্তা তাকে বলেছেন, সেটা ‘দেওয়া যাবে না’।

বোয়ালখালীর উপ-নির্বাচনে প্রতি ঘণ্টার পার্সেন্টেজ দেওয়া হয়েছিল বলে দাবি করেন শাহাদাত। তিনি অভিযোগ করেন, প্রতিটি ভোট কেন্দ্রে ফলাফল ঘোষণার নিয়ম থাকলেও এবারের নির্বাচনে তা করা হয়নি।

এ নির্বাচনে নিজের ‘জয়’ হয়েছে দাবি করে সে ‘জয় কেড়ে নেওয়া’ হয়েছে বলে সংবাদ সম্মেলনে মন্তব্য করেন এ বিএনপি নেতা।

লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, ২৭ জানুয়ারির চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের ষষ্ঠ নির্বাচন চট্টগ্রামের ইতিহাসে ‘ভোট লুটের মহোৎসব’ ও ‘সহিংসতার কলঙ্কজনক’ অধ্যায় হিসেবে ‘স্মরণীয় হয়ে থাকবে’।

শাহাদাত বলেন, “এ নির্বাচনে নৌকা প্রতীকে প্রাপ্ত ভোট তিন লাখ ৬৯ হাজার ২৪৮, আর ধানের শীষের ভোট ৫২ হাজার ৪৮৯টি। রাত পৌনে ২টায় রিটার্নিং কর্মকর্তা ঘোষিত ফলাফলে দেখা গেল সাড়ে ২২ শতাংশ ভোট পড়েছে। যেটা বাস্তবিক অর্থে ছিল সাড়ে সাত শতাংশ।”

ইভিএম পদ্ধতিতে ভোট গ্রহণের পরও ফল পেতে ১০ ঘণ্টার বেশি সময় কেন লাগল, সেই প্রশ্নও তোলেন ধানের শীষের প্রর্থী।

তিনি অভিযোগ করেন, “বহিরাগতরা অনেক প্রিজাইডিং অফিসারের সহায়তায় ভোট কেন্দ্রের গোপন কক্ষ নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নিজেরা ইভিএম মেশিনের বোতাম টিপে নৌকার ভোট নিশ্চিত করেছে। পাশাপাশি অনেক কেন্দ্রে নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত পুলিশ সদস্যরা ভোটারদের ফিঙ্গার প্রিন্ট নেয়ার পর ব্যালেট প্যানেলে নৌকার প্রতীকে নিজেরাই চাপ দিয়ে দেয়।”

বিভিন্ন ভোট কেন্দ্রে প্রিজাইডিং অফিসাররা ধানের শীষের এজেন্টদের কার্ডে ‘স্বাক্ষর না করে অসহোযগিতা করেছেন’ বলেও অভিযোগ করেন মেয়র পেদের এই পরাজিত প্রার্থী।

বিভিন্ন ভোট কেন্দ্রে বিএনপি প্রার্থীদের ভোট ‘কম দেখানো হয়েছে’ অভিযোগ করে শাহাদাত বলেন, “১৭ নম্বর পশ্চিম বাকলিয়া ওয়ার্ডে এক বছর আগে অনুষ্ঠিত উপ-নির্বাচনে বিএনপি প্রার্থী আরিফুল হক ডিউক পাঁচ হাজারের বেশি ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছিলেন। কিন্তু এবারের নির্বাচনে তার ভোট দেখানো হয়েছে ৩৩৪টি।

“একইভাবে দক্ণি বাকলিয়া ওয়ার্ডের ইয়াছিন চৌধুরী আশু, মোহরা ওয়ার্ডের মোহাম্মদ আজম, পাথরঘাটা ওয়ার্ডের ইসমাইল বালিসহ অনেক জনপ্রিয় কাউন্সিলর ছিলেন। তাদের প্রাপ্ত ভোট দেখানো হয়েছে ২০০ থেকে ৩০০।”

পূর্ব ষোলশহর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী হাসান লিটনকে নির্বাচনের আগে ‘গৃহবন্দি’ করে রাখা হয়েছিল অভিযোগ করে শাহাদাত বলেন, “ভোটের দিন তার (লিটন) বাসায় হামলা করে ঘর থেকে বের হতে দেওয়া হয়নি। অথচ নির্বাচনের দুই দিন পরে চান্দগাঁও থানায় লিটনসহ ৩৫ জনকে আসামি করে মামলা দেওয়া হয়েছে।”

নির্বাচনের ফলাফল বাতিল করে পুঃনর্নির্বাচন দেওয়ার দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, “কিছু দিন আগে ৪০ জন বিশিষ্ট নাগরিক নির্বাচন ব্যবস্থাকে ধ্বংস করার জন্য কমিশনের প্রতি অভিযোগের আঙ্গুল তুলেছেন এবং বিচার দাবি করে রাষ্ট্রপতির কাছে স্মারকলিপি দিয়েছেন, তার যৌক্তিকতা নির্বাচন কমিশন নিজেরাই প্রমাণ দিয়েছে।”