জুয়ার নেশায় দেনা, এরপর প্রতারণা, অতঃপর গ্রেপ্তার

চট্টগ্রামে প্রতারণার অভিযোগে এক ব্যক্তি গ্রেপ্তার হয়েছেন, যিনি জুয়ার আসক্ত হয়ে এই পথে নেমেছিলেন বলে পুলিশ জানিয়েছে।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 1 Dec 2020, 03:25 PM
Updated : 1 Dec 2020, 03:25 PM

গ্রেপ্তার এই ব্যক্তির নাম শাহাদাত হোসেন ভূঁইয়া (২৬)। বিভিন্ন জাহাজে চাকরি দেওয়ার নাম করে তিনি বহু মানুষের কাছে অর্থ নিয়েছেন।

তবে প্রতারণার মাধ্যমে নেওয়া এই অর্থের পুরোটাই শাহাদাত জুয়ায় উড়িয়েছেন বলে পুলিশ জানিয়েছেন। শুধু তাই নয়, দেনা শোধের জন্য নিজের বাবার কাছ থেকে টাকা নিয়েও জুয়ায় ঢেলেছেন তিনি।

প্রতারণার অভিযোগে চট্টগ্রামের কোতোয়ালী থানা পুলিশ সোমবার গ্রেপ্তার করে মঙ্গলবার শাহাদাতকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠিয়েছে।

কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে শাহাদাতের বাড়ি হলেও পরিবারের সঙ্গে থাকেন নগরীর হালিশহর কে-ব্লকের কর্ণফুলী আবাসিক এলাকায়।

তিনি ২০১২ সালে এইচএসসি পাশ করে চট্টগ্রাম কলেজে পদার্থ বিদ্যা স্নাতকে ভর্তি হয়েছিলেন। সেই পড়ালেখা শেষ না করে ভর্তি হন নগরীর সল্টগোলো এলাকার ন্যাশনাল মেরিটাইম ইনস্টিটিউট নামে একটি প্রতিষ্ঠানে মেরিন ডিপ্লোমা কোর্সে।

ডিপ্লোমা শেষ করে ২০১৫ সাল থেকে শাহাদাত জাহাজে চাকরি শুরু করেন। ইঞ্জিন ওয়াচ রেটিং পদে। মাসিক বেতন ৫৫ হাজার টাকায়।

পুলিশ জানিয়েছে, চাকরি করার সময় তিনি আইপিএলসহ বিভিন্ন ধরনের ক্রিকেট ম্যাচের বাজি ধরা শুরু করেন। এতে নিজের বেতনের টাকা খরচ হওয়ার পাশাপাশি ধারদেনা করা শুরু হয়। পাওনাদারের চাপে শুরু করেন জাহাজে চাকরি দেওয়ার নামে প্রতারণা।

শাহাদাতের বিরুদ্ধে অভিযোগ নিয়ে এসেছে অন্তত ১৯ জন প্রতারিত যুবক। যাদের কাছ থেকে ১৯ লাখের বেশি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার প্রমাণ পেয়েছে পুলিশ। এসব যুবকদের কাছ থেকে ৬০ হাজার থেকে এক লাখ ৭০ হাজার টাকা নিয়েছেন তিনি। 

প্রতারিত যুবকরা জানান, ওশান প্যাসিফিক শিপিং নামে একটি বিদেশি প্রতিষ্ঠানের জাহাজে চাকরি দেওয়ার কথা বলে তাদের কাছ থেকে টাকা নেন শাহাদাত।

বিদেশি জাহাজে চাকরির জন্য যে সাইন আউটের (ছাড়পত্র) প্রয়োজন হয়, তার জন্য শাহাদাত ব্যবহার করেছেন চট্টগ্রামের নিউ মার্কেট এলাকার কম্পাস শিপিং সার্ভিসেস লিমিটেড নামে একটি প্রতিষ্ঠানের নাম।

কোতোয়ালি থানার ওসি মোহাম্মদ মহসিন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “শাহাদাত জাহাজে চাকরি করতেন। যার কারণে জাহাজের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে তার ধারণা আছে। তাই জাহাজে চাকরি দেওয়ার কথা বলেই মূলত বেকার যুবকদের কাছ থেকে হাতিয়ে নিতেন টাকা।

“টাকা নেওয়ার সময় শাহাদাত যে প্রতিষ্ঠানের নাম ব্যবহার করতেন, তিনি কখনও সে প্রতিষ্ঠানেই চাকরি করেননি। কিন্তু যারা টাকা দিয়েছে তারা কোন ধরনের খোঁজ খবর না নিয়েই শাহাদাতকে টাকা দিয়ে প্রতারিত হয়েছেন।”

সোমবার কম্পাস শিপিং সার্ভিসেস লিমিটেড নামে প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তারা শাহাদাতকে পুলিশের হাতে দেন বলে জানান ওসি মহসিন।

কম্পাস শিপিং সার্ভিসেস লিমিটেডের ব্যবস্থাপক (হিসাব) ‍মিজানুর রহমান পুলিশকে জানান, সোমবার কয়েকজন প্রতারিত যুবক শাহাদাতের সঙ্গে যোগাযোগ করতে না পেরে তাদের প্রতিষ্ঠানে গিয়ে হাজির হয়। তখন তারা কৌশলে শাহাদাতকে তাদের প্রতিষ্ঠানে ডেকে নেন। এরপর প্রতারিতদের সঙ্গে কথা বলে শাহাদাতকে পুলিশে দেন।

প্রতারণার অভিযোগে শাহাদাতের বিরুদ্ধে প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে কোতোয়ালি থানায় মামলা করা হয়েছে।

প্রতারণার অভিযোগে গত বছরের শুরুর দিকেও একবার হালিশহর থানায় গ্রেপ্তার হয়েছিলেন বলে পুলিশের কাছে স্বীকার করেন শাহাদাত।

ওসি মহসিন বলেন, “কম্পাস শিপিংয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তারা শাহাদাতের বাবা অহিদুর রহমানের সাথে যোগাযোগ করেছিলেন। তিনি ছেলের দায়িত্ব নিতে পারবেন না বলে তাদের জানিয়ে দেন।”

সাধারণ বীমা করপোরেশনের অবসরপ্রাপ্ত এক কর্মকর্তার ছেলে শাহাদাত। তিনি এর আগে ছেলের দেনা শোধের জন্য নিজের সঞ্চয়ের টাকার পাশাপাশি বিক্রি করেছেন জমিও। তিনি মোট ৩০ লাখ টাকা পরিশোধ করেছেন বলে জানিয়েছেন।

শাহাদাত পুলিশকে বলেছেন, দেনার টাকা বেড়ে যাওয়ায় তার বাবা কয়েকবার তাকে টাকা দিয়েছিলেন। কিন্তু তিনি দেনা না শুধরে বারবার টাকা দিয়ে জুয়া খেলেছেন।