‘আমার কাছে চা-নাস্তা খাইছে, আমার সামনেই মরি গেল’

প্রচণ্ড বিস্ফোরণে ভাঙ্গা দেয়ালের ছিটকে আসা টুকরো টুকরো অংশের আঘাতে ছিটকে পড়েন, তারপর ধসে পড়া নিজের টং দোকানের নিচে চাপা পড়েন দোকানি মঞ্জুর হোসেন (৪৫)।

উত্তম সেন গুপ্ত চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 17 Nov 2019, 07:50 AM
Updated : 17 Nov 2019, 07:50 AM

স্থানীয়দের সহায়তায় প্রাণে বেঁচে গেলেও চোখের সামনে রঙ মিস্ত্রি নূরুল ইসলামের মৃত্যু নাড়িয়ে দিয়ে গেছে তাকে। তার দোকানে চা-নাস্তা খাওয়ার এক মিনিটের মধ্যেই একজন এভাবে লাশ হয়ে যাবে, সেই আতঙ্ক ঘণ্টাখানেক পরও তার চোখেমুখে লেগে ছিল।

বড়ুয়া বিল্ডিংয়ে বিস্ফোরণের ঘটনায় যে সাতজনের মৃত্যু হয়েছে তাদের মধ্যে দুইজনের পরিচয় মিলেছে। এরা হলেন পটিয়ার মেহের আটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা অ্যানি বড়ুয়া ও পাশের একটি ভবনে রঙয়ের কাজ করা নূরুল ইসলাম।

বড়ুয়া বিল্ডিংয়ের ঠিক বিপরীত দিকেই একটি ছোট গলির মুখে মঞ্জুর হোসেনের টং দোকান। ২০-২২ বছর ধরে স্ত্রীকে নিয়ে ওই দোকান চালান তিনি। এরআগে তার বাবা দোকানটি চালাতেন। ব্রিক ফিল্ড রোড বাই লেইনেই থাকেন তিন সন্তানের জনক মঞ্জুর।

প্রতিদিনের মত রোববারও সকাল সাতটায় দোকান খুলেছিলেন মঞ্জুর। এর দুই ঘণ্টা পরই ঘটে যায় মর্মান্তিক সেই ঘটনা।

মঞ্জুর হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফার ডটকমকে বলেন, “সকালে দোকান করতেছি। পাশের একটা বিল্ডিংয়ে রঙের কাজ চলতেছে। ওইখান থেকে একজন রং মিস্ত্রি (নূরুল ইসলাম) আসছে, চা-নাস্তা খাইছে।

“তারপর পান-সিগারেট নিতেছিল। হঠাৎ করি কি হইলে বুঝলাম না। একটা বিরাট শব্দ। দেয়ালের কতগুলো ইট উড়ে আসি লোকটার গায়ে-মাথায় পড়ল। সে রাস্তায় পড়ে গেল। এরপর কিছু বুঝার আগে আমার দোকানও ভাঙি পড়ল।”

টং দোকানের টিন ও কাঠামোর নিচে চাপা পড়েন মঞ্জুর। স্থানীয়রা ছুটে এসে তাকে সেখান থেকে টেনে বের করে। হাত-পায়ে আঘাত পেয়েছেন তিনি।

উদ্ধারের ঘণ্টাখানেক পর যখন তিনি কথা বলছিলেন তখনও তার চোখেমুখে ভয়, পরনের শার্টে লেগে আছে রক্তের দাগ। কথা বলতে বলতে কেঁদে ফেলেন মঞ্জুর হোসেন।

“একটা মানুষ আমার সামনে মরি গেল! সে আমার কাছ থেকে চা-নাস্তাই খাইছে এক মিনিট আগে। আমি মৃত্যুর মুখ থেকে বাঁচি আসছি। কেমনে বাঁচছি জানি না। এতদিনের দোকান ভেঙেচুরে শেষ। এলাকার লোকজন না থাকলে আমি বাঁচতাম না।”

বিস্ফোরণ হওয়া বড়ুয়া বিল্ডিংয়ে মালিক অমল ও টিটু বড়ুয়া নামের দুই ভাই। পৈত্রিক সূত্রে তারা ভবনটি পেয়েছেন। পাঁচতলা ভবনের পঞ্চম তলায় তারা থাকেন।