চবির ভবন নির্মাণ: জি কে শামীমের বিরুদ্ধে জালিয়াতির মামলা দুদকের

জালিয়াতির মাধ্যমে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) ষষ্ঠ একাডেমিক ভবনের নির্মাণ কাজের ঠিকাদারি নেওয়ার অভিযোগে জি কে শামীমসহ দুজনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 22 Nov 2020, 04:15 PM
Updated : 22 Nov 2020, 04:15 PM

রোববার দুদক চট্টগ্রাম জেলা কার্যালয়-২ এ মামলাটি করেন দুদকের সহকারী পরিচালক ফখরুল ইসলাম।

এই মামলার দুই আসামি হলেন- জি কে বি এন্ড কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক গোলাম কিবরিয়া (জি কে) শামীম এবং দি বিল্ডার্স ইঞ্জিনিয়ার্স এসোসিয়েটসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফজলুল করিম চৌধুরী।

৭৫ কোটি টাকার ওই প্রকল্পের কাজ নিতে দি বিল্ডার্স ইঞ্জিনিয়ার্স- জি কে বি এল (জেভি) ‘প্রতারণা ও জালিয়াতির’ আশ্রয় নিয়েছিল বলে দুদকের প্রাথমিক অনুসন্ধানে উঠে এসেছে।

মামলার বাদি দুদকের সহকারী পরিচালক ফখরুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ষষ্ঠ একাডেমিক ভবন নির্মাণের কাজ পেতে দরপত্রের সাথে যে কাগজপত্র দিয়েছিল সেখানে জালিয়াতি করা হয়েছে। কোম্পানি সংক্রান্ত তথ্যও পাল্টানো হয়েছে।

সর্বনিম্ন দরদাতা হয়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) ষষ্ঠ একাডেমিক ভবনের (দ্বিতীয় কলা ও মানববিদ্যা অনুষদ) নির্মাণকাজ পায় দি বিল্ডার্স ইঞ্জিনিয়ার্স- জি কে বি এল (জেভি)। 

চার বছর পেরিয়ে ওই প্রকল্পের কাজ ৬০ শতাংশ শেষ করেছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। ইতিমধ্যে তাদের ৩৭ কোটি টাকা পরিশোধ করা হয়েছে বলেও গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে প্রকাশিত হয়েছে।

দুদকের করা মামলায় বলা হয়- প্রতারণা ও জালিয়াতির মাধ্যমে কোম্পানির প্রকৃত নিবন্ধিত নামের সাথে একক মালিকানাধীন ফার্মের নাম যুক্ত করে রেজিস্ট্রেশন দেখিয়ে এবং নিবন্ধিত শেয়ারের চেয়ে বেশি সংখ্যার শেয়ার দেখিয়ে দরপত্র জমা দেয়া হয়। 

কাজ পেতে ১০ বছরের অভিজ্ঞতা, বিগত পাঁচ বছরের বহুতল ভবন নির্মাণ কাজ শেষের সনদ এবং অতীতের টার্নওভারের যে শর্ত দেয়া হয়েছিল সেগুলোর ক্ষেত্রেও বানানো কাগজপত্র জমা দেয়া হয় বলে দুদকের মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে।  

যৌথ মূলধনী কোম্পানি ও ফার্মসমূহের পরিদপ্তর ১ এ সংশ্লিষ্ট কাগজ যাচাইয়ের জন্য পাঠায় দুদক। সেখান থেকে এসব জালিয়াতির তথ্য নিশ্চিত হয় তারা।

মামলার বাদি দুদক কর্মকর্তা ফখরুল ইসলাম বলেন, “তাদের আগের নিজ নিজ প্রতিষ্ঠান দুটি ছিল প্রপাইটরশিপ ফার্ম। কিন্তু পরে তারা লিমিটেড কোম্পানি হিসেবে দরপত্রের জন্য যখন কাগজ জমা দেয় তখন ওই ফার্মগুলোকে কোম্পানি হিসেবে দেখায়।

“এজন্য জমা দেয়া কিছু কাগজপত্রে কিছু তথ্যগত পরিবর্তনও করে।”

নথিপত্র অনুসন্ধানে দুদক জানতে পারে, জি কে বিল্ডার্স (প্রপাইটরশিপ ফার্ম) এবং দ্যা বিল্ডার্স ইঞ্জিনিয়ার্রিং নামের অন্য দুটি একক মালিকানার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ছিল।

যে দুটির পরিবর্তে দরপত্রে জি কে বি এন্ড কোম্পানি লিমিটেড এবং দি বিল্ডার্স ইঞ্জিনিয়ার্স এসোসিয়েটস লি. নাম দুটি ব্যবহার করা হয়েছে।

‘অবৈধভাবে লাভবান হওয়ার জন্য’ টেন্ডারে উল্লেখিত নির্মাণ কাজের ‘শর্ত পূরণের মত যোগ্যতা না থাকা স্বত্তেও’ কাজটি এই প্রতিষ্ঠান নেয় বলে দুদকের অভিযোগ।

চবির ষষ্ঠ একাডেমিক ভবনের দরপত্র আহ্বান করা হয় ২০১৬ সালের ২৮ অগাস্ট।

জি কে বি এন্ড কোম্পানি (প্রা.) লিমিটেড লিড ফার্ম হিসেবে এবং দি বিল্ডার্স ইঞ্জিনিয়ার্স এসোসিয়েটস লি. পার্টনার ইনচার্জ হিসেবে দরপত্রে অংশ নেয়।

ওই কাজের জন্য প্রথম নিম্ন দরদাতা হয় দি বিল্ডার্স ইঞ্জিনিয়ার্স- জি কে বি এল (জেভি)। ৭৫ কোটি টাকার এই কাজের চুক্তি হয় ২০১৬ সালের ১৪ নভেম্বর। ২০১৮ সালের নভেম্বরে নির্মাণ কাজ শেষের সময় নির্ধারিত ছিল।

ওই সময় চবি ছাত্রলীগের একাংশ এই কাজের দরপত্র সংগ্রহে অন্য ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো বাধাও দিয়েছিল। এ নিয়ে ছাত্রলীগের দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ ও ভাংচুরের ঘটনাও ঘটেছিল।

মাত্র দুটি প্রতিষ্ঠান তখন দরপত্র জমা দিয়েছিল।

সেই সময় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের নথিপত্র যাচাই করতে পরামর্শ দেয়ায় দরপত্র মূল্যায়ন কমিটি থেকে বাদ দেয়া হয় কমিটির সদস্য সীতাকুণ্ড উপজেলার স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগের প্রকৌশলী মো. নুরুল ইসলাম খানকে।

দুদকের মামলার অভিযোগে বলা হয়- চবি’র দরপত্র মূল্যায়ন কমিটির সদস্যদের অযোগ্যতা ও অদক্ষতার সুযোগে অপরাধজনক বিশ্বাস ভঙ্গ করে অতি সুক্ষ তথ্যগত জালিয়াতির মাধ্যমে ক্রয় প্রক্রিয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রভাবিত করে ওই কার্যাদেশ হাসিল করা হয়।

ওই ঠিকাদারি কাজের বিরোধের জেরে ২০১৬ সালের ২০ নভেম্বর ছাত্রলীগ নেতা দিয়াজ ইরফান চৌধুরী খুন হন বলেও অভিযোগ তার অনুসারী ছাত্রলীগ নেতাকর্মী এবং দিয়াজের পরিবারের।