চট্টগ্রামে কোভিড-১৯ চিকিৎসা নিয়ে চক্রান্ত, অভিযোগ আওয়ামী লীগ নেতার

প্রধানমন্ত্রীর নানা উদ্যোগের পরেও একটি বিশেষ মহল চট্টগ্রামের মানুষকে পরিকল্পিতভাবে চিকিৎসা সেবা বঞ্চিত করে সরকারে বিরুদ্ধে ক্ষেপিয়ে তোলার চক্রান্তে লিপ্ত বলে অভিযোগ করেছেন নগর আওয়ামী লীগ সহ-সভাপতি খোরশেদ আলম সুজন।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 31 May 2020, 05:11 PM
Updated : 31 May 2020, 05:11 PM

রোববার নগরীর আগ্রাবাদ এলাকায় বেসরকারি মা ও শিশু হাসপাতালের সামনে হাসপাতালটিকে ‘করোনা বিশেষায়িত হাসপাতাল’ হিসেবে ঘোষণার দাবিতে ‘নাগরিক উদ্যোগ’ আয়োজিত মানববন্ধনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ অভিযাগ করেন।

নাগরিক উদ্যোগের প্রধান উপদেষ্টা সুজন বলেন, “স্পষ্টতই দেখতে পাচ্ছি, জনগণকে পরিকল্পিতভাবে চিকিৎসাসেবা বঞ্চিত করে সরকারের বিরুদ্ধে ক্ষেপিয়ে তুলতে একটি মহল বিশেষভাবে চক্রান্তে লিপ্ত রয়েছে।

“যাদের অদৃশ্য অঙ্গুলি হেলনিতে সরকারের শুভ উদ্যোগগুলো বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছে, তারা সকলেই হত্যাকারী। এদের বিরুদ্ধে চট্টগ্রামের জনগণ মামলাসহ প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা গ্রহণ করতে প্রস্তুত।”

ক্ষমতাসীন দলের এই নেতার দাবি করেন, প্রধানমন্ত্রীর নানা উদ্যোগের পরেও চট্টগ্রামে কোভিড-১৯ রোগীদের চিকিৎসায় নানারকম অসঙ্গতি, অব্যবস্থাপনা লেগেই রয়েছে। ফলে চট্টগ্রামের মানুষ বিশ্বাস-অবিশ্বাসের দোলাচলে রয়েছে।

করোনাভাইরাস প্রতিরোধ কমিটি নগরীর ১২টি বেসরকারি হাসপাতাল নির্ধারণ করে কোভিড-১৯ রোগীদের প্রয়োজনে হাসপাতালগুলোর আইসিইউ ব্যবহারের জন্য। ধাপে ধাপে হাসপাতালগুলোর আইসিইউ ব্যবহারের কথা থাকলেও তা আর হয়নি।

এরপর বেসরকারি ক্লিনিক মালিকরা কয়েক বছর ধরে বন্ধ থাকা হলি ক্রিসেন্ট হাসপাতালটি নির্ধারণ করে সেখানে শয্যার ব্যবস্থা করে। তারপর সেটি পরিচালনা করতে সরকারের কাছে দাবি জানায়।

এরমধ্যে ১৫ মে চট্টগ্রামের জেনারেল হাসপাতালে থাকা কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের জন্য বরাদ্দ ১০টি আইসিইউ শয্যা পূর্ণ হয়ে যায়। সেসময় আর নতুন করে কাউকে আইসিইউতে ঠাঁই দেয়া সম্ভব হচ্ছিল না।

১৬ মে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে পৃথক কোভিড-১৯ ইউনিট ও হলি ক্রিসেন্ট হাসপাতালকে জেনারেল হাসপাতালের ইউনিট-২ হিসেবে চালুর অনুমতি দেয়।

২১ মে হাসপাতাল দুটির কোভিড-১৯ ইউনিট আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করেন সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন। সেদিন রাত থেকেই চমেকের ইউনিটটিতে রোগী ভর্তি ও সেবা শুরু হয়। কিন্তু নানা সমস্যায় হলি ক্রিসেন্টে এখনও চালুই হয়নি।

২৬ মে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের এক আদেশে বেসরকারি ইম্পেরিয়াল হাসপাতাল ও বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল হাসপাতালকে বিশেষায়িত কোভিড-১৯ হাসপাতাল ঘোষণা করা হয়। ওই দুটি হাসপাতালেও রোববার পর্যন্ত সেবা শুরু করতে পারেনি।

এরমধ্যে দেশের সব বেসরকারি হাসাপাতাল ও ক্লিনিকে কোভিড-১৯ আক্রান্তদের সেবা দেয়ার আদেশ দেয় সরকার।

এরপর নগরীর বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে অন্যরোগীরাও প্রয়োজনীয় সেবা পাচ্ছে না বলে অভিযোগ আসতে শুরু করে।

সবশেষ শনিবার চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশ এক বিজ্ঞপ্তিতে সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে রোগী ভর্তি না করালে বা চিকিৎসায় অবহেলা হলে তাদের জানাতে বলে।

এ জন্য হটলাইন খোলা হয়েছে এবং উপযুক্ত তথ্য প্রমাণ পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও জানিয়েছে পুলিশ।

রোববারের কর্মসূচিতে খোরশেদ আলম সুজন বলেন, “এমন দুরবস্থায় কিছু হাসপাতাল করোনা রোগীদের চিকিৎসায় এগিয়ে আসলেও তাদেরকে সেভাবে প্রস্তুত করা হচ্ছে না। অন্যদিকে প্রতিদিনই জনগণের অমূল্য প্রাণ বিনা চিকিৎসায় নিভে যাচ্ছে।

“অথচ আমরা একটু মানবিক হয়ে এগিয়ে আসলে হয়ত অমূল্য জীবনগুলো বাঁচাতে পারতাম। চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতালের নতুন ভবনটি ৪০০ মানুষের সেবার জন্য সম্পূর্ণ প্রস্তুত। রয়েছে আইসিইউ সুবিধা। এখন শুধু প্রয়োজন হাসপাতালটিকে করোনা বিশেষায়িত হাসপাতাল হিসেবে ঘোষণা দেওয়া।”

তিনি বলেন, “মা ও শিশু হাসপাতাল কর্তৃপক্ষও চায় এই দুঃসময়ে জনগণের পাশে থাকতে। অথচ কেন জানিনা এ হাসপাতালটিকে করোনা চিকিৎসায় বিশেষায়িত হাসপাতালের ঘোষণা না দিয়ে অযথা সময়ক্ষেপণ করা হচ্ছে।

“আর যারা হাসপাতাল সুবিধা দেওয়ার কথা বলে বারবার জনগণকে প্রতারিত করছে তাদের পিছনেই আমাদের সকল সময় এবং প্রস্তুতি বিনষ্ট করা হচ্ছে, কিন্তু কেন? মা ও শিশু হাসপাতালকে করোনা বিশেষায়িত হাসপাতাল ঘোষণা না দেওয়াটা সেই বিশেষ মহলের চক্রান্তেরই অংশ।”

নাগরিক উদ্যোগের সদস্য সচিব মো. হোসনের সভাপতিত্বে এই মানবন্ধনে উপস্থিত ছিলেন আব্দুর রহমান মিয়া, মোরশেদ আলম, মা ও শিশু হাসপাতালের আজীবন সদস্য ফোরামের সদস্য সচিব মাহমুদুর রহমান শাওন, আজীবন সদস্য জাহিদ তানছির, এম. এ জলিল প্রমুখ।